জামাই ষষ্ঠী বলে কথা। এই একটা দিন জামাইদের আদরে কোনও খামতি থাকা চলবে না। আসনে বাবু হয়ে জামাই বসবে, আর তাঁর সামনে পাত সাজানো থাকবে ইলিশ, চিংড়ি, পাঁঠার মাংস থেকে শুরু করে মিষ্টি দই, রকমারি মিষ্টিতে, বাঙালির ঘরে ঘরে দিনটায় কোনও কার্পণ্য করা হয় না। সারাবছর সব পাওয়া গেলেও জামাইয়ের পাতে ভাল ইলিশ পড়বে তো, এখন এই চিন্তাই ঘুরছে শ্বশুর মশাইদের মাথায়। কত দাম যাচ্ছে বাজারে? কী কী পদ বানিয়ে হাসি ফোটাতে পারেন জামাইয়ের মুখে, কিংবা ভাল ইলিশ চিনবেন কী ভাবে?
জামাই ষষ্ঠীতে ইলিশ কেনার আগে, জেনে রাখুন ইলিশের খুঁটিনাটি।
এখন দক্ষিণবঙ্গ কার্যত পুড়ছে তীব্র তাপপ্রবাহে। বঙ্গে বর্ষা ঢুকতে এখনও বেশ কিছুদিন দেরি, এমনটাই জানাচ্ছে হাওয়া অফিস। তাই ভাল ইলিশের এখনও সেভাবে দেখা নেই পদ্মার ইলিশের। তাই বলে তো আর জামাইষষ্ঠীর মেনুতে ভাটা পড়তে পারে না। তাই যারা ইলিশ কিনতে বাজারে ঢুঁ মারবেন, একটিবার চোখ বুলিয়ে যান কোন বাজারে কত দামে বিকোচ্ছে এই রুপোলি সুন্দরী।
কলকাতা এবং হাওড়ার মাছ বাজারে ইলিশ আসছে অধিকাংশই বার্মা বা মায়ানমার থেকে। এছাড়াও মুম্বই, গুজরাট থেকেও বাংলায় রফতানি করা হচ্ছে ইলিশ। শিয়ালদা, মানিকতলা, পাতিপুকুর, লেকমার্কেট, গড়িয়াহাট, বালিগঞ্জ বাজারে মাঝারি সাইজের ইলিশ বিকোচ্ছে ১৪০০ থেকে ১৬০০ টাকা কিলো দরে। অন্যদিকে, বড় অর্থাৎ ২ কেজি বেশি ওজনের ইলিশের দাম যাচ্ছে ২০০০ টাকা থেকে ২২০০ টাকা। ৫০০ থেকে ৬০০ গ্রাম ওজনের ছোট ইলিশের দাম ৮০০ থেকে ৯০০ টাকা। কলকাতার নিকটবর্তী আগরপাড়ার বাজারে ইলিশ শুরু হচ্ছে ৯০০ টাকা থেকে।
বাচ্চা থেকে বড় ইলিশ মাত্রই সুস্বাদু। কিন্তু তবুও দেখবেন খোকা ইলিশের এক রকম দাম, আবার বড় ইলিশের দাম আরেকরকম। তবে মৎস্যজীবীদের টোটকা, ইলিশ সবচেয়ে বেশি সুস্বাদু হয়, যদি তার ওজন হয় ১ কেজি থেকে সোয়া ১কেজির মধ্যে। এবং ডিম ছাড়া ইলিশের স্বাদ হয় আরও বেশি।
ইলিশ খেলে স্বাদে চোখ বুজে আসে, একথা যেমন ঠিক তেমনই আবার অনেকেই ইলিশ মাছ এড়িয়ে যান কাঁটার জন্য। সবচেয়ে বেশি কাঁটা হয় ঘাড়ের কাছে, এবং ল্যাজার দিকে। তাই ভুলেও জামাই বাবা জীবনের পাতে এই অংশের মাছ দেবেন না। তাই জামাইয়ের জন্য বাছুন ইলিশের পেটের অংশটা। মাছের এই অংশ খেতে সবচেয়ে সুস্বাদু হয়। ডিম থাকলে তো কথাই নেই। ডিম ভরা ইলিশের পেটি পাতে পড়লে জামাই হাত চেটে-পুটে খেতে বাধ্য। সঙ্গে বাড়তি পাওনা জামাইয়ের মুখে শ্বশুর মশাই-য়ের বাজারের এবং শাশুড়ির রান্নার প্রশংসা।
এবার জামাই ষষ্ঠী পড়েছে ১২ জুন, এদিকে ১৪ জুন অবধি নদী এবং সমুদ্রে মাছ ধরায় রয়েছে সরকারি নিষেধাজ্ঞা। গত ১৫ এপ্রিল থেকে এই নিষেধাজ্ঞা জারি রয়েছে। গত কয়েক বছর ধরেই, সেভাবে ইলিশ ওঠে না দিঘায়। তাই কলকাতা সহ গোটা বাংলাই প্রায় ভাল ইলিশের জন্য পদ্মার উপর নির্ভরশীল। তাই এবার জামাইদের পাতে পদ্মার ইলিশ দিতে হলে, কিনতে হবে বরফের মাছই।
ইলিশ মাছ কেনার সময় কিছু জিনিস মাথায় রাখতে হবে। ইলিশ যত বেশি রুপোলি হবে তত সুস্বাদু হবে। মাছ হাত দিয়ে টিপে দেখবেন শক্ত কিনা, নরম হলে সেই মাছ পুরোনো। মাছের চোখ হবে নীল বা উজ্জ্বল।
Koel-Ranjit: প্রায় এক দশক পর একই পর্দায় 'বাপ-বেটি', কোয়েলের সঙ্গে একই ছবিতে রঞ্জিত মল্লিকও
ভাজা থেকে ঝাল, ঝোল থেকে ভাপা। ইলিশ যেকোনও ফর্মে যেকোনও মর্মেই সুস্বাদু। প্রথম পাতে থাকতে পারে ইলিশ ভাজা সঙ্গে কাঁচা লঙ্কা ঘি আর তেল। এছাড়া ইলিশ মাছের মাথা দিয়ে কচুর শাক বা পুঁই শাকও জমবে ভাল। এছাড়া ইলিশ পোলাও, ইলিশের লেজ ভর্তা, ভাপা কিংবা ঝোলেও সাজাতে পারেন জামাইয়ের পাত।
আপনি কী জানেন ইলিশ মাছ সবচেয়ে বেশি ভাল থাকে বরফে। প্রায় ৭-৮ মাস ইলিশ সংরক্ষণ করা যায়। এমনকি মাছ ব্যবসায়ীরাও এভাবেই সংরক্ষণ করে থাকেন। সেক্ষেত্রে মাছ কিনে এনে ভাল করে ধুয়ে টুকরো করে কেটে নিতে হবে। হলুদ গুঁড়ো, লঙ্কার গুঁড়ো, পরিমাণমতো লবণ দিয়ে মাছের টুকরোগুলো ভালো করে মাখিয়ে নিন। এয়ার টাইট প্যাকেটে ইলিশ ভরে ডিপ ফ্রিজে রাখুন। এরপর বছরভর স্বাদ নিন ইলিশের।