বাংলাদেশ পরিস্থিতির মাঝেই ফের উত্তপ্ত কোচবিহার। আলাদা রাজ্যের দাবিতে বুধবার থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য রেল অবরোধের ডাক দিয়েছে কোচবিহার পিপলস অ্যাসোসিয়েশন। কোচবিহারের সীমান্তবর্তী এলাকায় জোরাই স্টেশন অবরোধ করেছেন আন্দোলনকারীরা। এর ফলে গোটা দেশের সঙ্গে উত্তরপূর্ব ভারতের যোগাযোগ একপ্রকার স্তব্ধ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
পৃথক রাজ্যের দাবিতে কোচবিহারে দীর্ঘদিন ধরেই চলছে আন্দোলন। ২০০৫ সালে যা তীব্র রূপ নিয়েছিল। সেই বছরই আন্দোলনে প্রাণ হারিয়েছিলেন পাঁচজন। তারপরও আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার হুঁশিয়ারি দেয় গ্রেটার কোচবিহার পিপলস অ্যাসোসিয়েশন।
২০০৫ সালে ২০ সেপ্টেম্বর কোচবিহারের জেলাশাসকের অফিস অভিযানের ডাক দিয়েছিল গ্রেটার কোচবিহার পিপলস অ্যাসোসিয়েশন। ভাটাবাড়ি, ঘুঘুমারি, খাগড়াবাড়ি থেকে কয়েক হাজার সমর্থক মিছিল শুরু করেন। কিন্তু মিছিল মাঝপথেই আটকে দেওয়া হয়। পুলিশের সঙ্গে বচসা শুরু হয় বংশীবদন বর্মন সহ একাধিক নেতার। গুলি চালানোর ঘটনা ঘটে। ৩ পুলিশকর্মী সহ দুই আন্দোলনকারীর মৃত্যু হয়। এরপর সাময়িক আন্দোলন একটু স্মিত হয়ে পড়েছিল। কিন্তু ২০১৬ সালে ফের আন্দোলনের ঝাঁঝ বাড়ালেও খুব একটা এগোতে পারেনি আন্দোলনকারীরা।
এরপর চলতি বছরের লোকসভা নির্বাচনের আগে ফের সক্রিয় হয় গ্রেটার কোচবিহার পিপলস অ্যাসোসিয়েশন। কামতাপুরী ভোটব্যাঙ্ক বিভাজন করতে গ্রেটার কোচবিহারের অন্য একটি অংশ বিজেপির হয়ে প্রচার শুরু করে। ভোটের আগেও কোচবিহারকে আলাদা রাজ্যের দাবি তোলা হয়েছিল। কিন্তু ফলাফল প্রকাশ হতেই দেখা যায় কোচবিহার লোকসভা কেন্দ্রে মুখ থুবড়ে পড়েছে BJP। প্রায় ৮ লাখ ভোট পেয়ে জয়ী হন তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী জগদীশ সিং বাসুনিয়া।
এরপর প্রায় ছমাস পর বুধবার থেকে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন আন্দোলনকারীরা। বুধবার সকাল থেকে জোরাই স্টেশনে রেললাইনে বসে অবরোধে সামিল হয়েছেন গ্রেটার সমর্থকরা। যার জেরে একাধিক ট্রেন বাতিল করা হয়েছে এবং ঘুরপথেও চলছে অনেক ট্রেন। জলপাইগুড়ি থেকে গুয়াহাটিগামী বন্দেভারত এক্সপ্রেস, বঙ্গাইগাঁও-নিউ জলপাইগুড়ি এক্সপ্রেস বাতিল করা হয়েছে। আপ ব্রহ্মপুত্র মেল এবং আপ কামরূপ এক্সপ্রেসকে ঘুরপথে কোচবিহারের গোপালগঞ্জ দিয়ে চালানো হচ্ছে। এছাড়াও ডাউন 20503 রাজধানী এক্সপ্রেস, 22449 ডাউন গুয়াহাটি এক্সপ্রেস, 22503 বিবেক এক্সপ্রেসের যাত্রাপথ পরিবর্তন করা হয়েছে। ফলে যে সব যাত্রীদের যাতায়াতের সমস্যা হয়েছে তাঁদের বাসে করে অন্যত্র পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করে হয়েছে।
গ্রেটার কোচবিহার পিপলস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি বংশীবদন বর্মন জানিয়েছেন, সংবিধান অনুযায়ী কোচবিহার গ ক্যাটাগরির রাজ্য। কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকার এখনও তার মান্যতা দেয়নি। সেই কারণেই বুধবার থেকে আন্দোলনের ডাক দেওয়া হয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকার যতক্ষণ না পর্যন্ত দাবি মানছে ততক্ষণ পর্যন্ত রেলরোকো চলবে বলে দাবি তাঁর।
এর আগেও নিউ কোচবিহার স্টেশনেও রেল রোকো আন্দোলন হয়েছিল। সেই সময় ঘুরপথে ট্রেন চালানো হলেও এবার তা সম্ভব হচ্ছে না। কারণ জোরাই স্টেশন পুরোপুরি স্তব্ধ হয়ে পড়েছে।