কোন পথে কৃষ্ণনগরের মৃত্যু তদন্ত। ঘটনার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই তরুণী খুনে অভিযুক্ত প্রেমিক রাহুল বসুকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। পুলিশের ভূমিকা নিয়ে সন্তুষ্ঠ নয় নির্যাতিতার পরিবার। তাঁদের অভিযোগ, এই ঘটনায় একজন নয়, জড়িত অনেকেই। তাই পুলিশের উপর অনাস্থা দেখিয়ে কৃষ্ণনগর হত্যা রহস্যের তদন্তে এবার সিবিআই তদন্তের দাবি তুলল খোদ পরিবার। ইতিমধ্যেই এই ঘটনায় একটি ফেসবুকের পোস্টকে ঘিরে তৈরি হয়েছে চাঞ্চল্য। নির্যাতিতার অ্যাকাউন্ট থেকে পোস্ট করা হয়েছে, তাঁর মৃত্যুর জন্য কেউ দায়ী নয়। যদিও নির্যাতিতার মা এই তত্ত্ব মানতে নারাজ। তাঁর দাবি, তাঁর মেয়ে আত্মহত্যা করতে পারেন না। কারণ, তাঁর মেয়ে ভীষণই সাহসী। নির্যাতিতার পরিবারের স্পষ্ট দাবি, তাঁদের মেয়েকে গণধর্ষণ করে খুন করে তথ্য প্রমাণ লোপাটের জন্য অ্যাসিড দিয়ে পুড়িয়ে মারা হয়েছে। আর এর পিছনে রয়েছে রাহুল বসু ও তার গ্যাং।
কৃষ্ণনগর জেলার পুলিশ সুপার কে অমরনাথ জানিয়েছেন, নিহত তরুণীর সঙ্গে গ্রেফতার যুবক রাহুল বসুর গত চার মাস ধরে সম্পর্ক ছিল। কী ভাবে তাঁদের আলাপ এবং পরিচয়, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তবে, মনে করা হচ্ছে বন্ধুদের মারফতই তাঁদের আলাপ হয়েছিল। তবে, এই ঘটনার পিছনে একটা টাকার লেনদেন রয়েছে বলে প্রাথমিক ভাবে দাবি করেছে পুলিশ। তবে তা কত টাকা, তা এখনও স্পষ্ট নয়।
জেলা পুলিশের সন্দেহ, এই টাকার লেনদেন জন্যই কী তরুণীকে নৃশংস ভাবে খুন করা হয়েছে কীনা, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ওই সূত্রে জানা গিয়েছে, গ্রেফতার রাহুল বসু ভিন রাজ্যে একটি হোটেলের কর্মী। যদিও রাহুলের ফেসবুক খতিয়ে দেখা যাচ্ছে, নিজেকে স্ফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়র বলেই দাবি করেছেন রাহুল। চাকরি করেন দুবাইয়ে। এই দিকটিও খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারীরা।
তবে, চার মাসের সম্পর্কে টাকার লেনদেন কেন প্রয়োজন হল, সেটাই এই তদন্তে বেশি ভাবচ্ছে তদন্তকারীদের। জেলা পুলিশ এরজন্য আরও দু জনকে আটক করেছে। তাদের মধ্যেও এক তরুণী রয়েছেন। এই ঘটনায় জড়িত সন্দেহে তাদেরও টানা জেরা করা হচ্ছে। একটা বিষয় পরিস্কার, বুধবার যে জায়গা থেকে নির্যাতিতার দেহ উদ্ধার হয়েছে, অপরাধ সেখানে হয়নি। পুলিশ সুপার কে অমরনাথের দাবি, ঠিক কোথা থেকে দেহ এনে এখানে ফেলা হয়েছিল, তা খতিয়ে দেখছেন ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞরা।
আরজি কর আবহে ফের রাজ্যে তরুণকে গণধর্ষণ করে খুনের অভিযোগ। জয়নগর থেকে কৃষ্ণনগর গত কয়েক মাসে বাংলার নানা প্রান্ত থেকে উঠে এসেছে নারী নির্যাতনের খবর। যার প্রতিবাদে এখন নাগরিক সমাজ। এই পরিস্থিতিতে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পদত্যাগ দাবি করেছেন রাজ্য বিজেপির সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। তাঁর অভিযোগ, মহিলা মুখ্যমন্ত্রী হয়ে রাজ্যের মহিলাদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কৃষ্ণনগরের ঘটনায় কোনও রাজনীতি নেই। এটা প্রেম ঘটিত ব্যক্তিগত বিষয় বলেই পাল্টা দাবি করেছেন তৃণমূলের রাজ্য সম্পাদক কুণাল ঘোষ।
সবমিলিয়ে কৃষ্ণনগরের ঘটনাতেও তদন্তের গতি প্রকৃতি নিয়ে বাড়ছে সাধারণ মানুষের ক্ষোভ। মূলত তাঁদের ক্ষোভ পুলিশের বিরুদ্ধেই। অভিযোগ, এই মামলাতেও পুলিশ তদন্তকে ঢিলে করে দিচ্ছি। আর এই কারণে পরিবারের পাশে দাঁড়িয়ে তরুণী হত্যার ঘটনায় সিবিআই তদন্ত চাইছে কৃষ্ণনগর।