নদিয়ার কৃষ্ণনগর। ইতিহাস, তীর্থ, অরণ্য, সরপুরিয়া, সরভাজা আর মাটির পুতুল। কী না আছে রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের এই শহরে। এর সঙ্গেও কৃষ্ণনগর কিন্ত আরও একটি জিনিসের জন্য বিখ্যাত। কীসের জন্য জানেন? চলুন তবে কালীতলায়। ছোট্ট এই গ্রামের নাম চকদিনগর। ছেলেবেলায় শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের 'মনোজদের অদ্ভুত বাড়ির' গল্পে ঠাকুরঝি কে মনে আছে? মনে আছে কি তাঁর সেই বিখ্যাত বড়ি দেওয়ার গল্প।
এই চকদিনগর সেই বড়ির জন্যই বিখ্যাত। কলকাতা থেকে প্রায় ১২০ কিলোমিটার দূরে নদিয়ার এই জেলা শহর। গোপালভাঁড়ের জনপথে লেগেছে আধুনিকতার ছোঁয়া। তাই ফ্ল্যাট, মডিউলার কিচেন, ননস্টিকের যুগে কৃষ্ণনগরের ছোট্ট গাঁ এখনও আঁকড়ে আছে বড়ি দেওয়ার আনন্দে।
বাইট - ১
এও এক বড়ি গ্রাম। কারণ বাংলার আর এক বড়ি গ্রামের নাম পূর্ব বর্ধমানের আউশগ্রামের সুকান্তপল্লি। কিন্তু নদিয়ার মানুষ চকদিনগরকেই নিজেদের বড়িগ্রাম বলে জানেন। কারণ এটাই এই গ্রামের জীবন জীবিকা। শীত আসলেই এই গ্রামের ব্যস্ততা বাড়ে। কারণ এই সময় বাজারের বড়ির চাহিদা হয় দ্বিগুণ। আর খাদ্যরসিকদের পাতে বড়ি পৌঁছে দিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন এই 'বড়িগ্রাম'-এর বাসিন্দারা।
ভদ্রলোকের বাইট
এই গ্রামে ঢুকলেই দেখা যায়, চাদর বিছিয়ে সার বেঁধে বড়ি দিচ্ছেন গ্রামের সকলে। সারা বছরই গ্রামের রাস্তায়, বাড়ির ছাদে, খোলা মাঠে বড়ি দেওয়ার কাজ চলে। মহিলারা অতি যত্ন ও দক্ষতার সঙ্গে কলাই ও বিউলি ডালের বড়ি তৈরি করেন। বিভিন্ন স্বাদ, গন্ধ এমনকি বিভিন্ন সাইজের ডালের বড়ি তৈরি হয় এই গ্রামে। তাঁদের দাবি, প্রত্যেকদিন প্রায় ২০ কুইন্টাল বড়ি তৈরি হয় ওই গ্রামে। সেই কারণেই এই চকদিগনগর গ্রাম হয়ে উঠেছে বাংলার আরও এক 'বড়িগ্রাম'।
শীত গ্রীষ্ম ও বর্ষা, বাঙালির পাতে বড়ি মাস্ট। তা লাউ চিংড়ির সঙ্গেই হোক বা পালং শাকের সঙ্গেই হোক। মুড়ি ঘন্টে বাটা বড়ি হবে না, তা হয় না কি। রান্নায় বড়ির ঝাল থাকবে না, কাটাপোনার ঝোলে বড়ি থাকবে না এ যেন ভাবাই মুশকিল। আর বড়ি ছাড়া শুক্ত হয় নাকি?
বাঙালির পাতে বড়ি দিতে এই গ্রামের ঘুম ভাঙে ভোর তিনটের সময়। আগের দিন রাতের ভিজিয়ে রাখা ডাল ধুয়ে নেওয়া হয় বেশ কয়েকবার। এরপর মেশিনে ভাঙা হয় সেই ডাল। যত্ন করে ফেটিয়ে, শুরু হয় বড়ি দেওয়ার কাজ। এভাবেই বঙ্গ-রসনায় বড়িকে প্রাসঙ্গিক করে রেখেছে কৃষ্ণনগরের বড়িগ্রাম চকদিনগর।