বয়স বাড়লে মানুষ শিকড়ে ফিরতে চায়, শৈশবের দিকে। সেই ফেরার রাস্তায় অনেকটা বাধা হয়ে দাঁড়াল আজকের সকালটা। ১৮ জানুয়ারি, মঙ্গলবার।
বাঙালির শৈশবকালীন একরাশ মুগ্ধতা সঙ্গে নিয়ে চলে গেলেন নারায়ণ দেবনাথ (Narayan Debnath)। কয়েকদিন আগেই পদ্মশ্রী সম্মানে সম্মানিত হয়েছেন তিনি৷ কিন্তু তার চেয়েও অনেক বড় সম্মানে তাঁকে বরণ করেছে আপামর বাঙালি। তাঁর সৃষ্ট কমিকস চরিত্রগুলি দশকের পর দশক বাংলার শৈশব আর কৈশোরের সঙ্গী। বাঁটুল দি গ্রেট (Batul the great), হাঁদা ভোঁদা(Hada Voda), নন্টে ফন্টে(Nonte Fonte), বাহাদুর বেড়াল(Bahadur Beral), কৌশিক রায়রা আরও অনেকগুলো দশক আশ্চর্য মুগ্ধতার মায়াজাল বিছিয়ে রাখবে বাঙালি শিশু কিশোরের চোখে।
শৈশবহারা বাংলা, চিরঘুমে কিংবদন্তি কার্টুনিস্ট নারায়ণ দেবনাথ
অধুনা বাংলাদেশের বিক্রমপুর থেকে এসে নারায়ণ দেবনাথের পরিবার বসবাস শুরু করেন হাওড়ার শিবপুরে। সেখানেই শিল্পীর জন্ম। বাড়িতে একাধিক স্বর্ণশিল্পী ছিলেন। অল্প বয়স থেকেই নানা রকম নকশা তাঁকে টানত। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন, গত শতকের চারের দশকে তিনি ভর্তি হন গর্ভমেন্ট আর্ট কলেজে। কিন্তু ডিগ্রি নেননি৷ শেষ বছরে এসে পড়া ছেড়ে দেন। এরপর একাধিক বিজ্ঞাপন সংস্থার হয়ে কাজ করেছেন তিনি।
দেব সাহিত্য কুটিরের কর্নধারদের উৎসাহে নারায়ণ দেবনাথ কমিকস তৈরি শুরু করেন। তাঁরা প্রথম কাজ সাদা কালোয়- হাঁদা ভোঁদা। একদম শুরুতে শুরুতে শিল্পী নিজেই হাঁদা ভোঁদায় অঙ্কন ও কালি বসানোর কাজ করতেন। পরবর্তীতে তা গ্রেস্কেলে প্রকাশ করার ব্যবস্থা করা হয়।
নারায়ণবাবুর প্রথম রঙিন কমিকস (comics) চরিত্র বাঁটুল দি গ্রেট। অকল্পনীয় জনপ্রিয় এই চরিত্রের আইডিয়া তাঁর মাথায় আসে আচমকাই, একদিন কলেজ স্ট্রিট থেকে ফেরার সময়। এমনটাই জানিয়েছেন স্রষ্টা।
কালের নিয়মে স্রষ্টারা ঘুমিয়ে পড়েন, বেঁচে থাকে তাঁর সৃষ্টিরা। বাঁচিয়ে রাখে আমাদের শৈশব। এই অন্ধকার সময়ে, ডিজিটাল বিকেলগুলোয়, ভার্চুয়াল সবুজকে মিথ্যে করে বেঁচে থাক হাঁদা ভোঁদা, নন্টে ফন্টেরা... শুকতারার পাতায়, ছোটদের মনে, বড়দের মনের ভেতর বাঁচিয়ে রাখা চিলেকোঠায়।