চলতি বছরে প্রাথমিকের Teachers Ability Test অর্থাৎ টেট হচ্ছে না। সোমবার প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের তরফে এই বিষয়ে জানানো হয়েছে। পর্ষদ সভাপতি গৌতম পাল জানিয়েছেন, বিগত দু-বছর পরীক্ষা নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু চলতি বছরে বেশ কিছু আইনি জটিলতা রয়েছে। পাশাপাশি বিগত বছরগুলি ঊত্তীর্ণদের এখনও নিয়োগ করা সম্ভব হয়নি। সেই কারণে চলতি বছরের টেট বাতিলের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
কী জানিয়েছেন গৌতম পাল?
গৌতম পালের দাবি, বিগত দু-বছর নিয়ম মেনে টেট-এর মাধ্যমে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে পরীক্ষা নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু ওই পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে আইনি জটিলতা তৈরি হয়। উত্তীর্ণদের মধ্যে অনেকে এখনও চাকরিতে যোগ দিতে পারননি। গৌতম পালের আরও দাবি, ২০২১ সালে ক্ষমতায় এসে প্রতিবছর টেট গ্রহণ করার পরিকল্পনা ছিল রাজ্য সরকারের। কিন্তু এবছর তা সম্পন্ন হচ্ছে না। তবে আগামী ৬ মাসের মধ্যে ওই পরীক্ষা হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
এবিষয়ে কলেজিয়াম অফ অ্য়াসিস্ট্যান্ট হেডমাস্টার্স অ্যান্ড অসিস্ট্যান্ট হেডমিস্ট্রেস-এর সম্পাদক সৌদীপ্ত দাস এই বিষয়টি নিয়ে অখুশি। তাঁর বক্তব্য, নিয়ম বিরুদ্ধভাবে নিয়োগের কারণেই আইনি জটিলতা তৈরি হচ্ছে।
কী কী সমস্যা তৈরি হয়েছিল?
TET পরীক্ষায় ভুল প্রশ্ন নিয়ে মামলা দায়ের করা হয়েছিল কলকাতা হাইকোর্টে। ২০১৭ এবং ২০২২ সালের টেটে ৪৭টি ভুল প্রশ্ন থাকার অভিযোগ ওঠে। তার পরিপ্রেক্ষিতেই মামলা দায়ের হয়েছিল। সেই মামলার ভিত্তিতে তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে দিয়েছিল কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ।
কলকাতা হাইকোর্ট সেই সময় জানিয়েছিল, কলকাতা হাইকোর্ট এবং বিশ্বভারতী বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন করে বিশেষজ্ঞদের নিয়ে এই কমিটি গড়তে হবে। সেইমতো ১৪ দিনের মধ্যে ওই কমিটি গঠন করা হয়। এর আগেই যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে কমিটিতে রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল। সুপ্রিম কোর্টেও মামলাটির শুনানি হয়েছিল। কিন্তু সুপ্রিম কোর্ট মামলাটি হাইকোর্টে পাঠিয়ে দেয়।
চাকরি প্রার্থীদের আন্দোলন
বিগত দিনে TET নিয়ে কলকাতা হাইকোর্ট একাধিক নির্দেশ দিয়েছিল। এমনকি চাকরিপ্রার্থীরা একাধিকবার পথে নেমেছিলেন। চলতি বছরের সেপ্টেম্বর মাসে চাকরির দাবিতে পথে নেমেছিলেন টেট উত্তীর্ণরা। তাঁদের অভিযোগ, ২০২২ সালে পাস করেছিলেন। তারপর প্রায় ২ বছর পেরিয়ে ২০২৪ সাল শেষ হতে চলল। কিন্তু এখনও নিয়োগপত্র হাতে পাননি তাঁরা।
এর আগে ২০২৩ সালেও টেটের দিন পরিবর্তনের ঘোষণা করা হয়েছিল। গতবছর ১০ ডিসেম্বর প্রাইমারি টেটের দিন ঘোষণা করেছিল পর্ষদ। কিন্তু পরে দিনক্ষণ পরিবর্তনের ঘোষণা করা হয়। দিন বদল করে ২৪ ডিসেম্বর ১২টা থেকে পরীক্ষা নেওয়ার ঘোষণা করা হয়েছিল।
২০২২ সালের আগে ২০১৭ সালে প্রাথমিক টেট পরীক্ষা হয়েছিল। ২০২২ সালে যে পরীক্ষা নেওয়া হয়েছিল সেই সময় পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল ৭ লাখের মতো। প্রায় দেড় লাখ পরীক্ষার্থী উত্তীর্ণ হন। এরপর ২০২৩ সালের ২৪ ডিসেম্বর পরীক্ষা গ্রহণ করা হয়েছিল। সেই সময় পরীক্ষা দেওয়ার জন্য রেজিস্ট্রেশন করেছিলেন ৩ লাখ ৯ হাজার ৫৪ জন। কিন্তু পরীক্ষা দেন মাত্র ২ লাখ ৭২ হাজার জন। এদিকে পরীক্ষা নেওয়া হলেও এখনও ফল প্রকাশ হয়নি। তবে দ্রুত ওই পরীক্ষার ফল ঘোষণা হবে বলে জানানো হয়েছে পর্ষদের তরফে।
এদিকে পরীক্ষার্থীদের একাংশ জানিয়েছে, চলতি বছরে পরীক্ষা না হওয়ার ফলে DLED পাশ করা চাকরীপ্রার্থীদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে। ফলে প্রতিযোগিতা আরও বৃদ্ধি পাবে বলে মনে করছেন তাঁরা।