আন্তর্জাতিক মঞ্চে বারবার ভারতকে গর্বিত করেছেন তাঁরা । জয়ধ্বজা উড়িয়েছেন বিদেশের মাটিতে । তাঁদের কৃতিত্ব সম্মানিত করেছে দেশকে । কিন্তু, সেই কৃতিত্ব, পদক, সম্মান...সবটাই যেন মিশে গিয়েছে ধুলোয় । যে দেশকে কুস্তিগীররা গর্বিত করেছেন প্রতিনিয়ত, সেই দেশের মাটিতেই আজ তাঁরা 'আক্রান্ত' । যখন দুই কিলোমিটার দূরে গণতন্ত্রের নতুন মন্দির উদ্বোধন করছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, তখন 'দাগী অপরাধী'-র মতো কুস্তিগীরদের রাস্তা দিয়ে টেনে, হিঁচড়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে । অভিযোগ, পুলিশ তাঁদের মারধরও করেছে । কণ্ঠরোধের চেষ্টা করা হয়েছে বলে অভিযোগ । 'মোদী সাম্রাজ্য'-এ এটাই কি গণতন্ত্র, প্রশ্ন উঠছে বারবার ।
এপ্রিল মাস থেকে রাস্তায় নেমেছেন কুস্তিগীররা । কুস্তি ফেডারেশনের সভাপতি তথা বিজেপি সাংসদ ব্রিজ ভূষণ শরণ সিংয়ের বিরুদ্ধে যৌন হেনস্থার অভিযোগ তুলে দিল্লির যন্তর-মন্তরে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন সাক্ষী মালিক, বজরং পুনিয়ারা । ন্যায় বিচার না পাওয়া পর্যন্ত লড়াই চলবে বলে জানিয়েছেন তাঁরা । তারই রেশ ধরে রবিবার নতুন সংসদ ভবন অভিযানে রাস্তায় নেমেছিলেন কুস্তিগীররা । সেই অভিযানকে কেন্দ্র করে মুহূর্তের মধ্যে ধন্ধুমার পরিস্থিতি তৈরি হয় । পুলিশ, কুস্তিগীরদের মধ্যে ধস্তাধস্তি বেধে যায় । রাজপথ থেকে টেনে হিঁচড়ে আটক করা হয় সাক্ষী মালিক-ভিনেশ ফোগত-বজরং পুনিয়াদের । অভিযোগ, জামা ছিঁড়ে দেওয়া হয়েছে তাঁদের, মারধরও করা হয় বলে অভিযোগ । ঘটনায় কয়েকজনকে আটক করে পুলিশ ।
দিল্লির রাজপথে যখন ধুন্ধুমার পরিস্থিতি, তখন কয়েক কিলোমিটার দূরে নতুন সংসদ ভবন-কে আত্মনির্ভর ভারতের 'নতুন সূর্যোদয়' বলে দাবি করছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী । ভারতকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার কথা বলছেন । দু'টো ঘটনার তুলনা করে প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে তীব্র আক্রমণ শানিয়েছেন বিরোধীরা । মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় টুইট করে বলেন, 'দিল্লি পুলিশের হাতে দেশের সম্মান নষ্ট হল। যে ভাবে দেশের চ্যাম্পিয়নদের সঙ্গে ব্যবহার করা হল, তা গণতন্ত্রের পরিপন্থী। এই ঘটনাকে বিজেপির আরও এক অপশাসন বলেই অভিযোগ মমতা। অবিলম্বে কুস্তিগীরদের মুক্তির দাবিও তোলেন তিনি । দেশের হয়ে পদক জেতা কুস্তিগীরদের সঙ্গে এ হেন ব্যবহারে হতাশ নীরজ চোপড়া । প্রতিবাদ জানিয়েছেন ক্রীড়াজগতও ।
উল্লেখ্য, রবিবার রাতেই আটক কুস্তিগীরদের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করেছে দিল্লি পুলিশ । ভারতীয় দণ্ডবিধির ছ'টি ধারায় এফআইআর রুজু করা হয়েছে ৷ ভিনেশ ফোগত, সাক্ষী মালিক এবং বজরং পুনিয়াদের বিরুদ্ধে ১৪৭, ১৪৯, ১৮৬, ১৮৮, ৩৩২, ৩৫৩ ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে । প্রতিবাদী কুস্তিগীরদের অভিযোগ, তাঁদের চরিত্র হননের চেষ্টা চলছে ৷ সঙ্গীতা ও ভিনেশ ফোগতদের ছবি বিকৃত করে টুইটার-সহ সোশ্যাল মিডিয়াতেও ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে ।