৫০০ মিটারের মধ্যে পুলিশ সুপারের দফতর। তার কয়েক হাত তফাতে কোতোয়ালি থানা। ওই এলাকায় রয়েছে জেলা জজের দফতরও। এই চৌহদ্দির মধ্যে থেকেই বুধবার সকালে উদ্ধার হয়েছে কৃষ্ণনগরের তরুণীর অর্ধদগ্ধ দেহ। কী করে মৃত্যু হল ওই তরুণীর ? পুলিশ যাই বলুক না কেন, ইতিমধ্যেই কৃষ্ণনগরের ঘটনায় সিবিআই তদন্তের দাবি তুলল বিজেপি। তার আগে এই ঘটনায় পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে প্রেমিককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
আরজি কর থেকে কৃষ্ণনগর। রাজ্যে পর পর নারী নির্যাতনের ঘটনা রুখতে ব্যর্থ রাজ্য। এদিন এই অভিযোগ করেছেন রাজ্য বিজেপির সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। তিনি জানিয়েছেন, বাংলায় আইন-শৃঙ্খলার অবনতির জন্য সরাসরি দায়ী মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সুকান্তর অভিযোগ, একজন মহিলা মুখ্যমন্ত্রী রাজ্যের মহিলাদের সুরক্ষিত রাখতে পারছেন না। বিজেপির দাবি, অবিলম্বে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পদত্যাগ কারা উচিত।
তাঁদের মেয়ের এই করুণ পরিণতির জন্য হবু জামাইকেই কাঠগড়ায় তুলেছে নির্যাতিতার পরিবার। পুলিশের কাছে মেয়েটির মায়ের অভিযোগ, মঙ্গলবার সন্ধ্যায় প্রেমিকার সঙ্গে পিৎজ্জা খেতে বেরিয়েছিলেন তাঁর মেয়ে। রাত বাড়তেও বাড়ি না ফেরায়, শুরু হয় খোঁজ। নির্যাতিতার মায়ের দাবি, রাতে ছেলেটির সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ হয়েছিল। মেয়ের মায়ের দাবি, ফোনে প্রথমবার তাঁকে জানানো হয়েছিল মেয়ে ঘুমোচ্ছে। পরের বার ফোন করলে গালিগালাজ করা হয়।
কোতয়ালি থানায় এই ঘটনায় গণধর্ষণের অভিযোগ জানিয়েছে নির্যাতিতার পরিবার। তার ভিত্তিতেই আটক করা হয়েছে অভিযুক্ত প্রেমিক ও তাঁর পরিবারকে। পুলিশ কিছু না বললেও, স্থানীয়দের দাবি, মেয়েটির সঙ্গে দীর্ঘদিনের সম্পর্ক ছিল এই যুবকের। এই যুবক ভিন রাজ্যে একটি হোটেলে কর্মরত। তাঁদের নাকি বিয়ে হওয়ার কথা ছিল। নির্যাতিতার পরিবারের অভিযোগ, প্রমাণ লোপাটের জন্য অ্যাসিড দিয়ে পুড়িয়ে তাঁদের মেয়ের মুখ বিকৃত করে দেওয়া হয়েছে। এমনকী জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে দেহের একাংশ।
কিন্তু এই অবস্থায় এমন পরিণতি কেন ? সেটাই ভাবাছে নদিয়ার জেলা পুলিশকে। বেশ কিছু সূত্র থেকে পুলিশ জানতে পেরেছে, সম্প্রতি দু জনের সম্পর্কে চিড় ধরেছিল। তার জেরেও এই পরিণতি সম্ভব বলেও মনে করছেন জেলা পুলিশের পদস্থ কর্তারা। খুনের ঘটনা স্পষ্ট হলেও, ধর্ষণ হয়েছে কীনা, তা এখনও স্পষ্ট নয় পুলিশের কাছে।
ইতিমধ্যেই কৃষ্ণনগরের ঘটনায় পথে নেমেছে নাগরিক সমাজ। এদিন কোতয়ালি থানার সামনে দীর্ঘক্ষণ প্রতিবাদও দেখানো হয়। কেন মেয়ের মা-কে থানায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়। এমনকী, ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে ময়না তদন্তের দাবি জানানো হয়। নাগরিক সমাজের অভিযোগ, রাজ্যের বাকি ঘটনার মতো কৃষ্ণনগরেও পরিবারের উপর চাপ দেওয়ার চেষ্টা করছে পুলিশ।
এরই মধ্যে ভাইরাল হল একটি ফেসবুক পোস্ট। যেখানে পোস্ট করা হয়েছে, তাঁর মৃত্যুর জন্য কেউ দায়ী নন। সুইসাইড নোটের কায়দায় এই লেখা পোস্ট করা হয়েছে মৃতার ফেসবুক থেকে। পুলিশের প্রশ্ন, ঘটনাস্থল থেকে যাঁর বিবস্ত্র, আধ পোড়া দেহ উদ্ধার হল, সে কী ভাবে এই পোস্ট করতে পারল ? ফরেন্সিকে পাঠানো হয়েছে, নির্যাতিতার ফোন। পুলিশের সন্দেহ, ঘটনার পর অভিযুক্ত এই পোস্ট করে থাকতে পারেন।