দুর্গাপুজো লক্ষ্মীপুজোর পর দীপাবলির জন্য অপেক্ষা শুরু হয়। আর এই উৎসব আলোর। ভালোর। চারিদিক সেজে ওঠে রোশনাই-তে। আলোর উৎসব কালীপুজো বাঙালির প্রাণের উৎসব। কার্তিকের অমাবস্যা তিথিতে দেবী কালী রূপের আরাধনায় মাতে গোটা বাংলা। গোটা রাত ধরে চলে দেবীর পুজো। আলোর মালায় সেজে ওঠে ঘর-বাড়ি। সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চলে আতসবাজির খেলা।
কবে কালী পুজো?
নিয়ম মতে, অমাবস্যা তিথি অনুযায়ী আগামী ৩১ অক্টোবর বৃহস্পতিবার কালীপুজো। ওই দিন দুপুর ৩ টে ০৭ মিনিট ৪২ সেকেন্ডে অমাবস্যা পড়বে। আর অমাবস্যার তিথি শেষ হবে পরের দিন শুক্রবার অর্থাৎ ১ নভেম্বর সন্ধে ৫ টা ০৮ মিনিট ০৭ সেকেন্ডে। ফলে ৩১ অক্টোবর বৃহস্পতিবার কালীপুজো। যদিও কালীপুজো বৃহস্পতিবার হলেও দিপাবলী শুক্রবার অর্থাৎ ১ নভেম্বর।
দীপাবলি আলোর উৎসব:
‘দীপাবলি’ শব্দের মধ্যেই রয়েছে ‘দীপ’ কথাটিও। দীপান্বিতা অমাবস্যায় এই পুজো করা হয়। এছাড়াও এর এক বৈজ্ঞানিক ভিত্তিও রয়েছে। কালীপুজো আসলে ঋতু বদলের সময়। এই সময় পোকামাকড়ের উপদ্রব বেড়ে যায়। এই পোকামাকড়ের হাত থেকে রেহাই পেতেই আলো জ্বালা হয়। এমনকি কালীপুজোয় বাজি পোড়ানো হয় কীটপতঙ্গের উপদ্রব কমানোর কারণেই।
মোম কারখানায় শেষ মুহূর্তের ব্যস্ততা:
১৪ প্রদীপ, রঙ্গোলি সেজে ওঠে মোমে, প্রদীপে। কালীপুজোর আগে তাই দিন রাত এক করে পশ্চিম বর্ধমান জেলার কাঁকসা ডাকবাংলোর কারখানায় চলছে মোম তৈরির কাজ। গত কয়েকবছরে চাহিদা বেড়েছে রকমারি মোমের। রঙিন মোম, সেন্টেড গত কয়েক বছরে বিক্রি হয়েছে রেকর্ড হারে।
এই মুহূর্তে তাই শেষ মুহূর্তের ব্যস্ততা চলছে পশ্চিম বর্ধমান জেলার কাঁকসা ডাকবাংলোর মোম কারখানায়। এলাকার মহিলারা এই মোমবাতি তৈরি করে থাকেন। ১০০ দিনের কাজ বন্ধ হওয়ার পর, এই মোম কারখানা তাঁদের রুজিরুটি ফিরিয়েছে বলেও জানান তাঁরা। ৪ ইঞ্চি থেকে শুরু করে ৫ ফুট পর্যন্ত মোমবাতি তৈরি হচ্ছে কারখানায়।
আতসবাজিতে পুড়ছে হাত:
কালী পুজো মানেই আতসবাজি, মোম, দীপ জ্বালানো। অন্ধকার ঘুচিয়ে এদিন ঘরে ঘরে জ্বলে ওঠে আলো। কিন্তু দীপাবলির আগেই ১৫% দাম বাড়ছে আতসবাজির। ওষুধ, সবজি, চাল , তেল নিত্যপ্রয়োজনীয় সমস্ত জিনিসের দাম বেড়েছে হুহু করে। এই আবহেই বাজি ব্যবসায়ীরা জানাচ্ছেন অন্যান্যবারের থেকে বেশি দামে কিনতে হবে আতসবাজি।
আলোর উৎসব ফিকে হতে পারে অত্যাধিক বাজির দামে, এই আশঙ্কা করছেন খোদ বাজি ব্যবসায়ীরাই। তাঁরা জানাচ্চেছন, এবছর শিবকাশিতে তৈরি হওয়া বাজির দাম বাড়তে চলেছে। এর প্রধান কারণ হিসেবে তাঁরা জানাচ্ছেন, কাঁচা মালের দাম বেড়েছে বাজি প্রস্তুতের। এছাড়াও গত কয়েকদিন থেকেই আবহাওয়া ছিল তুমুল খারাপ, এর জেরে বাজি তৈরি করার পরেও নষ্ট হয়েছে। সঙ্গে হাইভোল্টেজ লোকসভা নির্বাচন ছিল এবার। এসব কারণে বাজির দাম অন্যান্যবারের তুলনায় এবার অনেকটাই বাড়বে বলে আশঙ্কা।
চিন্তায় বাজি ব্যবসায়ীরা:
দীপাবলির এখনও দিন কয়েক বাকি রয়েছে। এরমধ্যে, আগামী ২৫ তারিখ থেকে ময়দানে বাজির দোকান দেওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। যা শুরু হতে হতে, মোটামুটি ২৭ তারিখ হয়েই যাবে। এর মাঝেই, চোখ রাঙাচ্ছে ঘূর্ণিঝড় ‘দানা’ । আর এতেই কার্যত ঘুম উড়েছে বাজি ব্যবসায়ীদের। শেষ সময় বাজি রোদে দেওয়া থেকে, পরীক্ষা করা সবকিছুর জন্যই দরকার রোদের। কিন্তু হাওয়া অফিস বলেছে আগামী কয়েকদিন রোদের দেখা তো মিলবেই না, উল্টে দুর্যোগের কালো মেঘে ঢাকবে বাংলার আকাশ। আর এই ছাপ সরাসরি পড়বে দীপাবলির বাজারে, এমনটাই আশঙ্কা ব্যবসায়ীদের।