আজ ১৫ অগাস্ট আমাদের দেশের ৭৬তম স্বাধীনতা দিবস (India Independence Day)। ১৭৫৭ সালে পলাশীর যুদ্ধের পর বণিকের মানদণ্ড পরিণত হয়েছিল রাজদণ্ডে। তারপর প্রায় দীর্ঘ ২০০ বছরব্যাপী অপমান ও নির্যাতনের পরাধীনতার ইতিহাস। অনেক আন্দোলন আর প্রাণ বিসর্জনের বিনিময়ে অবশেষে ১৯৪৭ সালের ১৫ অগাস্ট মধ্যরাতে ভারতবর্ষ স্বাধীনতা অর্জন করে।
উপরের এই তথ্যগুলি এদেশের আবালবৃদ্ধবনিতা জানেন না এমনটা নয়, কিন্তু অনেকেই বোধ হয় জানেন না যে, ১৫ অগাস্ট ভারত ছাড়াও বিশ্বের আরও পাঁচ-পাঁচটি দেশেও উদযাপিত হয় স্বাধীনতা দিবস। আসুন, জেনে নেওয়া যাক ভারত ছাড়াও আর কোন কোন দেশে ১৫ অগাস্ট স্বাধীনতা দিবস উদযাপিত হয়।
প্রথমেই বলতে হয় উত্তর কোরিয়া ও দক্ষিণ কোরিয়ার কথা। এশিয়া মহাদেশের এই দুটো দেশ পরস্পরের প্রতিবেশী হলেও ভারত ও পাকিস্তানের মতো এই দুটো দেশের মধ্যে সম্পর্ক মোটেই ভালো নয়। দুটি দেশেরই স্বাধীনতা দিবস ১৫ অগাস্ট। যদিও আমাদের দেশের মতো তারা ১৫ অগাস্টকে ইন্ডিপেনডেন্স ডে বলে না। কোরিয়ানদের কাছে দিনটি ‘ন্যাশনাল লিবারেশন ডে’ অর্থাৎ জাতীয় মুক্তি দিবস নামেই পরিচিত। অবিভক্ত কোরিয়া দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পর্যন্ত জাপানের দখলে ছিল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ১৯৪৫ সালের ১৫ অগাস্ট মিত্রশক্তি কোরিয়াকে জাপানের দখল থেকে মুক্ত করে। এই দিনটিকে কোরিয়ানরা বলেন ‘গওয়াংবোকজিয়ল’ অর্থাৎ আলোর আত্মপ্রকাশ। জাপান বিশ্বযুদ্ধে হেরে গিয়ে তৎকালীন সমাজতান্ত্রিক দেশ সোভিয়েত ইউনিয়নের কাছে আত্মসমর্পণ করে। এরপর কোন মতাদর্শে স্বাধীন রাষ্ট্রের আত্মপ্রকাশ ঘটবে তা নিয়ে কোরিয়া জুড়ে বিতর্ক শুরু হয়। সেই বিতর্কের জেরে অবিভক্ত কোরিয়া উত্তর ও দক্ষিণ দুটো ভাগে ভেঙে যায়। সমাজতান্ত্রিক আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে উত্তর কোরিয়া ১৯৫০ সালে স্বাধীন সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করে। অন্যদিকে, দক্ষিণ কোরিয়া ধনতান্ত্রিক আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে স্বাধীন ধনতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। স্বাধীন উত্তর কোরিয়ার নতুন নাম হয় গণতান্ত্রিক গণপ্রজাতন্ত্রী কোরিয়া (Democratic People's Republic of Korea) আর স্বাধীন দক্ষিণ কোরিয়ার নাম হয় প্রজাতন্ত্রী কোরিয়া (Republic of Korea)। তবে অবিভক্ত কোরিয়া ভেঙে দুটো আলাদা রাষ্ট্র হলেও উভয় দেশেই স্বাধীনতা দিবস প্রতি বছর ১৫ অগাস্ট পালিত হয়।
এরপর বলা যাক এশিয়ারই আরও একটি ছোট দ্বীপ রাষ্ট্র বাহরাইনের (the Kingdom of Bahrain) কথা। পারস্য উপসাগরের পশ্চিম অংশে ৩৬টি দ্বীপ নিয়ে মধ্যপ্রাচ্যের এই দেশটি গড়ে উঠেছে। ভারতের মতো বাহরাইনের পরাধীনতার ইতিহাসও সুদীর্ঘ। সপ্তদশ শতাব্দীতে বাহরাইন ইরানের অধীনে ছিল। পরবর্তীতে বাহরাইনের শাসন ক্ষমতা দখল করে সৌদি আরব। উনবিংশ শতাব্দীতে সৌদি আরবের সঙ্গে ব্রিটিশদের সন্ধিচুক্তির জেরে বাহরাইনের শাসনক্ষমতা কার্যত ব্রিটিশদের দখলে যায়। সৌদি আরব নামে মাত্র বাহরাইনের শাসক থাকে। শেষ পর্যন্ত ১৯৭১ সালের ১৫ অগাস্ট সৌদি আরব ও ব্রিটিশ দখলদারির অবসান ঘটে এবং বাহরাইন স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে।
বিশ্বের ষষ্ঠ ক্ষুদ্রতম দেশ হিসাবে পরিচিত লিখটেনস্টাইনের (the Principality of Liechtenstein) স্বাধীনতা দিবসও ১৫ অগাস্ট। লিখটেনস্টাইনের আয়তন মাত্র ১৬০ বর্গ কিমি। কলকাতা পৌরনিগমের ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী এই শহরের (পৌরনিগমের অধীনে থাকা এলাকা) আয়তন ২০৫ বর্গ কিমি। এই তুলনা থেকেই একটা ধারণা করা সম্ভব যে, দেশ হিসেবে লিখটেনস্টাইন কতটা ছোট। আল্পস পর্বতমালার মাঝে রাইন নদীর ধারে এই দেশটি একদা জার্মানির অধীনে ছিল। পরবর্তীতে ১৮৬৬ সালের ১৫ অগাস্ট লিখটেনস্টাইন স্বাধীনতা লাভ করে।
গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্রী কঙ্গো (Democratic Republic of the Congo) আফ্রিকা মহাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম এবং বিশ্বের একাদশতম বৃহত্তম দেশ। কঙ্গোর পরাধীনতার ইতিহাস প্রায় ৫০০ বছরের পুরনো। ১৪৮৪ সাল নাগাদ পর্তুগিজরা প্রথম কঙ্গো দখল করে। পরবর্তীতে কঙ্গোর দখল নেয় ফ্রান্স। পরাধীন থাকার সময় কঙ্গো হয়ে ওঠে দাস ব্যবসার অন্যতম কেন্দ্র। আফ্রিকার যে দেশগুলি থেকে ইউরোপে ক্রীতদাস পাঠানো হত সেগুলির মধ্যে অন্যতম ছিল কঙ্গো। পরবর্তীতে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর কঙ্গোয় স্বাধীনতা আন্দোলন ক্রমশ জোরদার হয়ে ওঠে। শেষ পর্যন্ত ১৯৬০ সালের ১৫ অগাস্ট কঙ্গোয় ফরাসি উপনিবেশের অবসান ঘটে এবং স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্রী কঙ্গো। এই দিনটিকে সে দেশে বলা হয় কঙ্গোলিজ ন্যাশনাল ডে।