মিছিল নগরী কলকাতা। এই শব্দবন্ধটুকু আগেও এই শহরের নামের আগে ব্যবহার হয়েছে। কিন্তু রাজনৈতিক মিছিলেই দীর্ঘকাল তা যেন সীমাবদ্ধ ছিল। আরজি করের ঘটনা যেন ভিতর থেকে নাড়িয়ে দিয়েছে নব প্রজন্ম ও সমাজকে। আর এরই প্রতিবাদে প্রায় রোজই বিভিন্ন সংগঠন মিছিল ও প্রতিবাদ কর্মসূচির ডাক দিচ্ছে। শনি, রবি ও সোমবার একাধিক মিছিলের ডাক অনেক সংগঠনের। প্রত্যেকের ইস্যুই আরজি কর।
শনিবার বিকেলে এমনই এক অভিনব মিছিলের ডাক দেওয়া হয়েছে। যার শিরোনাম- "টালা থানার ওসি নাকি অসুস্থ!?" ওসিকে হাসপাতালে দেখতে যাওয়া নিয়ে মিছিলের ডাক দেওয়া হয়েছে এক্সাইড মোড় থেকে। আগামী সোমবার সুপ্রিম কোর্টের শুনানিতে উপস্থিত থাকতে হবে টালা থানার ওসিকে। আরজি কর হাসপাতাল এই থানার অধীনেই ছিল। টালা থানার কার্যকলাপ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন নির্যাতিতার বাবা-মা-ও। মিছিলের উদ্যোক্তাদের দাবি, টালা থানার ওসিকে ৬টি হাসপাতাল সুস্থ ঘোষণা করেছিল। এরপর এক বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে ভবানীপুরের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন টালা থানার ওসি।
শনিবার দুপুরে মিছিল করে মেডিকেল সার্ভিস সেন্টারের পক্ষ থেকে একটি মিছিলের আয়োজন করা হয়। এই মিছিলে ছিলেন চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মী, নার্সসহ একাধিক নাগরিক রাজভবনে রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসের কাছে গিয়ে ডেপুটেশন জমা দেন তাঁরা। শনিবার গোলপার্ক মোড়ে নাগরিক বিক্ষোভ সভার ডাক দিয়েছে কলকাতা নাগরিক সম্মেলন ও জনস্বাস্থ্য কমিটি। এই অনুষ্ঠানে থাকবে সুপ্রিম কোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি অশোক কুমার গঙ্গোপাধ্যায়-সহ আরও অনেক বিশিষ্টরা।
শনিবারই অভিনব প্রতিবাদ কর্মসূচির ডাক দিয়েছে অ্য়াকাডেমি অফ ফাইন আর্টসের ওয়ার্কাস ইউনিয়ন। রাত ১০টা থেকে মেয়েদের থিয়েটার শুরু হবে। সারারাত চলবে থিয়েটার। ছটি থিয়েটারের আয়োজন করা হয়েছে। পোস্টারে বড় বড় হরফে লেখা উই ওয়ান্ট জাস্টিস। সব টিকিট ইতিমধ্যেই শেষও হয়ে গিয়েছে।
৯ সেপ্টেম্বর আরজি কর কাণ্ডের এক মাস। আর রবিবার ৮ সেপ্টেম্বর বিকেল থেকেই উত্তর থেকে দক্ষিণ, শহরতলিতে মিছিল চলবে। রবিবার নীলরতন সরকার মেডিকেল কলেজ থেকে মহামিছিলের ডাক দিয়েছে ওয়েস্ট বেঙ্গল ডক্টর্স ফোরাম। বিকেল ৩টে থেকে শুরু হবে এই মিছিল। বিকেল ৪টে থেকে মিছিল হবে কুমোরটুলি এলাকায়। কুমোরটুলি আর্ট গ্যালারি থেকে শ্যামবাজার বাটা পর্যন্ত এই মিছিল হবে। শ্যামবাজার চত্বরে আরও একটি মিছিল আয়োজন করা হয়েছে। থাকবে বিভিন্ন ক্রীড়া প্রতিষ্ঠান, বিজ্ঞানকর্মী, স্কুল-কলেজর প্রাক্তনী, সেরাম থ্যালাসেমিয়া প্রিভেনশন সেন্টারের কর্মীরাও। স্বামী বিবেকানন্দের বাড়ি থেকে শ্যামবাজারের নেতাজি মূর্তি পর্যন্ত চলবে এই মিছিল। এই মিছিলের পোস্টারে লেখা, 'উত্তর চায় উত্তর'। 'পথের দাবি' সংগঠনের কলেজ স্কোয়ারের মহামিছিল সাফল্য পেয়েছিল। রবিবার তাদের রাত ৮টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত অবস্থান থাকবে শহরের একাধিক পয়েন্টে। শ্যামবাজার, ঢাকুরিয়া, যাদবপুর এইট বি, মন্দিরতলা, কদমতলা পাওয়ারহাউসে অবস্থান বিক্ষোভে বসবেন তাঁরা।
রবিবার মিছিলের ডাক দিয়েছে যাদবপুর আর্টিস্ট ফোরামও। গড়িয়া থেকে যাদবপুর পর্যন্ত শিল্পীরা মিছিল করবেন। রাত ৯টা থেকে চিত্র ও ভাস্কর্য শিল্পীদের সঙ্গে ১০ হাজার মানুষ এই মিছিলে যোগ দেবেন বলে দাবি সংগঠনের। রবিবার বিকেল ৩টে ৩০ থেকে মিছিলের ডাক দিয়েছে যোধপুর পার্ক বয়েসের প্রাক্তনীরাও।
রবিবার রাতে সবথেকে বড় প্রতিবাদ কর্মসূচি, মেয়েদের রাতদখল ও ভোরদখল। ৮ সেপ্টেম্বর রাত ১১টা থেকে যাদবপুর বাসস্ট্যান্ডে শুরু হবে এই কর্মসূচি। বাদ্যযন্ত্র, নাটক, নাচ, গান নিয়ে এই কর্মসূচি রাতভর হবে।
সোমবার আরজি কর কাণ্ডে সুপ্রিম কোর্টের শুনানি। এদিনও কিন্তু মিছিল থেকে সরে আসছে না মহানগর। সিপিআইএমের পক্ষ থেকে পুলিশ কমিশনারকে অপসারণের দাবিতে লেনিন মূর্তির সামনে জমায়েতের ডাক দেওয়া হয়েছে। বিকেল ৩টে থেকে এই কর্মসূচি শুরু হবে।