আজ বাইশে শ্রাবণ। ৮১ বছর আগের এমনই এক বর্ষার দিনে মহাশূন্যে বিলীন হয়ে গিয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। বর্ষণ মুখরিত রাতে স্তব্ধ হয়েছিল তাঁর দিন রাত্রির কাব্য রচনা। বর্ষাকাল ছিল তাঁর প্রিয় ঋতু। কবিতা, গান, উপন্যাস- শিল্পের যে যে বিভাগে তাঁর অনিবার্য বিচরণ ছিল, প্রায় সব জায়গাতেই এ কথা স্পষ্টভাবে বলে যেতে চেয়েছেন তিনি। আসলে যেন জীবনের মত বিপুল এক বর্ষাকেই ধরে রাখতে চেয়েছিলেন তাঁর কলমে, শেষ দিনটি পর্যন্ত। ১৩৪৮ সালের এই দিনেই তাঁর প্রিয় ঋতুতে নির্বাপিত হয়েছিল কবির জীবনপ্রদীপ। মৃত্যুর দিন সাতেক আগে মুখে মুখে ডিক্টেশন দেওয়ার মাধ্যমে তৈরি হয়েছিল তাঁর শেষ লেখা- 'তোমার সৃষ্টির পথ রেখেছ আকীর্ণ করি
বিচিত্র ছলনাজালে,
হে ছলনাময়ী...'
কেমন ছিল সেই দিনটি?
বুদ্ধদেব বসুর 'তিথিডোর' উপন্যাসের চরিত্র 'সত্যেন' বাইশে শ্রাবণে রবি-প্রয়াণের বিবরণ দিতে গিয়ে বলেছিল 'আকস্মিকের মতো নতুন, অবিশ্বাস্যের মতো অসহ্য'। বাঙালির সেদিন কোনও ক্ষুধাবোধ ছিল না। ক্লান্তিও না। তুলনাহীন দুঃখের চেতনা ছাড়া অন্য কোনও চেতনাও ছিল না আর। যদিও, শোকের নীরব প্রকাশ আমজনতার মধ্যে সেদিন ছিল না বললেই চলে। মৃত্যুর ১০ বছরেরও বেশি সময় আগে ইন্দিরা দেবীকে লেখা চিঠিতে রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন, -'...আমার শ্রাদ্ধ যেন বিনা আড়ম্বরে, বিনা জনতায় হয়...' অথচ, বাস্তবে হয়েছিল উল্টো। তাঁর দেহ নিয়ে চলেছিল নির্লজ্জতার রাজসূয় যজ্ঞ। ছিঁড়ে নেওয়া হয়েছিল চুল-দাড়িও।
বাইশে শ্রাবণ এলে সেই লজ্জার কথাও মনে পড়ে।