খেলার দেশ ভারত। স্বাধীনতার পূর্ববর্তী এবং পরবর্তী সময়েও বিশ্ব ক্রীড়াক্ষেত্রের বহু শিখর স্পর্শ করেছে আমাদের দেশ। শুধু দলগতভাবেই নয়, এককভাবেও বহু ভারতীয় ক্রীড়াবিদকেই একডাকে চেনেন বিশ্বের অগণিত মানুষ। তেমনই কয়েকজনকে নিয়ে আলোচনা করব আমরা এখানে।
বলবীর সিং সিনিয়র
স্বাধীনতার আগে ভারতীয় হকিতে একচ্ছত্র আধিপত্য বজায় রাখার ক্ষেত্রে এক নম্বরে যদি থাকেন ধ্যানচাঁদ, তাহলে স্বাধীনতার পরবর্তী সময়টির জন্য হকিতে এই শিরোপা পাবেন বলবীর সিং সিনিয়র। স্বাধীন ভারতের সফলতম সেন্টার ফরওয়ার্ড। যিনি ১৯৪৮ সালের লন্ডন অলিম্পিক্সের ফাইনালে ভারতের সোনাজয়ের অন্যতম কারিগরও ছিলেন। ফাইনালে গ্রেট ব্রিটেনকে ৪-০ ব্যবধানে হারিয়েছিল ভারত। তার মধ্যে ২টি গোল করেছিলেন বলবীর সিং সিনিয়র। শুধু খেলোয়াড় হিসেবেই নয়, কোচ হিসেবেও তাঁর ভূমিকা অনস্বীকার্য। ১৯৭৫ সালে প্রায় ভেঙে পড়া ভারতীয় হকি দলকে চাঙ্গা করে বিশ্বকাপ জিতিয়ে এনেছিলেন তিনি।
মিলখা সিং
ধ্যানচাঁদের পর ভারতের দ্বিতীয় ক্রীড়াবিদ যাঁর নাম ছড়িয়ে পড়েছিল ঘরে ঘরে। দৌড়ে বিশ্বজয় করে মিলখা সিং হয়ে উঠেছিলেন সদ্য জন্মানো স্বাধীন ভারত রাষ্ট্রের প্রতিটি নাগরিকের কাছে অন্যতম আশা। ১৯৬০ সালের রোম অলিম্পিক্সে মাত্র ০.১ সেকেন্ডের জন্য পদক হাতছাড়া হলেও বিশ্বের মাটিতে ভারতের নাম উজ্জ্বল করতে কোনও সুযোগই হাতছাড়া করেননি তিনি। 'উড়ন্ত শিখ' বলে ডাকা হত তাঁকে। এই নামে তাঁকে ডেকেছিলেন পাকিস্তানের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জেনারেল আয়ুব খান। পাকিস্তানের অ্যাথলিট আব্দুল খালিককে লাহোরের আন্তর্জাতিক অ্যাথলেটিক কম্পিটিশনে হারিয়ে দিয়েছিলেন মিলখা।
সচিন তেন্ডুলকর
ক্রিকেট ভারতীয়দের জাতীয় ধর্ম। আর সেই ধর্মের 'ঈশ্বর' হলেন সচিন তেন্ডুলকর। সচিন তেন্ডুলকর শুধু একজন ক্রিকেটারের নামই নয়, তিনি আসলে প্রতিটি ভারতীয় নাগরিকের আবেগের সুরের সমন্বয়। যারা বলতে পারে না, যারা চেঁচাতে পারে না, প্রায় গোটা একটা জীবন পেরিয়ে গিয়েও একটা আন্দোলন বা মিছিল করা হয়ে ওঠেনি যাদের, তাদের সঙ্গে, সেই নব্বই দশক থেকেই আরেকটু বেশি করে নিজের পাঁচ ফুট পাঁচ ইঞ্চির শরীরটা নিয়ে মিশে গিয়েছিলেন সচিন তেন্ডুলকর। ২০১৩-র নভেম্বরে অবসর নিয়েছিলেন তিনি। তারপর সবটা বদলে গেল! সূর্যাস্তের মধ্যে অর্কিডের উজ্জ্বল শিকড়ের মতো কভার ড্রাইভ অথবা লেগ গ্লান্সটি নামিয়ে আনবেন আকাশ থেকে আর ছেঁড়া কাগজ অথবা পরিত্যক্ত সাপের খোলসের মতো পড়ে থাকা বহু মানুষের নিরাপত্তাহীন জীবনে অতি গ্রীষ্মের জল-বাতাসার মতো শান্তি অল্প হলেও নেমে আসবে, ক্রিকেট নিয়ে এখনও অনেকের স্বপ্ন বলতে কেবল এটুকুই।
নীরজ চোপড়া
৬০ বছরের বেশি সময় ধরে যে স্বপ্ন দেখেছিলেন মিলখা সিং, তা পূরণ করলেন নীরজ চোপড়া। অ্যাথলেটিক্সে সোনা এনে দিলেন দেশকে। টোকিয়ো অলিম্পিক্স ২০২০-তে মাত্র ২৪ বছর বয়সে জ্যাভেলিনে সোনা জিতলেন হরিয়ানার প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে উঠে আসা নীরজ। নায়ক বদলে গেল ভারতীয় যুবসমাজের!
মেরি কম
ভারতের সর্বকালের অন্যতম সফল মহিলা ক্রীড়াবিদ। তিনি অপেশাদার বক্সিং-এ লড়াইয়ের এক জ্বলন্ত উদাহরণ। তিনি তাঁর সঙ্গেই একজন রাজনীতিবিদ ও বিশ্বচ্যাম্পিয়নও বটে। মণিপুরের প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে অতি প্রতিবন্ধকতাকে সঙ্গী করে উঠে আসা মেরি কম স্বপ্নপূরণের আরেক নাম। ছোট শহর থেকে উঠে আসার স্বপ্ন নিয়ে এগিয়ে চলা প্রতিটি নবীন ক্রীড়াবিদের কাছে তিনি উজ্জ্বলতম প্রেরণা।
লিয়েন্ডার পেজ
ভারতের সফলতম টেনিস তারকা। যাঁর ঝুলিতে ১৯৯৬ সালের আটলান্টা অলিম্পিক্সের সিঙ্গলসে ব্রোঞ্জ পদক থেকে শুরু করে রয়েছে মহেশ ভূপতির সঙ্গে ডবলসের উইম্বলডন খেতাবও। কলকাতার বাসিন্দা লিয়েন্ডার পেজ বিশ্ব ক্রীড়াজগতে ব্যক্তিগত সাফল্যের ক্ষেত্রে সর্বকালের সেরা দশজন ভারতীয় ক্রীড়াবিদের মধ্যে একজন। ডবলসে আটটা গ্র্যান্ডস্ল্যাম এবং মিক্সড ডাবলসে দশটা গ্র্যান্ডস্ল্যাম রয়েছে এই অসামান্য প্রতিভাবান টেনিস তারকার ঝুলিতে।