দিল্লিতে শ্রদ্ধা ওয়াকার হত্যাকাণ্ড নিয়ে তোলপাড় গোটা দেশ । তরুণীকে নৃশংস ভাবে খুনের পর তাঁর দেহ ৩৫ টুকরো করে কেটে বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়েছেন তাঁরই প্রেমিক আফতাব পুণাওয়ালা । মেয়েকে হারিয়ে স্বাভাবিকভাবেই ভেঙে পড়েছেন শ্রদ্ধার বাবা বিকাশ ওয়াকার । ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, শ্রদ্ধার বাবা আফতাবের মৃত্যুদণ্ডের দাবি জানিয়েছেন ।
২০১৯ সালে একটি ডেটিং সাইটের মাধ্যমে শ্রদ্ধা ও আফতাবের আলাপ হয় । পরে সেই আলাপ প্রেমে গড়ায় । কিন্তু, তাঁদের সম্পর্ক কোনওদিনই মেনে নেয়নি শ্রদ্ধার বাবা । কিন্তু, প্রেমের টানে ঘর ছেড়েছিলেন শ্রদ্ধা । আফতাবের সঙ্গে থাকছিলেন । শ্রদ্ধার বাবার কথায়, আফতাবের সঙ্গে আলাপ হওয়ার পর থেকে অনেকটা বদলে যায় শ্রদ্ধা । আগে শ্রদ্ধা শান্ত, নরম স্বভাবের ছিল । কেরিয়ার নিয়ে উচ্চাভিলাষী ছিল । কিন্তু, পরে শ্রদ্ধা পুরো বদলে যায় । মা-বাবার সঙ্গে কথা বলাও বন্ধ করে দেয় শ্রদ্ধা । শ্রদ্ধার বাবা জানিয়েছেন, মেয়ের সঙ্গে শেষবার ফোনে ২০২১ সালে কথা হয়েছিল । তখন তিনি বুঝেছিলেন মেয়ে খুশি নয় ।
শ্রদ্ধার বাবা বিকাশ ওয়াকার আফতাবের মৃত্যদণ্ড দাবি করেছেন । তাঁর কথায়, "আফতাব জেরায় যা বলেছে, সেটা যদি সত্যিই হয়ে থাকে, তাহলে তার মৃত্যুদন্ড হওয়া উচিৎ । মেয়েকে হত্যা ও এতদিন ধরে এখবর গোপনে রাখার জন্য কঠোর শাস্তি পেতে হবে তাকে । কিছু আগেও যদি জানতাম কী চলছে, তাহলে হয়তো মেয়েকে বাঁচাতে পারতাম । " উল্লেখ্য,দু'বছর আগে যখন শ্রদ্ধার মা প্রয়াত হন, তখন একবারই আফতাবের সঙ্গে দেখা হয়েছিল শ্রদ্ধার বাবার । কিন্তু, সেইসময় তাঁদের মধ্যে কোনও কথা হয়নি ।
মঙ্গলবার দিল্লি পুলিশের আধিকারিকরা শ্রদ্ধার দেহের অংশগুলি উদ্ধার করতে আফতাবকে নিয়ে মেহরাউলির জঙ্গলে যান । সূত্রের খবর,গোটা ঘটনার বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আফতাবের বন্ধু ও তার পরিবারের সঙ্গেও যোগাযোগ করছে পুলিশ ।
আফতাব-শ্রদ্ধা দু’জনেই আদতে মুম্বইয়ের বাসিন্দা। কল সেন্টারে কাজ চলাকালীন একটি ডেটিং অ্যাপে দু'জনের পরিচয়। দক্ষিণ দিল্লির অতিরিক্ত ডিসিপি অঙ্কিত চৌহান জানান, তিন বছর আগে লিভ-ইন করতে শুরু করেন এই দুই তরুণ-তরুণী। এরপরেই তাঁরা মুম্বই ছেড়ে দিল্লি চলে যান। কিন্তু কিছুদিন পর থেকে বিয়ের জন্য আফতাবকে চাপ দিতে শুরু করেন শ্রদ্ধা। কিন্তু আফতাব বিয়েতে রাজি না থাকায় রোজই তাঁদের ঝামেলা হত বলেই খবর। গত ১৮ মে তুমুল ঝগড়া বাধে দু’জনের। ঝগড়া চলাকালীন শ্রদ্ধাকে গলা টিপে খুন করেন আফতাব। জানা গিয়েছে, জনপ্রিয় মার্কিন অপরাধমূলক ওয়েব সিরিজ 'ডেক্সটার' দেখে শ্রদ্ধাকে খুনের ছক কষেন তিনি। খুনের পর শ্রদ্ধার দেহ টুকরো টুকরো করতে এবং রক্তের দাগ পরিষ্কারের পদ্ধতি খুঁজতে গুগলেও সার্চ করেন শ্রদ্ধার লিভ-ইন সঙ্গী। আফতাবের থেকে এই তথ্য পেয়ে রীতিমতো শিউরে উঠেছেন দুঁদে পুলিশকর্তারাও।