একাকী জলকেলিতে ব্যস্ত একজন। সে কে জানেন ? বাঘিনী জিনাত। কতদিন হবে, তা ধরুন দিন ১৭-১৮ হবে। বান্ধবী যমুনাকে নিয়ে ছিটকে বেড়িয়ে এসেছিল ওড়িশার সিমলিপাল থেকে। তারপর যুমনাকে হারিয়ে একাই বাংলা-ঝাড়খণ্ডের বনদফতরকে ঘোল খাইয়ে ছেড়েছিল জিনাত।
সম্প্রতি বাংলার বাঁকুড়ায় তাকে বাগে এনেছিল বনদফতর। একটা নয়, দুটো ঘুমপাড়ানি গুলিতে কাবু হয়েছিল সদ্য যৌবনে পা দেওয়া জিনাত। এরপর আলিপুর চিড়িয়াখানায় রিহ্যাব করে ফিরে গিয়েছে, ওড়িশার সিমলিপালে।
আপাতত শীতের দুপুরে আরামেই রয়েছে জিনাত। কিন্তু আরাম নেই বনদফতরের। সে বাংলাই হোক বা ঝাড়খণ্ডের। কিন্তু কেন ? জিনাত ফিরেছে, যমুনা কোথায় ? কার থাবার ঘুম উড়েছে বনকর্মীদের।
গ্রামটার নাম পাটা। বাংলা লাগোয়া এই অঞ্চল ঝাড়খণ্ডের সীমানা লাগোয়া। সকালে ঘুম থেকে উঠে বাঘের পায়ের ছাপ দেখতে পান গ্রামবাসীরা। এই ছাপ কার ? কী ভাবে এসেছে তাদের গ্রামে। ঝাড়খণ্ডের সরাইখেলা-খরসোওয়া জেলার চান্ডিল থানা। এই থানা এলাকার মধ্যেই রয়েছে বালিডির জঙ্গল।
বনকর্মীদের অনুমান, এই জঙ্গল থেকেই এসে গ্রামে নিজের উপস্থিতি বুঝিয়ে দিয়ে গিয়েছে সে। কে সে ? গ্রামবাসীদের দাবি, পায়ের ছাপ দেখে মনে হচ্ছে এটা পুরুষ বাঘের পায়ের ছাপ। কিন্তু বনকর্মীদের দাবি, এই পায়ের ছাপ যমুনার হতে পারে।
হঠাৎ করে এই চিত্রনাট্যে যমুনা কী ভাবে এল ? আর এখানে বনকর্মীরা দুয়ে দুয়ে চার করার চেষ্টা করছেন। সিমলিপাল থেকে গত বছরের নভেম্বর মাসে বান্ধবী যমুনাকে নিয়েই হাঁটতে শুরু করেছিল জিনাত। ঝাড়খণ্ডে বনকর্মীরা দাবি করা হয়েছিল, মাঝপথে তারা যমুনার পথ আটকেছিলেন। তাকে পাঠানো হয়েছিল রাঁচির বাল্মিকী রিজার্ভ ফরেস্টে।
তাহলে সেখান থেকেই কী চম্পট দিয়েছে যমুনা ? মুখে কুলুপ এখন ঝাড়খণ্ড সরকারের বনদফতরের। তবে, একটা বিষয় স্পষ্ট, এই বাঘের গলাতেও কিন্তু কোনও রেডিও কলার নেই। তাকে নাকি দেখা গিয়েছে চান্ডিলের গ্রামেও। শীতের রাতে কাকে যেন একটা চলে যেতে দেখেছেন গ্রামবাসীরা।
কোথায় আছে যমুনা ? নির্দিষ্ট করে কিছু বলতে না পারলেও বনকর্মীদের সন্দেহ চান্ডিল থেকে সে ঢুকতে পারে পুরুলিয়ার দিকে। কারণ, সুবর্ণরেখায় তাকে নাকি জল খেতে দেখেছেন গ্রামবাসীরা। তাই তার মুভমেন্ট নিয়ে এখন বেশ চিন্তায় রয়েছে বাংলা ও ঝাড়খণ্ডের বনকর্মীরা।
নিজের বাঘ নিজে ধরতে হবে। গঙ্গাসাগরে গিয়ে ওড়িশা সরকারকে স্পষ্ট বার্তা দিয়েছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর অভিযোগ, বাঘ ধরবে বাংলা, আর তাকে চেয়ে নিয়ে চলে যাবে ওড়িশা। এটা চলতে পারে না। যদি বাঘ ধরতেই হয়, তাহলে নিজেদের টিম পাঠাতে হবে ওড়িশা সরকারকে।
বাঘ নিয়ে মমতার এই অমোঘ বার্তার মধ্যেই আর এক বাঘের আতঙ্কে ত্রস্ত দক্ষিণ ২৪ পরগনার কুলতলি। সাগর মেলা শুরুর আগেই মৈপীঠে নিজের পায়ের ছাপ দিয়ে গিয়েছে এক রয়্যাল বেঙ্গল। স্থানীয় গ্রামবাসীদের কাছে যা আতঙ্ক বাড়াচ্ছে। ইতিমধ্যে ঘটনাস্থলে পাঠানো হয়েছে সুন্দরবনের স্পেশাল টিমকে। রাজ্যর এক বনকর্তা জানিয়েছেন, মৈপীঠ নয়, তাদের কাছে এখন চ্যালেঞ্জ পুরুলিয়া লাগোয়া চান্ডিল।