বলুন তো, এই তিন নামে মিল কোথায় ? খুব সোজা উত্তর হতে পারে, তিনটেই বলিউডের সিনেমা। যার প্রেক্ষাপট কয়লা ও খনি। বিভিন্ন সময় কখনও অমিতাভ বচ্চন, কখনও শাহরুখ খান আবার কখনও অক্ষয় কুমারের হাত ধরে সিলভার স্ক্রিনে ফুটে উঠেছে প্রান্তিক এলাকার সেই মানুষগুলির জীবন বৃত্তান্ত। আবার ফিরছে সেই মানুষগুলির জীবনের ছায়াছবি। এবার টলিউডে। খনি ও তাকে ঘিরে জীবনের চালচ্চিত্র নিয়েই অন্ধকার প্রেক্ষাগৃহে আসছেন দেব। মুক্তির অপেক্ষায় খাদান।
কিন্তু এই ছবি তো কল্পনা আর কলমের জোরে। সাদা-কালো বাস্তবে কী অবস্থায় রয়েছেন খনির বাসিন্দারা ? নিত্যদিনের জীবনে তাঁদের সুখ কতটা ? সেই বাস্তবই খোঁজার চেষ্টা।
ঝরিয়া। অবিভক্ত বিহারের বিস্তৃর্ণ খনি এলাকা। স্বাধীনতার আগে থেকেই এই অঞ্চল ঘিরে তৈরি হয়েছে নানা কাহিনি। তৈরি হয়েছে নানা উপন্যাস। কিন্তু, প্রান্তিক এলাকার এই মানুষের জীবনে কোনও পরিবর্তন আসেনি। বিহার ভাগ হয়ে ধানবাদ জেলার ঝরিয়া আজ ঝাড়খণ্ডের অংশ। যাকে কেন্দ্র করে শক্ত হয়ে রয়েছে রাজ্যের অর্থনীতির শিরদাঁড়া। কিন্তু মানুষগুলোর অবস্থা ?
ইতি-উতি ছড়িয়ে ধসের চিহ্ন। ধিক ধিক করে জ্বলছে মার্টির গর্ভে চিতা। সেই আগুনে হাত সেঁকেই রোজ ঘুমতো যান, এই অঞ্চলের বাসিন্দারা। জানেন না, পরের দিনের ভোর দেখতে পাবেন কীনা ? এ ভাবেই ছোট থেকে বড় হওয়া। বড় থেকে বৃদ্ধ হওয়া। তবুও, ঘর হারাতে হয়। ভিটে ছাড়তে হয়।
বিটুমিনাসের স্তুপের মধ্যে দাঁড়িয়ে আছে ঝরিয়া। যার শরীর দীর্ণ করেছে খনি থেকে বেরিয়ে আসা বিষাক্ত মিথেন। সেই ১৯৮৮ সালে এই এলাকাকে পরিত্যক্ত করার সুপারিশ করা হয়েছিল। কিন্তু কে শুনেছে, কার কথা। সরকার এসেছে, সরকার গিয়েছে। মানুষের বাঁচা-মরার খবর কে রেখেছ ? আজ আধুনিক ভারত। কিন্তু তাতেও কী স্বস্তি ফিরেছে ? উত্তর দিলেন এই এলাকার যুবক প্রীতেশ।
ক্যানসার গ্রাস করছে শিশুমনকে। নিঃশ্বাসের সঙ্গে ফুসফুস জুরে আজ শুরু কালো হাওয়া। তবুও ভোটের লাইনে তাদের দাঁড়াতে হবে। বুঝে নিতে হবে অধিকার। আর কয়েকদিন পরেই বিধানসভার ভোট হবে ঝাড়খণ্ডে। বাকি অঞ্চলের সঙ্গে গমগম করবে ঝরিয়াও। কিন্তু দাহো দেবী, মালতিদের জীবনে সেই আনন্দ নেই। থাকবে কী করে, ঘরের ভিতরের ছবিটা দেখলে আপনারও বুক কেঁপে যাবে।
২০১১ সালে জনসংখ্যা বেড়েছে। ঝরিয়াও বড় হয়েছে। আর প্রাপ্তি...। ভয়। রোজই যা গ্রাস করছে সেখানকার মানুষকে। ভোট আসে, ভোট যায়। ঝরিয়ার হাতে থেকে যায় শুধু পেন্সিল। আর বুক ভরে মিথেন আর কার্বনের ভালবাসায়।