শনিবার সকালেও জলমগ্ন ঘাটালের বিস্তীর্ণ এলাকা। গৃহবন্দী মানুষ। চরম দুর্ভোগে পাঁশকুড়া, উদয়নারায়ণপুর-সহ দক্ষিণবঙ্গের বিস্তীর্ণ এলাকা। বিদ্যুতের খুঁটি, হাইটেনশন তার, সবই জলের তলায়। জলের স্তর এতটাই উঠেছে, কোথাও কোথাও কোনও বহুতলের দোতলাও জলবন্দী।
পরিস্থিতি এতটাই ভয়াবহ, যে এক বাড়ি থেকে অন্য বাড়ি সাঁতার কেটে যেতে হচ্ছে। নৌকো বেঁধে রাখতে হচ্ছে বাড়িতে। ঘাটাল থানার সামনে একবুক জল। অভিযোগ জানাতেও নৌকো করে থানায় যেতে হচ্ছে। শুধু ঘাটাল, উদয়নারায়ণপুর নয়, হুগলির খানাকূল, বাঁকুড়া সোনামুখীতেও বন্যা পরিস্থিতিতে দুর্ভোগ বাড়ছে।
পূর্ব মেদিনীপুরের পাঁশকুড়াতেও বন্যা পরিস্থিতি। পাঁশকুড়ার ১৮টি ওয়ার্ড জলমগ্ন। স্টেশন চত্বরেও জয়। জাতীয় সড়কেও জল থইথই করছে। বাাড়ি-জমি সব জলের তলায় ডুবেছে। আরামবাগ ও পুরশুড়ার ত্রানশিবিরে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে অনেক মানুষকে। একাধিক এলাকা বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন। মোবাইল নেটওয়ার্কও পাওয়া যাচ্ছে না। হাওড়া-হুগলির বিস্তীর্ণ এলাকা জলের নিচে।
ডিভিসির ছাড়া জলে নতুন করে প্লাবিত খানাকূল ১ নম্বর ব্লকের ২৪টি পঞ্চায়েত এলাকা। বিঘের পর বিঘে জমির ফসল নষ্ট হয়ে যাওয়ায় মাথায় হাত কৃষকদেররও। খানাকূল ২ নম্বর ব্লকের মারোখানা, পানশিউলি, পলাশপাই, জগৎপুর, নন্দনপুর, রাজহাটি গ্রামের বাসিন্দারাও চরম দুর্ভোগে দিন কাটাচ্ছেন। বাড়ির ছাদে আশ্রয় নিয়েছেন বাসিন্দারা।
রাজ্যের বন্যা পরিস্থিতির কথা বিশদে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে চিঠি লেখেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দামোদর ভ্যালি কর্পোরেশনের বিরুদ্ধে একগুচ্ছ অভিযোগও তোলেন তিনি। সেই চিঠির পাল্টা চিঠি দিয়েছে জলশক্তি মন্ত্রকও। চিঠিতে জল শক্তি মন্ত্রী সি আর পাতিল জানিয়েছেন, ডিভিসির মাধ্যমে মাইথন আর পাঞ্চেত পরিচালিত হয়। এই কমিটিতে জল কমিশন, পশ্চিমবঙ্গ, ঝাড়খণ্ডের রাজ্য সরকারের প্রতিনিধিরা আছেন। আলোচনা করেই জল ছাড়া হয়েছিল। তিনি চিঠিতে লেখেন, "বাঁধ বিপর্যয়ের ফলে দক্ষিণবঙ্গকে সম্ভাব্য বিপদের হাত থেকে বাঁচাতে বাঁধ দুটি থেকে জল ছাড়ার পরিমাণ বৃদ্ধি করা ছাড়া কোনও উপায় ছিল না।" পাশাপাশি কেন্দ্রীয় মন্ত্রক জানিয়েছে, দক্ষিণবঙ্গে বন্যা পরিস্থিতি মাত্রাছাড়া যাতে না হয়, তার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে।
এই নিয়ে রাজ্যকে কটাক্ষ করেছেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি লিখে তিনি দাবি করেন, DVC-এর উপর দায় না চাপিয়ে নিজের দায়িত্ব পালন করুন।