তাহিরপুর রাজবংশের রাজা ছিলেন ইতিহাসখ্যাত কংস নারায়ণ রায়। ৮৮৭ বঙ্গাব্দের আশ্বিন মাসের মহা ষষ্ঠী তিথিতে অকালবোধনের মাধ্যমে কংস নারায়ণ দেবী দুর্গার প্রতিমা গড়ে প্রথম দুর্গাপূজা করেন। কংস নারায়ণের প্রথম দুর্গা পূজাটি হয়েছিল রাজবাড়ি সংলগ্ন প্রধান ফটকের পাশেই একটি বেদীতে। দেবী দুর্গার সমস্ত গহনা করা হয়েছিল স্বর্ণ ও মনি-মুক্তা দিয়ে। এর পাশেই তিনি নির্মাণ করেন প্রথম দুর্গা মন্দির। রাজপ্রথা বিলুপ্ত হওয়ার আগ পর্যন্ত ওই মন্দিরে দুর্গাপুজা হত। দেশ বিদেশের বিভিন্ন এলাকার মানুষ আসতেন পূজায় অংশ নিতে।
এই বাংলায় দুর্গাপুজোর ইতিহাস অতি প্রাচীন। ওপার বাংলাতেও তাই। বস্তুত, অবিভক্ত বাংলার দুর্গাপুজো নিয়ে আলোচনা করতে গেলে প্রথমেই উঠে আসে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার ঢাকেশ্বরী মন্দিরের দুর্গাপুজোর কথা। যা আদতে প্রায় আট শতাব্দী পুরনো। এটি বাংলাদেশের 'জাতীয় মন্দির'ও বটে। এই মন্দিরে প্রথম দিকে অষ্টভুজার প্রতিমা এবং পরবর্তী সময়ে দশভুজা দুর্গা প্রতিমা স্থাপন করা হয়েছিল। ঐতিহাসিকদের মতে, ঢাকেশ্বরী মন্দিরে পূজিতা দুর্গার আরেক রূপ দেবী ঢাকেশ্বরীর নাম অনুসারেই ঢাকা শহরের নামকরণ করা হয়।
এছাড়াও ছিল ব্যবসায়ী নন্দলাল বাবুর মৈসুন্ডির বাড়ির দুর্গাপুজো। সিপাহী বিদ্রোহের কয়েক দশক আগে ১৮৩০সালে পুরনো ঢাকার সূত্রাপুর অঞ্চলের আয়োজিত হয়েছিল তৎকালীন ঢাকার সবচেয়ে বড় দুর্গাপুজো। ছিল তিনশো বছরের পুরনো শ্রীহট্টের রাজনগর উপজেলার পাঁচগাঁওয়ের দুর্গাপুজো। প্রতিমার গায়ের রঙের জন্য বিখ্যাত ছিল এই পুজো। দেশ-বিদেশ থেকে বহু দর্শনার্থী আসতেন এই পুজো দেখতে।
বিংশ শতকের শুরুর দিকে বাংলাদেশে দুর্গাপুজো সমাজের বিত্তশালী এবং অভিজাত হিন্দু পরিবারদের মাঝেই সীমাবদ্ধ ছিল। গত শতাব্দীর শেষের দিকে এবং এই শতাব্দীর শুরুর দিকে দুর্গাপুজো তার সর্বজনীন রূপ পায়।