শীত মানেই পিকনিক আর দেদার ঘুরে বেড়ানো। আর শীতের আমেজ নলেন গুড় আর জয়নগরের মোয়া ছাড়া একেবারেই অসম্পূর্ণ। কারণ ভোজনরসিক বাঙালির শীতের দুপুর কিংবা বনভোজনের সকাল, কোনটাই জমে না জয়নগরের মোয়া ছাড়া।
কনকচূড় ধানের খই, খেজুর গুড় ও গাওয়া ঘিয়ের তৈরি এই মোয়া মিষ্টিপ্রেমী বাঙালির পছন্দের তালিকার একদম সামনের দিকে থাকে। আর দক্ষিণ ২৪ পরগণার জয়নগর শহরে এই স্পেশাল মোয়া তৈরি হয় বলেই এই মোয়ার খ্যাতি জয় নগরের মোয়া নামে। কিন্তু কী ভাবে আবিষ্কার হল এই জয়নগরের মোয়া জানেন?
জানা যায়, জয়নগরের মোয়া আবিষ্কার হয়েছিল নাকি জয়নগরের পড়শি গ্রাম বহরুতে। ওই গ্রামের বাসিন্দা যামিনীবুড়ো। তিনিই নাকি নিজের ক্ষেতের কনকচূড় ধানের খই ও নলেন গুড় দিয়ে মণ্ড তৈরি করে এক অনুষ্ঠানে পরিবেশন করেছিলেন। যে জিনিস মুখে দিয়েই ধন্য ধন্য করে উঠেছিলেন সকলে। এভাবেই নাকি জন্ম হয়েছিল বাংলার গর্বের জয়নগরের মোয়া।
এরপর বেশ কয়েক বছর কেটে যায়। সালটা ১৯২৯। যামিনীবুড়োর তৈরি ওই খই আর গুড়ের মণ্ডকে নতুন রূপ দিয়েছিলেন জয়নগরের পূর্ণচন্দ্র ঘোষ ওরফে বুঁচকিবাবু আর নিত্যগোপাল সরকার নামের দুই বন্ধু। দু'জন মিলে এই মোয়ায় মেশালেন গাওয়া ঘি আর খোয়া ক্ষীর। আরও সুস্বাদু হয়ে উঠল এই মোয়া। এরপর জয়নগরের 'শ্রীকৃষ্ণ মিষ্টান্ন ভাণ্ডার' থেকে মোয়ার বানিজ্যিক ভাবে পথচলা শুরু হয়। আর এই মোয়া খ্যাতি পায় জয়নগরের মোয়া নামে।
কিন্তু কলকাতার বাজারে যে বাক্সবন্দি মোয়া পাওয়া যায় তা আসলেই জয়নগরের মোয়া তো? শীত আসলেই এমন প্রশ্ন অনেক মোয়াপ্রেমীর মনেই উঁকি মারে। তাই কোনও ঝুঁকি না নিয়ে আজ এডিটরজি-বাংলায় শিখে নিন সুস্বাদু ও নরম পাকের জয়নগরের মোয়া বানানোর সহজ উপায়।
জয়নগরের মোয়া বানানোর জন্য প্রথম যে উপকরণটি প্রয়োজন তা হল নলেন গুড়। নলেন গুড় তৈরি করার বেশ কয়েকটি ধাপ আছে। এর প্রথম ধাপ হল গাছ কাটা। হেমন্তের হিমেল হাওয়ায় যখন হালকা শীতের প্রভাব ফেলতে শুরু করে, সেই সময় থেকেই এই কাজ শুরু হয়। গাছ কেটে রস বেরনোর পথ তৈরি করার পর বেশ কিছুদিন অপেক্ষা করতে হয়।
শীতের শুরু থেকে গাছে রস আসতে শুরু করে। তখন মাটির কলসি গাছে ঝুলিয়ে দিতে হয় যাতে কলসির মুখটা কাঠির নিচে থাকে। সারারাত ধরে কলসিতে জমা হতে থাকে রস। পরদিন ভোরবেলা, সূর্যের আলো ফোটার আগে গাছ থেকে কলসি নামিয়ে নিতে হয়। তারপর এই রস জ্বাল দিয়ে তৈরি হয় নলেন গুড়। শহর কলকাতায় তো আর গুড় বানানো সম্ভব না তাই ভরসা রাখতে হয় বাজারের নলেন গুড়ের উপরেই।
কড়াইতে নলেন গুড়, চিনি আর জল একসঙ্গে মিশিয়ে ভাল করে ফোটাতে হবে। এবার এই তিনটি উপকরণ ফুটে গাঢ় হয়ে গেলে তার থেকে অল্প পাক আলাদা তুলে কড়াইতে বাকি পাক ঠাণ্ডা করতে হবে। পাক ঠাণ্ডা হয়ে গেলে তাতে ভাল করে খই মিশিয়ে দিন। পুরো খইটা ভাল করে মিশিয়ে প্রায় ২০ মিনিট ঢাকা দিয়ে রেখে দিতে হবে।
কিছুক্ষণ পর ঢাকনা খুলে খোয়া ক্ষীর, কাজবাদামের টুকরো, ঘি, কিসমিস দিয়ে ভাল করে নেড়ে নিন। এরপর আগে থেকে তুলে রাখা গুড়ের পাক অল্প অল্প করে দিয়ে ফের মিশ্রণটি আবার ভাল করে তৈরি করুন। সব উপকরণ একসঙ্গে মাখা হয়ে গেলে অল্প অল্প নিয়ে দুই হাতে লাড্ডুর মতো গোল করে নিলেই তৈরি হয়ে যাবে জয়নগরের বিখ্যাত মোয়া।