আরজি করের ঘটনায় চারদফা দাবিতে কলকাতার সমস্ত সরকারি মেডিক্যাল কলেজের জুনিয়র ডাক্তারদের অবস্থান চলছে। ক্রমশ গণআন্দোলনের চেহারা নিচ্ছে সেই আন্দোলন। এর আগে লালবাজার অভিযানের সময় গত সপ্তাহে ২২ ঘণ্টা ফিয়ার্স লেনের অবস্থান বিক্ষোভে ছিলেন জুনিয়র ডাক্তাররা। তারপর কলকাতার পুলিশ কমিশনার বীনিত গোয়েলের সঙ্গে দেখা করেন তাঁরা। এবার বিক্ষোভ চলছে স্বাস্থ্যভবনের সামনে। আরও বড় আকার নিয়েছে সেই বিক্ষোভ।
মঙ্গলবার বিকেল ৫টার মধ্যে তাঁদের কর্মবিরতি তুলে নেওয়ার নির্দশ দিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট। জুনিয়র ডাক্তাররা কর্মবিরতি তোলেননি, সেদিন বিকেল থেকে প্রায় ৪৮ ঘণ্টা ধরে রাস্তাতেই তাঁরা। দিনভর, রাতভর চলছে আন্দোলন, চলছে প্রতিবাদ-স্লোগান। খাবার-জলের ব্যবস্থা কীভাবে হচ্ছে? আন্দোলনে ডাক্তাররা পাশে পেয়েছেন সাধারণ মানুষকে। কেউ অফিস করে রাতের দিকে চলে যাচ্ছেন ওদের পাশে থাকবেন বলে। ত্রিপলের নীচে এই গরমে রাত কাটাচ্ছেন অতজন জুনিয়র ডাক্তার, হাতপাখা নিয়ে পৌঁছে যাচ্ছেন কোনও বৃদ্ধ, কোনও মধ্যবয়স্ক। নিজে ঘেমে বয়সে ছোট ছোট ছেলে মেয়েদের বাতাস করে যাচ্ছেন ঠায়, আন্দোলনরত ডাক্তারদের সামান্য অস্বস্তি হলেও কেউ কেউ বলছেন, অস্বস্তির কিচ্ছু নেই, তাঁরাই তো দ্বিতীয় ভগবান।
পেটি পেটি জলের ব্যবস্থা করে আনছেন কেউ, কেউ আবার বাড়ী থেকেই খাবার রান্না করে আনছেন, কেউ কিনে দিয়ে যাচ্ছেন শুকনো খাবার, এই কেউয়েরা কারা? জুনিয়র ডাক্তারদের আত্মীয়? তাঁদের পরিজন? নাহ তো, আগে কখনও দেখাও হয়নি, হয়তো কেউ কারোর নামটুকু জানেন না। তাহলে কীসের টানে ছুটে আসা? সবাই যে সাংঘাতিক সমাজ সচেতন মানুষ, এমনও নন। কিন্তু এদের সবার মনে একটা বিশ্বাস আছে, সেই দৃঢ় বিশ্বাস বলে, এই অল্পবয়সি ছেলে মেয়েগুলো যারা চাইলেই সিস্টেমকে প্রশ্ন নয়া করে যত্নে নিজেদের কেরিয়ার সাজাতে পারত ঘরে বসে, তাঁরা যখন পথে নামছে, অন্যায়ের বিরুদ্ধে মুখ খুলছে, ওরাই পারবে সমাজটাকে একটু সুস্থ করে তুলতে। নিজেদের ব্যক্তিগত সব হেরে যাওয়া ভুলে হাজার হাজার মানুষ অপেক্ষা করছে, ওদের দাবি প্রশাসন কবে শুনবে।
সারা দিনের রোজগারটুকু ওদের আন্দোলনে কাজে লাগুক, এই ভেবে হাত উজার করে সবটুকু সম্বল দিয়ে দিচ্ছেন খেটে খাওয়া মানুষ। বাড়িতে ১১ বছরের মেয়ে আছে, ক'দিন গেলে তিলোত্তমার মতোই বড় হবে মেয়েটা, এটুকু ভাবলেই ছ্যাঁত করে ওঠে বাবার মুখটা। তাই ডাক্তারদের আন্দোলনে শামিল সেই বাবাও। খালি হাতে যাবেন নাকি? ভগবানকে যেমন মিষ্টি নিবেদন করা হয়, চোখের সামনে দেখা ডাক্তাররা সেই ১১ বছরের মেয়ের বাবার কাছে জীবন্ত ভগবান। তাই ওদের জন্য হাতে করে রসগোল্লা নিয়ে এসেছেন।
এই দেশ, এই শহর এমন দৃশ্য দেখেনি আগে। আন্দোলনরত ডাক্তারদের কী লাগবে? ওআরএস, নাকি জল? মহিলা ডাক্তারদের জন্য স্যানিটারি ন্যাপকিন যেন কম না পড়ে, সব খেয়াল রাখছে মানুষ। সোশ্যাল মিডিয়ায় মুহূর্তে ছড়িয়ে যাচ্ছে তা। কে রোগী, কে ডাক্তার, কে বা নিতান্তই কেউ নয়, কোনও পরিচয় আর বড় থাকছে না। পথের পরিচয়ে মুহূর্তে মানুষ হয়ে উঠছে মানুষের আত্মীয়।