মধ্যমগ্রাম-কাণ্ডে নয়া মোড়। উদ্ধার খুনে ব্যবহার করা ইট।
বীরেশপল্লী থেকে কেন মা-মেয়ে ট্রলিব্যাগ নিয়ে উত্তর কলকাতার আহিরীটোলার ঘাটে এসেছিলেন, তার একটা প্রাথমিক ধরনা পেয়েছে কলকাতা পুলিশ। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, এই ঘটনায় অন্যতম অভিযুক্ত আরতি ঘোষ একসময় থাকতেন কুমোরটুলিতে। কারণ, তাঁর স্বামী থাকতেন এই অঞ্চলে। তাই মা ও মেয়ের এই অঞ্চল হাতের তালুর মতো চেনা বলেই দাবি করেছেন তদন্তকারীরা।
ইতিমধ্যেই মধ্যমগ্রামের বীরেশপল্লীর বাড়িতে গিয়েছিল কলকাতা পুলিশ। সঙ্গে ছিলেন ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞরা। যে ইট দিয়ে সুমিতা ঘোষকে খুন করা হয়েছে বলে অনুমান, সেই ইট উদ্ধার হয়েছে বলে দাবি পুলিশের। একসঙ্গে বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে আরও ২০টি জিনিষ। তদন্তকারীদের দাবি, পিসিমাশাশুড়িকে খুনের পর সেই ইট বাড়ির বাগানেই ফেলে দিয়েছিলেন ফাল্গুনী ঘোষ।
তবে একটা ব্যাপারে এখনও উত্তর নেই কলকাতা পুলিশের কাছে। তা-হল, সুমিতাকে খুনের পর তাঁর দেহ টুকরো করা হল কী ভাবে ? এই কাজ ফাল্গুনী ও আরতির একার কাজ, নাকি এখানে কোনও তৃতীয় ব্যক্তি রয়েছেন ? সুমিতার দেহ টুকরো করতে কোন অস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছিল, তা অবশ্য এখনও উদ্ধার করা যায়নি।
এদিকে হাড়হিম করা এই ঘটনায় এবার একসঙ্গে মুখ খুললেন মধ্যমগ্রামের এক ভ্যানচালক এবং যে ট্যাক্সিতে দেহ নিয়ে আহিরীটোলার ঘাটে এসেছিলেন ওই দুই মহিলা, সেই ট্যাক্সির চালকও। ভ্যান চালক জানিয়েছেন, বাড়ি থেকে স্টেশন যাওয়ার সময় ওই দুই মহিলা দাবি করেছিলেন, নীল ট্রলির মধ্যে কাঁসার বাসন রয়েছে। ভোর পাঁচটা নাগাদ সেই ভ্যানে উঠেছিলেন দুই মহিলা। তাঁকে ভাড়ার থেকে অতিরিক্ত টাকাও দিয়েছিলেন তাঁরা।
এই কেসে প্রায় একই বয়ান শোনা গিয়েছে ট্যাক্সি চালকের থেকেও। তিনিও জানিয়েছেন, দোলতলা থেকে আরিহীটোলা পর্যন্ত মূলত ঘরকন্যার কথাই শোনা গিয়েছিল দুই মহিলার থেকে। ট্যাক্সিচালকের দাবি, ট্রলি যে ভারী তা তাঁর দেখে মনে হয়েছিল। কিন্তু তাতে কাঁসার বাসন রয়েছে বলেই তখন জানান, আরতি এবং ফাল্গুনী।
এই অবস্থায় প্রাথমিক তদন্তে দাবি করা হয়েছে, পিসিমাশাশুড়িকে খুনের পিছনে রয়েছে তাঁর সম্পত্তি আর সোনার লোভ। পুলিশি জেরায় দুই ধৃত দাবি করেছেন, শনিবার রাতে খুন করা হয় সুমিতা ঘোষকে। এরপর তাঁর অ্যাকাউন্ট থেকে বেশ কিছু টাকা তোলা হয়েছিল। তবে, কী ভাবে পিসিশাশুড়িকে খুন করা হয়েছে, তা নিয়ে এখনও মুখ খোলেননি ধৃতরা।
জানা গিয়েছে, ৫৫ বছরের সুমিতা ঘোষের স্বামীর বাড়ি অসমে। বেশ কয়েক বছর আগে তাঁদের বিবাহ বিচ্ছেদ হয়ে গিয়েছে। তবে সুমিতার মৃত্যুতে শোকাহত তাঁর স্বামী।