বুধবার বর্ধমান শহরে সিপিএমের আইন অমান্য আন্দোলন ঘিরে তুলকালাম কাণ্ড বেঁধেছিল। দুটি সমাবেশের জমায়েত এগিয়ে যাচ্ছিল কার্জন গেটের দিকে। উদ্দেশ্য ছিল জেলাশাসকের দফতর ঘেরাও করা। তা আন্দাজ করে কার্জন গেটের আগে ত্রিস্তরীয় ব্যারিকেড গড়েছিল পুলিশ। কিন্তু তা চুরমার করে দেন সিপিএম কর্মীরা। আর সেখানেই কেন্দ্রীয় কমিটির নেতা আভাষ রায় চৌধুরী গ্রেফতার হন। এই ঘটনা পশ্চিমবঙ্গের বাম আন্দোলনের ৪৫ বছরের ইতিহাসে প্রথম বলেই মত রাজনৈতিক মহলের। সিপিএম সূত্রে জানা যাচ্ছে, ১৯৭৭ সালে বামফ্রন্ট সরকার আসার পর দলের এই স্তরের কোনও নেতা জেলে যাননি।
আভাস বর্ধমানের ভূমিপুত্র হলেও এখন দলের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলী ও কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য। আভাস ছাত্র আন্দোলন থেকে সিপিএমে আসেন। সিপিএমের যুব সংগঠন ডিওয়াইএফআইয়ের রাজ্য সম্পাদক ও সভাপতিও ছিলেন তিনি। তারপর তাঁকে আর জেলার রাজনীতিতে আটকে না রেখে রাজ্যে তুলে নিয়ে আসেন বিমান বসু, সূর্যকান্ত মিশ্ররা। এই প্রজন্মের যে কয়েকজন তাত্ত্বিক নেতা রয়েছেন তাঁদের মধ্যে আভাস অন্যতম। সাম্প্রতিক সময়ে রাজ্য কমিটির সদস্য হিসেবে পশ্চিম বর্ধমানের মেয়ে মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায় দিন দশেক জেলে ছিলেন। সেটাই একরকম নজির হয়েছিল বাংলা সিপিএমে। এবার পূর্ব বর্ধমানের আভাষ। ফলে দলের অন্দরে এখন একটাই প্রশ্ন, এককালের 'লালদুর্গ' বর্ধমানই আবার বামেদের আন্দোলন বিমুখতার মরা গাঙে জোয়ার নিয়ে আসছে।
বুধবার বর্ধমান শহরের বুকে আইন অমান্য আন্দোলনের ডাক দেয় জেলা সিপিএম। উদ্দেশ্য ছিল জেলাশাসকের দফতর ঘেরাও করা। লড়াইয়ের মেজাজেই মিছিল শুরু করেন মহম্মদ সেলিম, আভাষ রায় চৌধুরীরা। জেলা নেতৃত্বের অভিযোগ, কার্জন গেট চত্বরে আসতেই তাঁদের শান্তিপূর্ণ মিছিলে পুলিশ লাঠিচার্জ করে। আর এরপরেই কার্যত রণক্ষেত্রের চেহারা নেয় এলাকা। শুরু হয় পুলিশ-সিপিএম সংঘর্ষ, চলে ব্যাপক ইটবৃষ্টি। অভিযোগ, বর্ধমান শহরে বসানো বিশ্ববাংলার লোগো উপড়ে ফেলে সিপিএমের কর্মী সমর্থকরা। ভেঙে ফেলা হয় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি সম্বলিত সরকারি প্রকল্পের কয়েক ডজন হোর্ডিং।
কয়েকশো সিপিএম নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করে পুলিশ। মধ্যরাতে একাংশকে ছেড়ে দেওয়া হয়। বাকিদের বৃহস্পতিবার কোর্টে তুলেছিল বর্ধমান পুলিশ। সেখানে ৩৪ জনকে ১৪ দিনের জেল হেফাজত ও ৭ জনকে তিন দিনের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক। জেল হেফাজতে থাকাদের তালিকায় রয়েছেন আভাষ।