RG Kar News : সুপ্রিম কোর্টকে অবমাননা করেছেন জুনিয়র ডাক্তাররা ? শুনানির দিন কী বলেছিল আদালত, জানুন বিশদে

Updated : Sep 13, 2024 19:53
|
Editorji News Desk

চতুর্থ দিন । ৭২ ঘণ্টা পার । স্বাস্থ্যভবনের সামনে ধর্না চলছে জুনিয়র ডাক্তারদের । বিরামহীন আন্দোলনে প্রতিবাদ স্লোগানের ঢেউ উঠছে । গরমের মধ্যে ত্রিপলের নীচে রাতের পর রাত কাটাচ্ছেন তাঁরা । অভয়া-র জন্য চাইছেন জাস্টিস । চাইছেন সুস্থ, দুর্নীতিমুক্ত স্বাস্থ্যব্যবস্থা, চাইছেন নিরাপত্তা । সরকারের আহ্বানে আলোচনার জন্য বৃহস্পতিবার নবান্নেও গিয়েছিলেন ৩০ জনের প্রতিনিধি দল  । কিন্তু শেষ পর্যন্ত বৈঠক হয়নি । লাইভ স্ট্রিমিংয়ের দাবি মেনে নেয়নি সরকার । আর জুনিয়র ডাক্তাররাও স্পষ্ট জানিয়ে দেন 'নো লাইভ, নো ডিসকাশন' । নবান্ন থেকে আবারও তাঁরা ফিরলেন করুণাময়ী । আন্দোলনের ঝাঁঝ আরও বাড়ল, কিন্তু, জুনিয়র ডাক্তাররা আশা রেখেছেন, আলোচনার পথ এখনও খোলা রয়েছে । সরকার নিশ্চয় সেই দিকটা বিচার করে দেখবেন । এদিকে, সুপ্রিম কোর্ট জুনিয়র ডাক্তারদের কাজে ফেরার ১০ সেপ্টেম্বরের ডেডলাইন বেঁধে দিয়েছিল । কিন্তু, সেই ডেডলাইন পার করে ফেলেছেন তাঁরা । অনেকেই বলছেন, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশকে অবমাননা করছেন জুনিয়র ডাক্তাররা । আর আদালত অবমাননা-র জন্য শাস্তির মুখেও পড়তে হতে পারে জুনিয়র ডাক্তারদের । কিন্তু, ডাক্তারদের বিরুদ্ধে ওঠা আদালত অবমাননার অভিযোগ কি আদৌ যুক্তিযুক্ত ?

সুপ্রিম কোর্ট কী বলেছিল ?

জুনিয়র ডাক্তাররা আদালত অবমাননা করেছেন কি না, সেই প্রশ্নের উত্তর পেতে হলে প্রথমে জানতে হবে আর জি কর মামলার শুনানিতে সুপ্রিম কোর্ট কী বলেছিল ? ৯ সেপ্টেম্বর শুনানির দিন সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড় ডাক্তারদের কাজে ফেরার অনুরোধ করেছিলেন । ১০ সেপ্টেম্বরের একটা ডেডলাইন দেন তিনি । কিন্তু, কোথাও তিনি নির্দেশ দেননি । বিচারপতি বলেছিলেন, ১০ সেপ্টেম্বর বিকেল ৫টার মধ্যে জুনিয়র ডাক্তাররা কাজে না ফিরলে, রাজ্য সরকার যদি তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়, তাহলে তাতে সুপ্রিম কোর্ট হস্তক্ষেপ করবে না । অর্থাৎ রাজ্য সরকারই একমাত্র ব্যবস্থা নিতে পারবে । সুপ্রিম কোর্ট এই বিষয়ে কোনও হস্তক্ষেপ করবে না । অর্থাৎ কোথাও, ডাক্তারদের ১০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে কর্মবিরতি তুলে নেওয়ার 'নির্দেশ' দেয়নি সুপ্রিম কোর্ট । শীর্ষ আদালতের নির্দেশনামার ১৮ নং অনুচ্ছেদে উল্লেখ রয়েছে, ডাক্তারদেন মনের ভরসা ফিরে পেতে যদি ডাক্তাররা ১০ সেপ্টেম্বর বিকেল পাঁচটার মধ্যে কাজে যোগ দেন করেন, তাহলে তাঁদের বিরুদ্ধে শৃঙ্খলাভঙ্গের পদক্ষেপ করতে পারবে না রাজ্য সরকার । ডাক্তারদের সুরক্ষা ও নিরাপত্ত সংক্রান্ত যা যা অভিযোগ রয়েছে, সেগুলোই সংশ্নিষ্ট এলাকার পুলিশ সুপারকে খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে । এগুলি হওয়ার পরেও যদি ডাক্তাররা কাজে যোগ না দেন, তাহলে ভবিষ্যতে চাইলে তাঁদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করা যেতে পারে । সাধারণ মানুষের প্রতি, ডাক্তারদের যে দায়বদ্ধতা রয়েছে, তা থেকে তাঁরা মুখ ফিরে থাকতে পারেন না । পূর্বোক্ত সময়ের মধ্যে তাঁদের কাজে যোগ দেওয়া উচিৎ ।'  

রাজ্যের তরফে ডাক্তারদের দেওয়া চিঠিতে সুপ্রিম কোর্টের 'নির্দেশ' মনে করিয়ে দেওয়া হয়েছে । তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেও বিষয়টির অবতারণা করেছেন সাংবাদিক বৈঠকে । তৃণমূল অন্দরেও এমন আলোচনা চলছে যে, ১৭ সেপ্টেম্বরের শুনানিতে রাজ্যের প্রধান হাতিয়ার হবে ডাক্তারদের আদালত অবমাননা-র বিষয়টি । সুপ্রিম কোর্টে তুলে ধরা হবে, আদালতের নির্দেশ অবমাননা করেছেন জুনিয়র ডাক্তাররা । 

কী বলছেন আইন ?

আইনজীবী ও সিপিএম নেতা বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য বলছেন, আদালত অবমাননা-র কোনও ঘটনা ঘটেনি । যাঁরা বলছেন, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ ঠিকমতো না জেনেই বলছেন । অন্যদিকে, আইনজীবী ও তৃণমূল নেতা কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় এই বিষয়ে জানিয়েছেন, আইনের দিক থেকে বলতে গেলে, আদালত অবমাননা বলা যায় না । তবে, সুপ্রিম কোর্টকে অসম্মান বা অপমান করা হয়েছে বলে মনে করছেন কল্যাণ । দুই নেতা ও আইনজীবীর মধ্যে মতভেদ থাকলেও, একটা বিষয় স্পষ্ট যে আদালত অবমাননা নয় ।

উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার বৈঠক না করেই নবান্নের দুয়ার থেকে ফিরতে হয়েছে জুনিয়র ডাক্তারদের । নবান্ন সভাঘের দুই ঘণ্টারও বেশি সময় অপেক্ষার পর ফিরতে হয়েছে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেও । চার শর্ত নিয়ে নবান্নে আলোচনার জন্য গিয়েছিলেন জুনিয়র ডাক্তাররা । কিন্তু, ডাক্তারদের সব শর্ত মানা হলেও, একটি শর্ত মানা হয়নি রাজ্য সরকারের তরফে । মুখ্যসচিব থেকে ডিজি প্রত্যেকেই স্পষ্ট করে দেন, বৈঠকের লাইভ স্ট্রিমিং করা যাবে না । ভিডিও রেকর্ডিংয়ের ব্যবস্থা করতে পারেন তাঁরা । রাজ্য সরকারের এই দাবি না মেনে, লাইভের দাবিতেই অনড় ছিলেন জুনিয়র ডাক্তাররা । নবান্নের বাইরেই বসে পড়েছিলেন । অপেক্ষা করছিলেন উত্তরের । কিন্তু তাঁদের লাইভের শর্ত শেষপর্যন্ত মেনে নেয়নি রাজ্য সরকার । কেন লাইভ স্ট্রিমিং সম্ভব নয়, তার ব্যাখ্যাও দেন মুখ্যমন্ত্রী ।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দাবি, "তিনটে ভিডিও ক্যামেরা রেখে দিয়েছিলাম । তাঁরা যদি চাইত, আমরা শেয়ারও করতে পারতাম । সুপ্রিম কোর্টের অনুমতি নিয়ে । সরাসরি সুপ্রিম কোর্ট লাইভ সম্প্রচার করতে পারে । কিন্তু আমরা পারি না । যেখানে সুপ্রিম কোর্টে মামলা বিচারাধীন, সিবিআই তদন্ত করছে, সেখানে তাঁরা লাইভ করতে পারেন । কিন্তু, বিচারাধীন বিষয় কীভাবে লাইভ স্ট্রিমিং করতে পারে সরকার ? তাই আমরা সুপ্রিম কোর্টের আদেশ মেনেই ভিতরে ভিডিও করবার ব্যবস্থা করেছিলাম । যাতে পুরো ব্যাপারটা সংরক্ষিত থাকে ।' মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নাম না করে জুনিয়র ডাক্তারদের কটাক্ষ করে বলেন, 'কিন্তু,ওরা বিচার চায় না, ওঁরা চেয়ার চায় । মানুষের স্বার্থে পদত্যাগ করতে রাজি । '

যদিও জুনিয়র ডাক্তাররা বলছেন, ওই চেয়ারের উপর ভরসা রেখেই তাঁরা আলোচনার জন্য নবান্নে এসেছিলেন । অন্যদিকে, বিজেপি নেতা সুকান্ত মজুমদারের দাবি, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ভয় পেয়েছেন । সুকান্তর অভিযোগ, ভয় পেয়েছেন বলেই জুনিয়র ডাক্তারদের সঙ্গে বৈঠক লাইভ করতে দেননি মুখ্যমন্ত্রী। ধর্মতলার ধরনা মঞ্চ থেকে তিনি জানিয়েছেন, ওই বৈঠকে অনেক প্রশ্নই উঠতে পারত। আর লাইভ হলে, তাতে বিড়ম্বণার মুখে পড়তে হত মুখ্যমন্ত্রীকে। তাই নিজের বিপাক এড়াতেই জুনিয়র ডাক্তারদের এই দাবি করে খারিজ করে দিয়েছে রাজ্য সরকার।

Supreme Court

Recommended For You

editorji | লোকাল

West Bengal Weather Update: শীতের আমেজ কার্যত গায়েব, চোখ রাঙাচ্ছে নিম্নচাপ, বড়দিনের ছুটিতে বৃষ্টি?

editorji | লোকাল

Firhad Hakim: ফিরহাদের বিতর্কিত মন্তব্য! সমর্থন নয়, জানাল তৃণমূল কংগ্রেস

editorji | লোকাল

Krishnanagar Bori Gram : নদিয়ার বড়িগ্রাম, শীত এলে আজও গাঁয়ের মেয়ে-বউরা যত্ন করে বড়ি দেন

editorji | লোকাল

Murshidabad News: এবার চিকিৎসকের বিরুদ্ধেই ধর্ষণের অভিযোগ, চাঞ্চল্য মুর্শিদাবাদে

editorji | লোকাল

RG Kar Upadate: নির্যাতিতার পরিবারের হয়ে মামলা লড়বেন না বৃন্দা গ্রোভার, কারণ জানালেন স্বয়ং আইনজীবী