দুর্গাপুজোয় 'নবাঙ্কুর'। অসুর নিধনে শক্তির আরাধনা করেছিলেন দেবতারা। দেবতাদের তেজ থেকে সৃষ্টি হয়েছিলেন মা দুর্গা। পৃথিবীর অন্যতম অপশক্তি বর্তমানে বিশ্ব উষ্ণায়ন ও দূষণ। আর এই অসুরের হাত থেকে রক্ষা করতে পারে একমাত্র গাছ। দুর্গাপুজো তো প্রকৃতিরই আরাধনা। কলাবউকে স্নান করিয়ে শুরু হয় মহাসপ্তমীর পুজো। আর এই ভাবনা থেকেই উত্তর কলকাতার একটি পুজোয় মন্ডপসজ্জা ও প্রতিমা সজ্জায় ব্যবহার করা হয়েছে ৮০০০ চারাগাছ। উদ্যোক্তাদের নাম লালাবাগান নবাঙ্কুর। নামের সঙ্গে মিল রেখে এবং পরিবেশকে বাঁচানোর বার্তা দিতেই এমন এক থিম নিয়ে এসেছেন এই ক্লাবের উদ্যোক্তারা।
প্যান্ডেলে ঢুকলেই মনে হবে কোনও শান্ত অরণ্য। মাথায় খোলা আকাশ আর চারদিকে প্রকৃতির ঘ্রাণ। বৃষ্টির মরশুমে আকাশ সম্পূর্ণ খোলা নয়। অদৃশ্য কভারে ঢেকে রাখা হয়েছে। কিন্তু প্রকৃতির সঙ্গে আকাশের অনুভূতি দিতেই এমন ভাবনা, জানিয়েছেন উদ্যোক্তারা। মন্ডপের মধ্যে কোথাও আবার ফুটিয়ে তোলা হয় জলাধার। যাতে মনে হয়, জলের পাশে এসব গাছের জন্ম হয়েছে। নবাঙ্কুরের সম্পূর্ণ ভাবনা ও দৃশ্যায়ণে রয়েছেন শিল্পী সুশান্ত পাল। শুধু মন্ডপসজ্জা নয়, সবুজের ছোঁয়া প্রতিমাতেও। এক ঝলকে দেখে মনে হবে, কোনও গাছের গা থেকে দুর্গামূর্তি ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। দুর্গার সঙ্গে রয়েছেন লক্ষ্মী, গণেশ, কার্তিক, সরস্বতী। সিংহের মাথায় দাঁড়িয়ে আছেন দশভূজা দেবী। নিচে এক মাটির বড় বেদী।
বিভিন্ন নার্সারি থেকে গাছ তৈরি করে গত পাঁচ মাস ধরে এই মন্ডপ বানিয়েছেন উদ্যোক্তারা। নার্সারি থেকে কর্মীরাও এই কাজের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন। শুধু নার্সারি নয়, এই মন্ডপসজ্জার জন্য বিভিন্ন জেলা থেকেও এসেছে অসংখ্য চারা। এই চারদিনে সামান্য অযত্নে অনেক গাছই হয়তো বাঁচবে না। পুজোর চারদিনে তার বিকল্পও মজুত করে রাখা হয়েছে। এই মন্ডপে ঢুকে দর্শনার্থীদের মনে হতে পারে কোনও গ্রিনহাউজে এসে প্রবেশ করেছেন। তবে দিনের বেলা একরকম, রাতে অন্যরকম অনুভূতি হবে। রাতের দর্শনার্থীদের জন্য ইলিউশন লাইটের ব্যবস্থা করা হয়েছে। কলকাতার দুর্গাপুজো সব সময়ই নতুন বার্তা দেয়। পৃথিবী বিশ্ব উষ্ণায়নে তেতে উঠছে, সমুদ্রস্তর বাড়ছে,ঋতু পরিবর্তিত হচ্ছে। এই সময় একমাত্র অপশক্তি পরিবেশ দূষণ। ৮০০০-এর বেশি চারাগাছ নিয়ে থিম পুজোয় অন্য বার্তা দিল উত্তর কলকাতার ক্লাব লালাবাগান নবাঙ্কুর।