শরতের নীল ঝকঝকে আকাশ, কাশের ফুলের দোলা, কুমোরটুলির ব্যস্ততা, কিংবা পাড়ার মোড়ে প্যান্ডাল বাঁধার তোরজোর...সবেতেই যেন রয়েছে মায়ের আগমনী সুর । পুজোর প্রস্তুতি চলছে জোরকদমে । ওদিকে, সাজো সাজো রব ঝাড়গ্রামের চিল্কিগড় কনক দূর্গা মন্দিরেও। এবারও প্রথা মেনেই পুজো হবে এই ঐতিহ্যবাহী দুর্গা মন্দিরে । তবে জানেন কি, এই মন্দিরের মা দুর্গা কিন্তু দশভূজা নন । দেবী এখানে অশ্বারোহিণী চতুর্ভূজা । চারশো বছরেরও বেশি সময় ধরে পুজো হয়ে আসছে এখানে ।
ঝাড়গ্রাম শহর থেকে ১৪ কিলোমিটার দূরে জঙ্গল। পাশ দিয়ে বয়ে যাচ্ছে ডুলুং নদী । সেখানেই রয়েছে মায়ের মন্দির । চিল্কিগড়ের সামন্ত রাজা গোপীনাথ সিংহ স্বপ্নাদেশ পেয়ে রানির হাতের সোনার কাঁকন দিয়ে দেবী দুর্গার মূর্তি নির্মাণ করেছিলেন ও মন্দির স্থাপন করেছিলেন । তবে, এখানকার পুজোর নিয়মকানুন একেবারেই আলাদা । কখনও কোথাও শুনেছেন, মা দুর্গা নিজের ভোগ নিজের রাঁধেন ? ঝাড়গ্রামের কনকদুর্গা মন্দিরে কিন্তু সেরকমই হয়ে আসছে বছরের পর বছর ধরে ।
ষষ্ঠীর দিন সকালে রাজবাড়ি থেকে শোভাযাত্রা করে রাজবংশের প্রতিনিধি রাজপরিবারের খড়্গ এবং পূর্ণঘট মন্দিরে নিয়ে আসেন। পুজোর ক'দিন মন্দিরে রাখা খড়্গটিকে রাজদণ্ডের প্রতীক হিসেবে মানা হয়। দুর্গাষ্টমীতে হয় পাঁঠাবলি। লোকবিশ্বাস এই বলির মাংস মা-ই রাঁধেন । জানা গিয়েছে, বলি দেওয়ার পর মাংস এনে মশলার সঙ্গে মিশিয়ে তিনটি কাঠ জ্বেলে, তা একটি ঘরে বন্ধ করে দেওয়া হত । পরের দিন ওই বন্ধ ঘর থেকেই রান্না করা পাঁঠার মাংস বের করে আনেন পুরোহিতরা । এই ভোগ 'বিরাম ভোগ' নামে জনপ্রিয় গোটা ঝাড়গ্রামে। নবমীতে হত নরবলি। তবে সেই প্রথা এখন উঠে গিয়েছে । তার বদলে হয় মোষ বলি ।
এছাড়া মা-কে ভোগে আমিষ পদ দেওয়ার রীতি আছে । ভোগে থাকে হাঁসের ডিম ও মাছ । দশমীতে পান্তাভাত, শাকভাজা ও মাছপোড়া দেওয়া হয় মাকে । যুগ যুগ ধরে সেঅ প্রথাই চলে আসছে । প্রত্যেক বছরই দূর থেকে বহু ভক্তের সমাগম হয় এখানকার দুর্গাপুজোয় । এবার আরও বেশি ভিড়ের আশঙ্কা করা হচ্ছে ।