ফের আরও এক ঘূর্ণিঝড় আছড়ে পড়তে চলেছে বঙ্গোপসাগর উপকূলে। নাম- 'রেমাল'। আবহাওয়াবিদদের আশঙ্কা, এই 'রেমাল' ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব পড়তে পারে পশ্চিমবঙ্গেও। চলতি বছর উষ্ণতার ধারাবাহিক অস্থিরতা দেখেছে বাংলা। এপ্রিলের তাপপ্রবাহে পরপর ভেঙেছে উষ্ণতার রেকর্ড। মে মাসে নতুন করে অস্থিরতার সম্মুখীন বাংলা। এবার ঘূর্ণিঝড়ের আশঙ্কায় প্রহর গুনছে রাজ্যবাসী। উপকূলবর্তী বাসিন্দাদের চিন্তা বাড়াচ্ছে ঘূর্ণিঝড় রেমাল। আশ্রয় হারানোর আশঙ্কায় উপকূলের বাসিন্দারা। দেশে এখনও পর্যন্ত সবথেকে বড় ঘূর্ণিঝড় কী? গত কয়েক দশকে কোন কোন ঘূর্ণিঝড় সমুদ্র উপকূলে আছড়ে পড়েছে, তার প্রভাবে কত ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, জেনে নিন বিশদে।
বঙ্গোপসাগর ও আরব সাগরে যে সব ঝড় হয়েছে, তাদের মধ্যে ভয়ঙ্কর সাইক্লোনগুলির মধ্যে সবথেকে আগে যে নামটি উড়ে আসে, তা হল 'ভোলা'। ১৯৭০ সালে বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গে আছড়়ে পড়েছিল এই সাইক্লোন। বঙ্গোসাগরে তৈরি হওয়া এই সুপার সাইক্লোনে মৃত্যু হয়েছিল প্রায় ৫ লক্ষ মানুষের।
১৯৯০ সালে বঙ্গোপসাগরে আরও একটি ঘূর্ণিঝড় আছড়ে পড়েছিল। যার নাম ছিল সুপার সাইক্লোনিক স্টর্ম BOB ০১। ৯ মে অন্ধ্রপ্রদেশের উপকূলে আছড়ে পড়ে এই সাইক্লোন। দক্ষিণ ভারতের অন্যতম ঘূর্ণিঝড় হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছিল এই ঝড়কে। এই ঘূর্ণিঝড়ে প্রাণ হারিয়েছিলেন ৯৬৭ জন।
১৯৯৯ সালে ওড়িশা উপকূলে আছড়ে পড়েছিল স্বাধীনতাত্তোর ভারতের অন্যতম ভয়াবহ সাইক্লোন। ২৯ অক্টোবর ওড়িশা উপকূলে আছড়ে পড়ে এই সাইক্লোন। যার প্রভাবে সরকারি হিসেব অনুযায়ী ৯,৮৮৭ জনের মৃত্যু হয়। ঘরছাড়া হন কয়েক হাজার মানুষ। সাইক্লোন-পরবর্তী পরিস্থিতিতে ডায়রিয়া, কলেরায় মতো রোগে আক্রান্ত হন বহু মানুষ।
২০০০ সালে রাষ্ট্রসঙ্ঘের পরিবেশ দফতরের তরফে সিদ্ধান্তের ফলে, প্রতিটি সামুদ্রিক ঝড়ের চিহ্নিতকরণের কাজে সুবিধার জন্য ঝড়গুলির নির্দিষ্ট নামকরণ প্রক্রিয়া শুরু হয়। ২০০২ সালে পশ্চিমবঙ্গের উপকূল অঞ্চলে আছড়ে পড়েছিল সাইক্লোন বিওবি ০৩। মৃত্যু হয় ১৭৩ জনের। ২০০৫ সালে অন্ধ্রপ্রদেশের উপকূলে কলিঙ্গপটনমে আছড়ে পড়ে সাইক্লোন 'পেয়ার'। যার ফলে প্রাণ হারিয়েছিলেন অন্ধ্রপ্রদেরশ ও ওড়িশা উপকূলের অন্তত ৬৫ জন মানুষ।
২০০৮ সালে ডিসেম্বরে আছড়ে পড়েছিল ঘূর্ণিঝড় 'নিশা'। এর প্রভাবে তামিলনাড়ু ও শ্রীলঙ্কা উপকূলে ২০০ জনের মৃত্যু হয়। ২০০৯ সালে আসে সাইক্লোন 'ফিয়ান'। এই ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব পড়েছিল তামিলনাড়ু, গুজরাত, গোয়া, মহারাষ্ট্র ও কর্নাটক উপকূলে।
২০১২ সালে দক্ষিণ ভারতের উপকূলে আছড়ে পড়েছিল ঘূর্ণিঝড় 'নীলম'। ৩১ অক্টোবর মহাবলীপুরমে আছড়ে পড়া এই ঘূর্ণিঝড়ের সর্বোচ্চ গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ৮৫ কিলোমিটার। মৃত্যু হয়েছিল ৭৫ জনের।
২০১৩ সালে ওড়িশা উপকূলে আছড়ে পড়েছিল 'ফাইলিন। ১৪ বছর আগে, ১৯৯৯ সালে ওড়িশা উপকূলে আছড়ে পড়া সুপার সাইক্লোনের থেকেও বেশি শক্তিশালী ছিল এই ঘূর্ণিঝড়।
২০১৪ সালে অন্ধ্রপ্রদেশের ভাইজ্যাগে আছড়ে পড়েছিল ঘূর্ণিঝর 'হুদহুদ'। ওড়িশা ও অন্ধ্রপ্রদেশের উপকূলবর্তী এলাকায় 'হুদহুদ' প্রাণ কেড়েছিল ১২৪ জনের। টানা বৃষ্টিতে কার্যত ভেঙে পড়েছিল এই দুই রাজ্যের মধ্যের যোগাযোগ-ব্যবস্থা।
২০১৭ সালে আরব সাগরে তৈরি হয়েছিল ঘূর্ণিঝড় 'অক্ষী'। কেরল, তামিলনাড়ু, গুজরাতের উপকূলে আছড়ে পড়া এই ঝড়ের প্রভাবে মৃত্যু হয়েছিল ২৪৫ জনের। ২০১৯ সালে মে মাসে ওড়িশা উপকূলে আছড়ে পড়ে 'ফণী' সাইক্লোন। এই ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব পড়েছিল বাংলাতেও। মৃত্যু হয় ৪০ জনের।
২০২০ সালে পূর্ব ভারত ও বাংলাদেশে আছড়ে পড়ে সুপার সাইক্লোন 'আমফান'। করোনা-কালে এই ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে কার্যত মুখ থুবড়ে পড়েছিল জনজীবন-সংক্রান্ত প্রায় সমস্ত পরিষেবা। আমফানের সর্বোচ্চ গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ২৪০ কিলোমিটার।
২০২১ সালেও একটি ঘূর্ণিঝড় আসে। যার নাম টাউকটে। মায়ানমার এই ঘূর্ণিঝড়ের নামকরণ করেছিল। ভারতের তিন রাজ্যে মৃত্যু হয়েছিল ২৪ জনের। ২০২১ সালে ওড়িশার ভদ্রকে আছড়ে পড়ে আরও একটি সুপার সাইক্লোন, 'ইয়াশ'। এর সর্বোচ্চ গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ১৩০-১৪৫ কিলোমিটার।
২৬ মে 'রেমাল'-এর আছড়ে পড়া নিয়ে সতর্ক প্রশাসন। ইতিমধ্যেই উপকূলবর্তী অঞ্চল জুড়ে নেওয়া হয়েছে নানা সতর্কতামূলক পদক্ষেপ। আগামী রবিবার সন্ধ্যায় ঘণ্টায় ৮০-১০০ কিলোমিটার বেগে আছড়ে পড়বে এই ঘূর্ণিঝড়। আছড়ে পড়ার পর 'রেমাল'-এর গতিবেগ আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা আবহাওয়াবিদদের।