JU Student death:'পলাতক নই, তদন্তের মুখোমুখি হতে প্রস্তুত' ফেসবুক পোস্টে জানালেন প্রাক্তন ছাত্রনেতা 'আলু'

Updated : Aug 22, 2023 11:39
|
Editorji News Desk

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র মৃত্যুর ঘটনায় এবার মুখ খুললেন প্রাক্তন ছাত্রনেতা অরিত্র মজুমদার ওরফে আলু। পুলিশের কাছে তাঁর নামে কোনও অভিযোগ না দায়ের হলেও সমাজ মাধ্যম সহ একাধিক সংবাদমাধ্যমে অরিত্রর নাম নিয়ে জোর চর্চা শুরু হয়। জল্পনা ওঠে, ঘটনার পর তিনি নাকি ভিনরাজ্যে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন। মঙ্গলবার সকালে সোশ্য়াল মিডিয়ায় দীর্ঘ পোস্ট করে মৌনতা ভাঙলেন ইঞ্জিয়ারিং বিভাগের ওই পড়ুয়া। তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করে স্পষ্ট জানালেন, ছাত্র মৃত্যুর ঘটনার সঙ্গে কোনওভাবেই জড়িত নন তিনি। তবে নিজের মুখেই স্বীকার করেছেন, ঘটনায় নিজের ব্যর্থতার দায়ও এড়াতে পারছেন না। 

সোশ্যাল মিডিয়ায় করা ওই পোস্টে অরিত্র জানিয়েছেন, ১০ অগাস্ট কলকাতা থেকে কাশ্মীরের উদ্দেশে রওনা হন। সেদিন সকালে শেষ বারের মতো কলেজ ক্যাম্পাসে গিয়েছিলেন। কাশ্মীরের গ্রেট লেকস ট্রেকিংয়ের উদ্দেশেই কাশ্মীর গিয়েছিলেন তিনি। পাশাপাশি এটাও জানিয়েছেন, এই পরিকল্পনা আগে থেকেই করা ছিল। তার সপক্ষে ট্রেন ও বিমানের টিকিটের ছবিও পোস্ট করেছেন। 

তবে কলকাতায় খুব শীঘ্রই তিনি ফিরবেন বলে পোস্টে জানিয়েছেন। থাকবেন বাঁশদ্রোণীর ফ্ল্যাটে। পাশাপাশি পুলিশ ডাকলে যেকোনও তদন্তের মুখোমুখি হতেও রাজি আছেন তিনি। ট্রেকিংয়ে যাওয়ার বিষয়টি রিসার্চ গাইডকে আগে থেকেই জানিয়ে রেখেছিলেন। তারপরেও পলাতক বলে প্রচার করায় একপ্রকার ক্ষুব্ধ অরিত্র।

Read More- যাদবপুর-কাণ্ডে নয়া মোড়, ধৃতদের মোবাইল থেকে উদ্ধার সব তথ্য, কী বলছেন তদন্তকারীরা ?

ওই পোস্টে অরিত্র লিখেছেন, 

"আমি অরিত্র মজুমদার। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্টে গবেষণারত। সম্প্রতি যাদবপুর মেন হোস্টেলে একজন ছাত্রের অত্যন্ত মর্মান্তিক মৃত্যুর ঘটনায় নানা মিডিয়ায় এবং সামাজিক মাধ্যমে আমার নামে বেশ কিছু অভিযোগ, প্রশ্ন ও মন্তব্য উঠে এসেছে। কলকাতার বাইরে, বলা ভালো, নেটওয়ার্ক সীমার বাইরে থাকায় সেই কথাগুলো আমার কাছে এতদিন পৌঁছয়নি। পৌঁছলে আগেই উত্তর দিতাম। আমার অনুপস্থিতিতে সন্দেহ-অভিযোগগুলো অতিকায় আকার ধারণ করেছে। ফলে, কয়েকটা কথা লেখার প্রয়োজন হয়ে পড়ল। যে-মানসিক অবস্থায় আছি, তাতে কতখানি গুছিয়ে লিখতে পারব জানা নেই। সাধ্যমতো চেষ্টা করছি। 

ফেসবুকে ও মিডিয়ায় আমাকে ঘিরে যা-যা অভিযোগ ও মন্তব্য গোচরে এলো, তা মোটামুটি দু'রকম। এক, ৯ আগস্ট গভীর রাতে যাদবপুর মেন হোস্টেলে যে মর্মান্তিক ছাত্রমৃত্যুর ঘটনা (শুনলাম, মৃত ছাত্রটি নাবালক; তাই তাঁর নামোল্লেখ করছি না) ঘটেছে, সেখানে কোনও একভাবে আমি জড়িত। কিভাবে জড়িত? না, কেউই সরাসরি ছেলেটির ওপরে ঘটা র‍্যাগিং বা নির্যাতনের সঙ্গে আমার নাম জড়াননি। বা জড়ালেও অন্তত আমার গোচরে আসেনি। কিন্তু, একাধিক ব্যক্তির দাবী ও বড় অংশ মিডিয়ায় উঠে এসেছে, আমি নাকি ওইদিন যাদবপুর মেন হোস্টেলে উপস্থিত ছিলাম। এবং, আমার উপস্থিতিতে মৃত্যু-পরবর্তী প্রমাণ লোপাট করা হয়েছে।  

এই অভিযোগের উত্তরে জানাই, ৯ আগস্ট রাতে আমি যাদবপুরের মেন হোস্টেলে ঢুকিইনি। এমনকি, তার আগের বেশ কিছুকাল আমি হোস্টেলে যাইওনি। আমি সেই রাতে কেপিসি হাসপাতালেও গিয়ে উঠতে পারিনি। ফলে, গোটা অভিযোগটাই অবান্তর। আশা করি, তদন্ত করলে এই কথা সহজেই প্রমাণ হবে।   

এরপর দ্বিতীয় অভিযোগ। আমি নাকি এই ঘটনার পর থেকে পলাতক। এমনকি, কেউ কেউ লিখেছেন, লিখে চলেছেন, রাজ্যের শাসকদলের কোনও এক প্রভাবশালী নেতার ছত্রছায়ায় আমি লুকিয়ে আছি। এই অভিযোগ অভাবনীয়। আমার ও আমার পরিবারের দিক থেকে দেখলে বীভৎসও বটে।   

প্রশ্ন হল, আমি এতদিন কোথায় ছিলাম? ১০ আগস্ট, বৃহস্পতিবার, আমি রাজধানী এক্সপ্রেসে নয়া দিল্লির উদ্দেশ‍্যে রওনা দিয়েছিলাম। সেখান থেকে পরের দিন শ্রীনগরগামী ফ্লাইট ধরি। আমাদের গন্তব্য ছিল কাশ্মীর গ্রেট লেকস। এই ট্রেকে আমার সঙ্গে আরও অনেকেই ছিলেন। এবং, যাঁরা এই ট্রেকিং রুটের ব্যাপারে অবহিত, তাঁরা জানেন, এখানে নেটওয়ার্কের বালাই নেই। প্রায় চারমাস আগেই (২২ ও ২৩ এপ্রিল) টিকিট কাটা হয়েছিল ট্রেন ও ফ্লাইটের। সেসবও নেওয়া হয়েছিল যাওয়ার আগে। এই সব নথিই আপনাদের সামনে থাকল। কোনওদিন ভাবিওনি, এভাবে ব্যক্তিগত নথি ও প্রমাণ দেখিয়ে আত্মপক্ষ সমর্থন করতে হবে। সে যাহোক। 

১০ আগস্ট, ট্রেন ধরার আগে, সকালে আমি যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে যাই। যাঁরা সেই রাতের ঘটনার পরেই আমার ফেরার হওয়া নিয়ে প্রচার করছেন, তাঁদের অনেকের সঙ্গে দেখাও হয়েছিল সেদিন। আমি ট্রেকে যাব, সে কথা আমার রিসার্চ গাইডকে আগেই জানিয়েছিলাম। তিনি সম্ভবত তা সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েওছেন। কোনও এক ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় আমার বাবাও একই কথা বলেছেন শুনলাম। আমার সতীর্থ ও বন্ধুরাও নানা জায়গায় এই কথা বলে থাকতে পারেন। কিন্তু, তারপরেও আমাকে নিয়ে ফেসবুকে ও মিডিয়ায় টানা 'পলাতক' প্রচার চলেছে। আমার পরিচিত অনেকে এই কথা লিখে গেছেন প্রায় নিঃসঙ্কোচে। যেন তারা নিশ্চিত। একাধিক প্রিন্ট মিডিয়া ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় আমার নাম ও ডাকনাম (আলু) ধরে বিচারসভা বসানো হয়েছে। একাধিক সাংবাদিক ফেসবুকের ব্যক্তিগত পোস্টেও এই মত প্রচার করেছেন। সব মিলিয়ে, একটা 'সত্য' গড়ে-পিটে নেওয়া হয়েছে-- আমি র‍্যাগিং ও ছাত্রমৃত্যুর সঙ্গে যুক্ত। সেই রাতে  প্রমাণ লোপাট করেছি এবং তারপর পালিয়ে গা ঢাকা দিয়েছি। 

যাঁরা এই কদিন ফেসবুকে ও মিডিয়ায় টক শো-তে আমাকে নিয়ে এই অভিযোগ ও প্রচারে অংশ নিলেন, তাঁদের অনেকের সঙ্গেই আমি মিছিলে হেঁটেছি। কারও কারও সঙ্গে রাজনৈতিক মতান্তর থাকলেও একসঙ্গে হাতে-হাত ধরে ফ্যাসিস্ট শক্তির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছি। কোভিডের সময় একে-অন্যের প্রয়োজনে রাজনৈতিক মতপার্থক্য মনেও রাখিনি। তাঁরা, এরপরেও এই প্রচারের অংশ হলেন। ফেসবুকে বা হোয়াটস্যাপে কীভাবে গুজব ও ভুয়ো খবর ছড়িয়ে পড়ে, তা শুনেছিলাম। কিন্তু, মিডিয়াও যে এভাবে অতি যত্নে, কাল্পনিক ভিলেন খাড়া করার জন্য এভাবে অসত্য খবর ছড়াতে পারে, তা ভাবিনি। হয়ত নিজের সঙ্গে এমনটা না ঘটলে বিশ্বাসও করতাম না। 

একজন ছাত্রের মৃত্যু গিলে নেওয়া যায় না। তার অভিঘাত মারাত্মক। এই ঘটনায় যুক্ত প্রকৃত দোষীদের শাস্তি হোক, সেটা চাই। চাই, ঘটনার যথাযথ তদন্ত হোক। এই ঘটনায় বা সামগ্রিকভাবে র‍্যাগিং-এর সঙ্গে কোনওভাবে যুক্ত না থাকলেও মনে করি, আমার একজাতের ব্যর্থতা এখানে রয়েছে। ক্যাম্পাসকে র‍্যাগিং-মুক্ত রাখার নৈতিক ও রাজনৈতিক দায় আমারও ছিল। তা যে করতে পারিনি, সেটা স্পষ্ট। তাই, এই ঘটনার পরপরই সমষ্টিগতভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম, এর দায় প্রকাশ্যে স্বীকার করে নেওয়া উচিত। আমি যে রাজনৈতিক চলাচলের অংশ, সেখান থেকে এই মর্মে বয়ান পরে ফেসবুকে পোস্টও করা হয়। সেই লিখিত বয়ানে আমার নাম যুক্ত করার অনুমতি আমি আগেই দিয়ে রেখেছিলাম। কারণ, ওই পোস্ট যখন যাচ্ছে, ততক্ষণে আমি নেটওয়ার্ক সীমার বাইরে চলে গেছি। ঐ পোস্টে ঘোষণাও করা হয়েছিল, ছাত্রছাত্রী সংসদের 'সভাপতি' পদ থেকে এতদ্দ্বারা আমি পদত‍্যাগ করছি। 

আজ মনে হচ্ছে, আমার সেদিন কলকাতা ছাড়া উচিত হয়নি। এই ঘটনায় আমি মানসিকভাবে কতখানি আহত, অন্তত তা প্রমাণ করার জন্য আমার থেকে যাওয়া উচিত ছিল এটাও মনে হচ্ছে। অস্বীকার করব না, পরিস্থিতি এদিকে বাঁক নিতে পারে, সেটা আন্দাজ করতে পারিনি। এতদিন আগে থেকে অনেকের সাথে মিলে করা পরিকল্পনা শেষ মূহুর্তে বাতিল করতে পারিনি, সেও হয়ত আমারই ভুল। অন্তত এখন সেটাই মনে হচ্ছে। কলকাতা ছাড়ার পরেও যে অল্প ক'দিন নেটওয়ার্ক সীমায় ছিলাম, তখন এই প্রচার এতটা তীব্রভাবে মাথা চাড়া দেয়নি। নাহলে, এতদিনের নৈঃশব্দ রাখতাম না। আমার মা-বাবা, পরিজন, বন্ধু, শুভাকাঙ্ক্ষী, সতীর্থদেরও এই ভয়াবহ অসম্মান ও মানসিক নির্যাতনের মধ্যে দিয়ে যেতে হত না। 

আমি ভাবতেই পারছি না, এমন তথ্য ও কল্পনার উৎস কোথায়? কেন সামান্য যাচাই না করে এই বীভৎস অভিযোগ দিনের পর দিন প্রচার করা হল? একটা মর্মান্তিক মৃত্যুর অভিঘাতে জন্ম নেওয়া ক্ষোভ থেকে এমন অসত্য প্রচার করা যায় নাকি? জানি না। 

আইনী প্রক্রিয়ায় এর যথাসম্ভব বিহিত আমি চাইব নিশ্চয়ই। কিন্তু, গোটা প্রচারের বহর দেখে আমি ক্লান্ত ও বিধ্বস্ত হয়ে পড়ছি। কতজনের বিরুদ্ধে, কতগুলো অংশের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করব! আইনি পথে যাই করি না কেন, এই গোটা ঘটনায় আমার ওপর দিয়ে যা গেল, যা যাচ্ছে, যে সম্মানহানির মুখোমুখি আমাকে হতে হচ্ছে-- তার সুরাহা হবে? সংবেদনশীল ও শুভানুধ্যায়ী মানুষদের কাছে বিনীত অনুরোধ, একটু ভেবে দেখবেন, এটা নির্যাতন নয়?

যাহোক, যে-কোনও তদন্তের মুখোমুখি হতে আমি রাজি। কলকাতায় ফিরে আসছি। বাঁশদ্রোণীতে আমার ফ্ল‍্যাটেই আমাকে পাওয়া যাবে। স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষভাবে গোটা ঘটনার তদন্ত সুসম্পন্ন হোক। প্রকৃত দোষীরা শাস্তি পাক। যাদবপুর হোস্টেল ও ক্যাম্পাস র‍্যাগিং-মুক্ত হোক।"

Jadavpur Student death

Recommended For You

editorji | লোকাল

West Bengal Weather Update: ডিসেম্বরে উধাও শীত, নিম্নচাপের জেরে সপ্তাহান্তে বৃষ্টি, বড়দিন কি মাটি?

editorji | লোকাল

West Bengal Weather Update: শীতের আমেজ কার্যত গায়েব, চোখ রাঙাচ্ছে নিম্নচাপ, বড়দিনের ছুটিতে বৃষ্টি?

editorji | লোকাল

Tarapith Mandir: তারাপীঠ মন্দির দর্শনের নতুন নিয়ম চালু, না জানলে বিপদে পড়বেন আপনি

editorji | লোকাল

Firhad Hakim: ফিরহাদের বিতর্কিত মন্তব্য! সমর্থন নয়, জানাল তৃণমূল কংগ্রেস

editorji | লোকাল

Krishnanagar Bori Gram : নদিয়ার বড়িগ্রাম, শীত এলে আজও গাঁয়ের মেয়ে-বউরা যত্ন করে বড়ি দেন