বাঙালির বারো মাসে তেরো পার্বণ। দুর্গাপুজো, কালী পুজো, ভাইফোঁটার পর আপামর বাঙালিদের উৎসব কার্যত শেষ হয়ে গেলেও, কৃষ্ণনগর চন্দননগরবাসীর উৎসব সবে শুরু। জগদ্বাত্রী পুজোর চল সারা বাংলায় সেভাবে না থাকলেও, হুগলির চন্দননগর এবং নদিয়ার কৃষ্ণনগরে ‘শারদীয়া’ কিন্তু জগদ্বাত্রী পুজো। এই দুই শহরবাসী, সারাবছর অপেক্ষা করে থাকেন জগদ্বাত্রী পুজোর জন্য। শুধু তাই নয়, সারা বাংলা থেকেই এই সময় ভক্তের ঢল নামে চন্দননগর এবং কৃষ্ণনগরে।
জানেন কীভাবে এই পুজোর শুরু?
এই পুজোর শুরু কৃষ্ণনগরের রাজা কৃষ্ণচন্দ্র রায়ের হাত ধরেই। সেই সময় বঙ্গের নবাব আলীবর্দী খাঁ। নবাব একবার নজরানা চেয়ে বসেন ১২ লক্ষ টাকা। রাজা দিতে না পারায়, তিনি জেলবন্দি হন। ১৭৫৪ সালে, দুর্গাপুজোর নবমীর সময় তিনি ছাড়া পান। তাঁর আশা ছিল কৃষ্ণনগর ফিরে যেন দেবী দুর্গাকে একটিবার তিনি দেখতে পান। কিন্তু, কৃষ্ণনগরে যখন রাজা ফেরেন তখন বিজয়া দশমী। সেইরাতে স্বপ্ন পান রাজা।
এক কিশোরী তাঁর স্বপ্নে আসেন , ধীরে ধীরে তিনি মিলিয়ে যান চতুর্ভুজা সিংবাহিনী রূপে। রাজা স্বপ্নাদেশ পান কার্তিক মাসের শুক্লা নবমীতে তাঁর পুজো দিতে। এরপরেই শুরু হয় রাজরাজেশ্বরীর পুজো। যে পুজো তারপর সারা বাংলায় ছড়িয়ে পড়েছে।
পরের বছর থেকেই তাঁর বন্ধু ইন্দ্রনারায়ণ চন্দননগরে শুরু করেন পুজো। একইসাথে শুরু হয় রাজার অনুমতি পেয়ে কৃষ্ণনগরে প্রজাদের দ্বারা পুজো। প্রথম শুরু হয়, মা জলেশ্বরী বা মালো পাড়ার পুজো।
জগদ্বাত্রী দুর্গার অপর রূপ:
জগতের পালিকা হলেন দেবী জগদ্ধাত্রী। দেবী জগদ্বাত্রী দুর্গার অপর রূপ। তিনি সিংহবাহিনী চতুর্ভুজা। উপনিষদে এঁর নাম উমা হৈমবতী। কৃষ্ণনগরের রাজা কৃষ্ণচন্দ্র স্বপ্নাদেশে দেবীকে দেখতে পান। তারপর থেকেই তিনি শুরু করেন জগদ্বাত্রী পুজোর। ধীরে ধীরে চন্দননগরে এই পুজোর চল বাড়ে। হুগলির জগদ্বাত্রী পুজো মূলত ৪ দিন ধরে হয়, একেবারে দুর্গাপুজোর মতোই। কিন্তু কৃষ্ণনগরে মূলত নবমীতেই পুজো হয় দেবীর।
জগদ্বাত্রী পুজোর নিৰ্ঘণ্ট:
কার্তিক মাসের শুক্ল নবমীতে দেবী জগদ্ধাত্রী পূজিত হন। দুর্গাপুজোর দশমীতেই কাঠামো পুজো হয়ে যায় জগদ্বাত্রীর। এবার নবমী তিথি পড়েছে রবিবার।
জগদ্ধাত্রী পুজোর পঞ্চমী তিথি ৬ নভেম্বর, বুধবার।
জগদ্ধাত্রী পুজোর ষষ্ঠী পড়েছে ৭ নভেম্বর, ২০২৪, বৃহস্পতিবার।
জগদ্ধাত্রী পুজোর সপ্তমী পড়েছে ৮ নভেম্বর, ২০২৪, শুক্রবার।
জগদ্ধাত্রী পুজোর অষ্টমী তিথি ৯ নভেম্বর, ২০২৪, শনিবার।
জগদ্ধাত্রী পুজোর নবমী পড়েছে ১০ নভেম্বর, ২০২৪, রবিবার।
জগদ্ধাত্রী পুজোর দশমী তিথি পড়েছে, ১১ নভেম্বর, ২০২৪, সোমবার।
কৃষ্ণনগরে রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের হাত ধরেই বাংলায় জগদ্ধাত্রীর পুজোর সূচনা । আজও কৃষ্ণনগরে সেই ঐতিহ্য বজায় রয়েছে । কৃষ্ণনগরের ঐতিহ্যবাহী পুজোগুলির মধ্যে অন্যতম বুড়িমার পুজো ৷ রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের সময় থেকে এই পুজোর সূচনা হয় । প্রায় ২৫০ বছরের প্রাচীন এই দেবীর মাহাত্ম্য অসীম। প্রচলিত বিশ্বাস অনুযায়ী, বুড়িমা জাগ্রত দেবী । সকলের মনোস্কামনা পূর্ণ করেন । তাই দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ মায়ের কাছে মনের কামনা জানাতে চাষাপাড়ার বুড়িমার কাছে ছুটে আসেন । অন্যদিকে চন্দননগর মূলত আলোকসজ্জার জন্য পরিচিত । এখানে ষষ্ঠী থেকেই পুজো শুরু হয়ে যায় । দুর্গাপুজোর মতোই জগদ্ধাত্রী পুজোতেও মন্ডপে মন্ডপে ঢল নামে মানুষের ।