সময়টা ছিল ২০১৬। বঙ্গে তখন বিধানসভা ভোটের ভরা মরশুম। সেই হাওয়ায় এক অভূতপূর্ব দৃশ্যের সাক্ষী ছিল বঙ্গ রাজনীতি। স্থান ছিল পার্ক সাকার্স ময়দান। সেই প্রথম এক ফ্রেমে ধরা দিলেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী ও রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ও সিপিআইএম নেতা বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। যার নেপথ্যে কারিগর ছিলেন সীতারাম ইয়েচুরি। যিনি সিপিএমের অন্দরে বরাবর বঙ্গবন্ধু বলেই পরিচিত ছিলেন।
রাজনৈতিক মহল দাবি করে, সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক পদে বসার পর পার্টিগত জায়গা থেকে বরাবর শুদ্ধিকরণের পক্ষেই সওয়াল করতেন সীতারাম। তাই তিনি মনে করতেন জোট রাজনীতিতে কংগ্রেস কখনও অচ্যুত নয়। তাই, বঙ্গের ভোটে তৃণমূলকে রুখতে তাঁরই দওয়াই ছিল কংগ্রেসের হাত শক্তভাবে ধরার। পরবর্তী সময়ে এই একই ফর্মূলা তিনি বিশ্বাস করেছেন জাতীয় রাজনীতির ক্ষেত্রে।
সম্প্রতি দেশে হয়ে গিয়েছে লোকসভার ভোট। সেই ভোটের আগে বিজেপিকে রুখতে বিরোধীদের একজোট হওয়ার বার্তা দিয়েছিলেন তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রাথমিক ভাবে যে দুটি রাজনৈতিক দল মমতার এই আহ্বানে সাড়া দিয়েছিলেন, তাদের মধ্যে একটি রাজনৈতিক দলের নাম ছিল সিপিআইএম। রাজনৈতিক পন্ডিতরা দাবি করেন, সাধারণ সম্পাদক হিসাবে পার্টিকে একটি বিষয় বোঝাতে সক্ষম হয়েছিলেন ইয়েচুরা। আর তা-হল বঙ্গ রাজনীতিতে তৃণমূল যতই শক্র হোক, জাতীয় রাজনীতিতে বিজেপিকে রুখতে হলে মুখ মমতা, তাতেই আস্থা রাখতে হবে।
১২ অগাস্ট ১৯৫২ সালে তৎকালীন মাদ্রাজে জন্ম সীতারাম ইয়েচুরির। পৈতৃক বাড়ি ছিল অবিভক্ত অন্ধ্রপ্রদেশের হায়দরাবাদে। দিল্লির সেন্ট স্টিফেন্স কলেজ থেকে অর্থনীতিতে স্নাতক। জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ছাত্র-রাজনীতিতে যোগ। ১৯৭৮ সালে ডিওয়াএফআই-এর সর্বভারতীয় যুগ্ম সম্পাদক। ১৯৮৪ সালে বাম ছাত্র সংগঠনের সর্বভারতীয় সভাপতি। ১৯৮৫ সালে সিপিআইএম কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য। ১৯৯২ সাল থেকে পলিটব্যুরোর সদস্য। ২০১৫ সাল থেকে দীর্ঘ নয় বছর সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক। ২০০৫ থেকে ২০১৭ পর্যন্ত বাংলা থেকে রাজ্যসভার সদস্য। সিপিএমের সাধারণ সম্পাদকের পদে থেকে তিনি ছিলেন প্রথম রাজ্যসভার সদস্য।
রাজনৈতিক মহলের দাবি, অ-বিজেপি দলগুলির কাছে সীতারামের গ্রহণযোগ্যতা ছিল অনেক বেশি। আর সেই কারণে, তাঁর মৃত্যুতে শোক জানিয়ে প্রথম টুইট করলেন তৃণমূল নেত্রী ও বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এমনকী অনেক অ-বিজেপি নেতা মনে করছেন, ইয়েচুরির মৃত্যু তাঁদের কাছে বিরাট ক্ষতি। ক্ষতি সিপিএমের অন্দরেও। শনিবার দিল্লির এইমস হাসপাতালে ইয়েচুরির দেহদান করা হবে। তার আগে নিয়ে আসা হবে একে গোপালন ভবনে। সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম জানিয়েছেন, বাংলার সব সিপিএম পার্টি অফিসে দলীয় পতাকা অর্ধনমিত থাকবে।
ব্যবধান মাত্র একমাস চারদিন। ফের নিঃশ্ব হল সিপিআইএম। গত আট অগাস্ট প্রয়াত হয়েছিলেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। ১২ সেপ্টেম্বর ফের সিপিএম শূন্য হয়ে গেল। প্রয়াত হলেন হরকিষাণ সুরজিৎ ঘরানা শেষ নেতা সীতারাম ইয়েচুরি।