রসুন ছাড়া রান্না হয় না। অথচ সেই রসুন কিনতে গিয়ে আপনি বাজারের ব্যাগে করে বাড়ি বয়ে আনছেন বিপদ। শুনতে আশ্চর্য লাগলেও এটাই সত্যি। কোথাও একটু কম দামে রসুন পাওয়া যায় কি না এই খোঁজ করতে গিয়ে আপনি বাজার থেকে যে রসুন কিনে আনছেন তা আদতে চিনা রসুন। যা আপনার শরীরের জন্য খুবই ক্ষতিকর।
কী এই চিনা রসুন?
প্রধানত চিনের মাটিতে যে রসুন চাষ হয়, তাকে চিনা রসুন বলে। একটা সময় ভারত-সহ বিশ্বের নানা দেশ এই রসুন আমদানি করত। কিন্তু খাদ্যসুরক্ষা নিয়ামক সংস্থা FSSI-এর অভিযোগ এই রসুন শরীরের জন্য ক্ষতিকারক। আর তাই আজ থেকে দশ বছর আগে ভারতের বাজারে চিনা রসুন নিষিদ্ধ করেছিল কেন্দ্র।
কেন ক্ষতিকারক এই চিনা রসুন?
আসলে চিনের রসুনে খুব বেশি পরিমাণে পেস্টিসাইড রয়েছে। আর রসুনে অ্যালিসিন রয়েছে, যা শরীরের উপকার করে। কিন্তু চিনা রসুনে অতিরিক্ত রাসায়নিক থাকায় এই অ্যালিসিনের পরিমাণ কিছুটা কমে যায়। তাই রসুন খেলে শরীরে নানা ব্যধি বাসা বাঁধে। সেই কারণেই চিনা রসুনের উপর আমদানি ও রফতানি নিষিদ্ধ করা হয়েছিল।
কবে নিষিদ্ধ হয়েছিল?
চিনের কৃষকরা এই রসুন চাষে অতিরিক্ত মাত্রায় সার ও রাসায়নিক ব্যবহার করেন। ফলে চিনা রসুনে ক্যানসার সৃষ্টিকারী রাসায়নিকের উপস্থিতি লক্ষ্য করা গিয়েছে। সেই কারণে ২০১৪ সালে এই রসুনের আমদানি ও রফতানিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল ফুড সেফটি অ্যান্ড স্যান্ডার্ড অথরিটি অফ ইন্ডিয়া অর্থাৎ এফএসএসআই।
কী এই এফএসআই?
এই এফএসএসআই দেশের খাদ্য দ্রব্যের নিরাপত্তা ও গুণমান নিশ্চিত করে। কোনও খাদ্য দ্রব্যে ক্ষতিকর উপাদানের উপস্থিতি থাকলে তা এই সংস্থার ছাড়পত্র পায় না। আর এই সংস্থার পরীক্ষাতেই চিনা রসুনের গুণগত মান ডাহা ফেল হওয়ার কারণেই নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়।
এই চিনা রসুন খেলে কি কি ক্ষতি হতে পারে?
বিশেষজ্ঞদের মতে, চিনা রসুনে সীসা, ক্লোরিনের পাশাপাশি পাওয়া যায় মিথাইল ব্রোমাইড। এই রাসায়নিক পদার্থ শরীরের জন্য অত্যন্ত বিষাক্ত। যা দিনের পর দিন মানুষের শরীরে গেলে লিভার, কিডনি বিকল হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এমনকী স্বাভাবিক দৃষ্টিশক্তি পযর্ন্ত নষ্ট হতে পারে।
কোন পথে ঢুকছে রসুন?
রিপোর্ট বলছে, চিনের রসুন ভারত নিষিদ্ধ করার পর তা কখনই ভারতের বাজারে সরাসরি আমদানি করা সম্ভব নয়। সেই কারণেই নেপাল ও বাংলাদেশ হয়ে রসুন আনা হয় তা ভারতে।
কেন বেছে নেওয়া হয়েছে এই দুই দেশ?
আসলে নেপাল এবং বাংলাদেশে থেকে ভারতে রফতানি করা পণ্যের মধ্যে বেশ কিছু পণ্য রয়েছে যেগুলি শুল্ক-মুক্ত। আর এই তালিকায় রয়েছে রসুন। ফলে ভারতের বাজারে সহজেই নিয়ে আসা যাচ্ছে সাদা ধবধবে রং, বড় বড় কোয়া এই রসুন ।
কীভাবে চিনবেন বাজারে বিক্রি হওয়া রসুন চিনা রসুন নাকি ভারতীয় রসুন?
১. চিনা রসুন ভারতীয় রসুনের থেকে আকারে বেশ কিছুটা বড় হয়।
২. স্থানীয় রসুনের কোয়া ছোট এবং পাতলা। কিন্তু চিনা রসুন আকারে বেশ কিছুটা মোটা।
৩. চিনা রসুন দেখতে ধবধবে সাদা এবং বেশ চকচকে ও মসৃণ। সেখানে ভারতীয় রসুন বেশ হলদে এবং দাগছোপ যুক্ত।
৪. চিনা রসুনের গন্ধ তেমন তীব্র না। কিন্তু দেশি রসুনের গন্ধ বেশ ঝাঁঝালো।
৫. চিনা রসুনের খোসা ছাড়ানো খুবই সহজ। সেই তুলনায় স্থানীয় রসুনের খোলা ছাড়ানো বেশ কষ্টসাধ্য কারণ কিছুটা আঠালো।
কেন বাজার চিনা রসুনের বাড়বাড়ন্ত?
আসলে বর্তমানে বাজারে রসুনের মূল্য প্রায় ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকা কেজি। সেই জায়গায় চিনা রসুন বিক্রি হচ্ছে মাত্র ৩০০ টাকায়। ফলে কম দাম দেখে অনেকেই চিনা রসুনের দিকে অজান্তেই ঝুঁকছেন। আর লাভের আশায় বিক্রেতারাও চিনা রসুন বিক্রি করছেন ।