যমজ সন্তান প্রসব করেছিলেন । পরিবারে তখন খুশির হাওয়া । কিন্তু, মুহূর্তের মধ্যেই সব পাল্টে যায় । চিকিৎসকরা জানান, দুই সদ্যোজাত সুস্থ থাকলেও মায়ের অবস্থা সঙ্কটজনক । মায়ের শরীরে রক্তের প্রয়োজন । পরিস্থিতি আরও ভয়ঙ্কর হয়ে দাঁড়ায়, যখন একাধিক ব্লাড ব্যাঙ্ক থেকে শূন্য হাতে ফেরত আসতে হচ্ছিল পরিবারের লোকজনকে । এই পরিস্থিতিতে ত্রাতা রূপে পাশে দাঁড়ালেন দুই নারী । তাঁদের উদ্যোগেই প্রাণ ফিরে পান সুন্দরবনের (Sundarbans News) বাসন্তী থানার অন্তর্গত চুনাখালি পঞ্চায়েতের বগুলাখালি গ্রামের বাসিন্দা মীনা ।
জানা গিয়েছে, মীনাদেবীর স্বামী বিএসএফ-এ কর্মরত । কর্মসূত্রে তিনি রাজস্থানের জয়পুরে রয়েছে । স্ত্রীয়ের দুঃসময়ে কাছে থাকতে পারেননি তিনি । কিন্তু, পশ্চিমবঙ্গ শিশু সুরক্ষা কমিশনের চেয়ার পার্সন সুদেষ্ণা রায় ও বারুইপুর মহিলা থানার আইসি কাকলি ঘোষ কুন্ডু, দু'জনের তৎপরতায় শেষপর্যন্ত ক্যানিং ব্লাড ব্যাঙ্ক থেকে এক ইউনিট B+ রক্ত দিয়ে বাঁচানো হয় তাঁকে । এদিকে, এই ঘটনায় ক্ষোভ উগড়ে দিয়েছেন মীনা দেবীর পরিবারের লোকজন । এক আত্মীয় জানান, সরকারি হাসপাতালে রক্ত থাকতেও এতে নাজেহাল হতে হল তাঁদের । শেষ মুহূর্তে সুদেষ্ণা রায়,কাকলি ঘোষ কুন্ডুরা এগিয়ে না আসলে হয়তো বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারত । আরেক আত্মীয় বলছেন, "একজন বিএসএফ কর্মীর পরিবার যদি এমন সমস্যার সম্মুখীন হয়,তাহলে সাধারণ মানুষ যাবে কোথায় ?এর প্রতিকার হওয়া প্রয়োজন । সেইসঙ্গে রক্তদানের অনুরোধ জানিয়েছেন তাঁরা ।
জানা গিয়েছে, মঙ্গলবার দুপুরে প্রসব যন্ত্রণা শুরু হয় মীনাদেবীর । পরিবারে লোকজন তড়িঘড়ি তাঁকে ক্যানিং মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করেন । সন্ধ্যা ছটা নাগাদ মীনাদেবী যমজ সন্তানের জন্ম দেন । এরপরেই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, দুই সদ্যজাত সন্তান ভালে থাকলেও মায়ের অবস্থা সঙ্কটজনক । জরুরি ভিত্তিতে B+ রক্তের প্রয়োজন । এরপর পরিবারের লোকজন ক্যানিং ব্লাড ব্যাঙ্কে রক্তের জন্য একাধিকবার যোগাযোগ করেন । তাঁদের দাবি, ব্লাড ব্যাঙ্কে রক্ত মজুত নেই বলে জানিয়ে দেওয়া হয় । ক্রমে শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে শুরু করে মীনা দেবীর । পরিবারের লোকজন ডোনার পেলেও ক্যানিং মহকুমা হাসপাতালের ব্লাডব্যাঙ্কে টেকনিশিয়ানে অভাবে রক্ত নেওয়া যায়নি । বারুইপুর,পার্কসার্কাস এমনকি বিভিন্ন নার্সিংহোমে যোগাযোগ করেও সুরাহা মেলেনি ।
ঘটনা সম্পর্কে অবহিত হন স্থানীয় দুই যুবক বান্টী মুখোপাধ্যায় ও সুভাষচন্দ্র দাস । তাঁরা ঘটনার কথা জানান পশ্চিমবঙ্গ শিশু সুরক্ষা কমিশনের চেয়ার পার্সন সুদেষ্ণা রায়কে । তিনি তৎপরতার সঙ্গে বিষয়টি দেখেন । রাতেই বারুইপুর মহিলা থানার আইসি কাকলি ঘোষ কুন্ডু কে ঘটনার কথা জানিয়ে সুরাহার জন্য বলেন । এরপরেই ক্যানিং ব্লাড ব্যাঙ্কে কর্তব্যরত কর্মীর সঙ্গে কথা বলেন বারুইপুর মহিলা থানার আইসি । অবশেষে বেগতিক বুঝে ক্যানিং ব্লাড ব্যাঙ্ক থেকে এক ইউনিট B+ রক্ত দেওয়া হয় মীনা দেবীকে । দু'জনকেই ধন্যবাদ জানিয়েছেন রোগীর পরিবারের লোকজন । বর্তমানে মা ও সদ্যোজাত সুস্থ আছে বলে খবর ।