‘তুমিও হেঁটে দেখো কলকাতা’...
ঐতিহ্য লেপটে থাকা এই শহরের কতই না ইতিহাস। সারা বিশ্বে এই শহর আরও এক নামে পরিচিত ‘সিটি অব জয়’। তিলোত্তমা ট্যুরে যদি কেউ আসেন তাহলে অবশ্যই তাঁকে ঢুঁ মারতে হবে শতাব্দী প্রাচীন আলিপুর চিড়িয়াখানায়। ১৮৭৬ সালে প্রতিষ্ঠিত এই চিড়িয়াখানা প্রায় ৪৬ একর জায়গার উপর বিস্তৃত। এইবছর ১৫০ বছরে পা দিল আলিপুর চিড়িয়াখানা। সেই ব্রিটিশ আমল থেকেই চিড়িয়াখানা মাথা তুলে দাঁড়িয়ে রয়েছে কলকাতার প্রাণকেন্দ্রে। কিন্তু এখনকার চিড়িয়াখানা আরও রঙিন, আরও প্রযুক্তি নির্ভর। শহরে শীত ঢুকলেই বাঙালির পছন্দের ডেস্টিনেশনের তালিকায় প্রথম দিকে উঠে আসে চিড়িয়াখানার নাম। সপ্তাহান্তে সেখানে তিল ধারণের জায়গা থাকে না। তাই মরশুমের আগেই নতুন উপহার কর্তৃপক্ষের।
চিড়িয়াখানার চেনা ছবি, খাঁচাবন্দি পশুপাখিরা , আর বাইরে মানুষ। কিন্তু এই স্টেরিওটাইপ ভেঙে দিয়েছে আলিপুর। দেড়শো বছরে নতুন উদ্যোগ চিড়িয়াখানার। চিড়িয়াখানার স্বর্ণময়ী হাউজের পাশে নতুন একটি খাঁচা তৈরি করা হয়েছে। যা ৬০ মিটার লম্বা এবং প্রায় ৪ মিটার উঁচু কাচের তৈরি। তবে এই খাঁচা একেবারেই পশু-পাখিদের জন্য নয়। বরং মানুষের জন্য। শুনে অবাক লাগলেও, এই অসাধ্যই সাধন করেছে আলিপুর চিড়িয়াখানা। মানুষ বন্দি থাকবে খাঁচায়, আর অবাধে ঘুরবে পাখিরা।
প্রায় ৭০০ বর্গমিটার এলাকা জুড়ে এই Walk In Bird Aviary-তে রাজত্ব করবে, কিচিরমিচির করবে পাখিরা , আর সেসব উপভোগ করতে পর্যটকদের স্বেচ্ছায় ঢুকে যেতে হবে খাঁচায়। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অনুপ্রেরণায় তৈরি এই অভিনব উদ্যোগের উদ্বোধন করেন রাজ্যের বনমন্ত্রী বীরবাহা হাঁসদা। বিশেষভাবে নকশা করা হয়েছে এই Aviary, যাতে পাখিদের একটি মুক্ত ও প্রাকৃতিক পরিবেশে রাখা যায়। পাখিদের প্রাকৃতিক আবাসের অনুকরণে Aviary-তে তৈরি করা হয়েছে ছোট জলাশয়, সবুজ গাছপালা, এবং পাথরের স্তুপ। এভিয়ারির কাঠামোটি ঘেরা হয়েছে জাল এবং কাঁচ দিয়ে। এর ভেতর ঢুকে দর্শকরা পাখিদের মুক্ত উড়তে দেখার সুযোগ পাবেন।
এই Aviary-তে দেখা যাবে মোট ১৪ রকমের পাখি। কাকাতুয়া, কয়েক প্রজাতির টিয়া, রুডি শেলডাক, নব বিলড ডাক, বার হেডেড গুজ়, কনিউর, গ্রিন পিজন, নীল–গলা বসন্তবৌরি, গোল্ডেন ফেজ়ান্ট, ব্রাহ্মণী ডাক, ময়ূর, রেড জাঙ্গল ফাউল দেখা যাবে একেবারে ঢিল ছোঁড়া দূরত্বে। খাঁচার উপরের অংশ কাঁচ দিয়ে তৈরি। তাই খুব কাছ থেকে তোলা যাবে ছবিও।
যাঁদের জন্য এত আয়োজন, সেই পর্যটকদের কেমন লাগছে এই উদ্যোগ? জানতে এডিটরজি বাংলার তরফে আমরা কথা বলেছিলাম কিছু পর্যটকদের সঙ্গে। উঠে এসেছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। কেউ কেউ এমন ভাবনার ঢেলে প্রশংসা করেছেন, কেউ বা এগিয়ে রেখেছেন নন্দনকাননকে।
ওয়াক-ইন বার্ড এভিয়ারি কেবলমাত্র একটি দর্শনীয় স্থান নয়; পাখি সংরক্ষণ এবং জীববৈচিত্র্য সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ানোর একটি প্রচেষ্টাও বটে। মজার ব্যাপার পাখিপুরে যতক্ষণখুশি আপনি সময় কাটাতে পারবেন। আলাদা কোনও টিকিটও কাটতে হবে না। সব মিলিয়ে এই শীতের চিড়িয়াখানা যে জমজমাট হবে তা বলাই বাহুল্য।