হাঁসখালির কিশোরীকে ধর্ষণ ও তার মৃত্যুর ঘটনায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মন্তব্য নিয়ে সোমবার সন্ধ্যে থেকে উত্তাল সোশ্যাল মিডিয়া। তবে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর মন্তব্য নিয়ে বেশ চোখে পড়ার মতো 'চুপ' বাংলার বুদ্ধিজীবী মহল। সোমবার সন্ধ্যের পর থেকে
হাঁসখালির ঘটনায় প্রতিক্রিয়া জানাতে দেখা গিয়েছে হাতে গোনা কয়েকজনকে। তাঁদের মধ্যে অন্যতম পরিচালক সৃজিত মুখোপাধ্যায়। মমতার বক্তব্যকে তিনি ‘অসংবেদনশীল’ এবং ‘আপত্তিকর’ বলে মন্তব্য করেছেন ফেসবুকে। সৃজিত লিখেছেন, ‘হাঁসখালির ধর্ষণের ঘটনায় মুখ্যমন্ত্রী যে ধরনের আপত্তিকর এবং অসংবেদনশীল মন্তব্য করেছেন, তা অভাবনীয়।’ পরিচালক লিখেছেন, তিনি ‘হতবাক এবং বাকরুদ্ধ’।
তবে রাজ্যের শাসক দলের ঘনিষ্ঠ শিল্পী, বুদ্ধিজীবীরা অনেকেই মুখ খোলেননি হাঁসখালি নিয়ে। অভিনেত্রী বিধায়ক জুন মালিয়া বগটুই কাণ্ডের মতোই এ ক্ষেত্রেও সাংবাদিকদের ফোন ধরেও প্রতিক্রিয়া দেননি।
মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সন লীনা গঙ্গোপাধ্যায় জানান, তিনি কলকাতার বাইরে। তাই মুখ্যমন্ত্রী কী বলেছেন সেটা তিনি জানেন না। নচিকেতা চক্রবর্তীর কাছে হাঁসখালির ঘটনায় প্রতিক্রিয়া চাওয়া হলে তিনি বলেন,“এটা কোন কেস?”
কবি সুবোধ সরকার স্পষ্টই বলে দিয়েছেন, বিষয়টা ভাল জানেন না তিনি। তাই কোনো প্রতিক্রিয়া দেবেন না। শিল্পী শুভাপ্রসন্নর অবশ্য বলেছেন "এটা জঘন্যতম একটা ঘটনা। প্রেম বা অ্যাফেয়ার্স থাকলে আমি কাউকে ধর্ষণ করে খুন করতে পারি না। অপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তি চাই"।
বিধায়ক রাজ চক্রবর্তী অভিনেতা পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়, কবি শ্রীজাত, কবির সুমনরা ঘটনার প্রেক্ষিতে কোনও প্রতিক্রিয়া দেননি এখনও।
সোমবারই বিশ্ববাংলা প্রাঙ্গণের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে হাঁসখালির ঘটনা প্রসঙ্গে মন্তব্য করেন মমতা। ঘটনাটি আদপেই ধর্ষণ কি না তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তিনি। বলেন, ‘‘আপনি রেপ বলবেন, না কি প্রেগনেন্ট বলবেন, না কি লাভ অ্যাফেয়ার বলবেন... না কি শরীরটা খারাপ ছিল, না কি কেউ ধরে মেরেছে? আমি পুলিশকে বলেছি ঘটনাটা কী? ... মেয়েটার না কি লভ অ্যাফেয়ার ছিল শুনেছি।’’ এর পাশাপাশি হাঁসখালির ওই ঘটনায় অভিযোগ জানাতে পাঁচ দিন দেরি হল কেন, তা নিয়েও সন্দেহ প্রকাশ করেন মমতা। তিনি বলেন, ‘‘মেয়েটি মারা গিয়েছে ৫ তারিখে। অভিযোগ জানানো হয়েছে ১০ তারিখ। যদি অভিযোগ থেকেই থাকে তবে ৫ দিন আগে অভিযোগ জানালেন না কেন?’’ মেয়েটির দেহ দাহ করার পর অভিযোগ জানানোয় পুলিশের তদন্তে সমস্যা হবে বলেও মন্তব্য করেন মুখ্যমন্ত্রী।
মমতার এই মন্তব্যের প্রতিবাদে সরব হয় বিরোধীরা। নেট মাধ্যমেও বিষয়টি নিয়ে সমালোচনা শুরু হয়। সোমবার রাতে সৃজিতের করা এই ফেসবুক পোস্ট নিয়েও বিতর্ক শুরু হয়েছে।