'আর কবে আর কবে'... ধৈর্য্যের বাধ ভাঙছে মানুষের । আর জি করের ঘটনার আড়াই মাস পেরিয়ে গেলেও বিচার এখনও মেলেনি । সিবিআই তদন্ত চলছে । জমা পড়েছে চার্জশিটও । কিন্তু, সিবিআই তদন্তে আস্থা হারাচ্ছেন জুনিয়র ডাক্তাররা । নির্যাতিতার বিচার-সহ মোট ১০ দফা দাবি নিয়ে ধর্মতলায় অনশন শুরু করেছেন তাঁরা । দুই সপ্তাহ পার হয়ে গেল । শুধু জল খেয়ে রাতের পর রাত কাটাচ্ছেন স্নিগ্ধা, সায়ন্তনী, অর্ণবরা । সারা শরীরে তাঁদের ব্যথা, পেটে ব্যথা, ওজন ক্রমশ কমছে, দুর্বল হয়ে পড়ছেন, কিন্ত মন শক্ত । সহযোদ্ধাদের অনেককেই অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়েছিল । কিন্তু ভেঙে পড়েননি বাকিরা । লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন । আর তাঁদের উদ্বুদ্ধ করতে, মনের শক্তি জোগাতে ধর্মতলার অনশন মঞ্চের পাশে পাশে রোজ প্রচুম মানুষ জমায়েত করছেন, গান গাইছেন, স্লোগান দিচ্ছেন । আবার অনেকে প্রতীকী অনশনও করছেন । এবার জুনিয়র ডাক্তারদের পাশে দাঁড়িয়ে প্রতীকী অনশন করলেন টলিউডের কয়েকজন কলাকুশলী । কেউ ২৪ ঘণ্টা, কেউ ৪৮ ঘণ্টা...শুধু জল খেয়ে অনশন করলেন ।
আর জি কাণ্ডে প্রথম থেকেই সরব ছিলেন অভিনেত্রী চৈতী ঘোষাল, দেবলীনা দত্ত, বিদিপ্তা চক্রবর্তী, তনিকা বসু, প্রান্তিক বন্দ্যোপাধ্যায়, সৌম্য বন্দ্যোপাধ্যায়, বিরসা দাসগুপ্তরা । রাত দখল হোক বা প্রতিবাদের মিছিল...সবসময় তাঁদের আওয়াজ তুলতে দেখা গিয়েছে । বলা ভাল, প্রথম থেকেই আন্দোলনের অংশ ছিলেন তাঁরা । শনিবার ধর্মতলায় সেই ৭ টলি তারকারা বসেন প্রতীকী অনশনে । কেউ রবিবার অনশন ভেঙেছেন, কারও চলে সোমবার পর্যন্ত । মূলত পালা করেই অনশন করেন তাঁরা । চৈতি, বিদিপ্তারা জানিয়েছেন, জুনিয়র ডাক্তারদের পাশে দাঁড়াতে এবং নির্যাতিতার সুবিচারের আশায় এমন পদক্ষেপ নিয়েছেন তাঁরা ।
আন্দোলনে প্রথম থেকে অংশ নিয়েছেন বিদিপ্তা চক্রবর্তী । তিনি জানান, এতদিন গান গেয়ে, ছবি এঁকে, গলা ফাটিয়ে চিৎকার করে, মশাল-মিছিল করে ওদের পাশে ছিলেন । এবার মনে হয় যে প্রতীকী অনশনটাও শুরু করা দরকার । দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গিয়েছে । আর কিছু করার নেই । তারপরই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় পালা করে তাঁরা অনশন করবেন ।
পরিচালক বিরসা দাশগুপ্ত প্রশাসনের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগড়ে দেন । তাঁর মতে, রাজ্যের যিনি প্রধান, তাঁর উচিৎ ভুলভ্রান্তি, সমস্যা সব মিটিয়ে সমাধান করার । বিরসার প্রশ্ন, 'এত ঔদ্ধত্য কোথা থেকে আসে ?'
জুনিয়র ডাক্তারদের অনশনের পাশে দাঁড়াতে প্রতীকী অনশন করছেন বলে জানালেন অভিনেতা প্রান্তিক বন্দ্যোপাধ্যায় । তাঁর কথায়, জুনিয়র ডাক্তারদের অনশনের কাছে তাঁর এই ২৪ ঘণ্টা প্রতীকী অনশন হয়তো কিছুই নয় । কিন্তু, পাশে থাকাটা দরকার বলে মনে করেন তিনি । যে রায়বিচার নিয়ে কথা হচ্ছে, যে দাবিগুলি নিয়ে কথা হচ্ছে, তার পক্ষপাতী হয়েই তাঁরা পাশে দাঁড়িয়েছেন । যাতে খুব শীঘ্রই বিষয়টার মীমাংসা হয়ে যাক, সেটাই চাইছেন প্রান্তিক ।
এদিকে, টলিউের এই প্রতীকী অনশন নিয়ে অনেকে প্রশ্ন তুলছেন । কেন তাঁরা অনশন করছেন, এমন পোস্টে, কটাক্ষে ভরে যাচ্ছে সোশ্যাল মিডিয়া । এর বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন দেবলীনা । তাঁর কথায়, তাঁরা যে প্রতীকী অনশন করছেন, এরকম প্রত্যেকদিন বহু মানুষ অনশন করছেন । নানাভাবে তাঁরা প্রতিবাদ দেখিয়েছেন, তাই এবার প্রতীকী অনশন করেই প্রতিবাদ দেখাচ্ছেন । কিন্তু, বারবার প্রশ্ন উঠছে তারকারা কেন প্রতীকী অনশন করছেন । দেবলীনার কথায়, বাকিদের ক্ষেত্রেও কেন একই প্রশ্ন উঠছে না । বহু সাধারণ মানুষ প্রতীকী অনশন করছেন । বাকিদের মতোই দু'টো হাত, দু'টো পা , চোখ তারকাদেরও । তাহলে কেন এই বিভাজন করা হচ্ছে ?
অভিনেত্রী তনিকা বসু ৪৮ ঘণ্টা প্রতীকী অনশনের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন । তাঁর কথায়, যে ঘটনা থেকে সবকিছু শুরু হয়, সেটা নিয়ে এত মানসিকভাবে বিচলিত, বিরক্তি অনুভব করেছেন দুই মাস ধরে, তখন মনে হয়েছে কিছু একটা করতে হবে । তাই টলিউড ইন্ডাস্ট্রির অনেকে যখন প্রতীকী অনশন করবেন বলে জানালেন, সেইসময় তনিকাও অনশনের সিদ্ধান্ত নেন । তনিকা জানিয়েছেন, তিনি এখনও আশাবাদী, একটা সুরাহা হবে ।
চৈতি ঘোষাল জানান, ডাক্তারদের সবকটা দাবিই ন্যায্য। নিজেদের জন্য নয়, সব মানুষের হয়ে প্রতিবাদের দাবি জানাচ্ছেন। সে কারণেই সবকিছু ভুলে ওঁদের কাছে আসা । একইসঙ্গে তাঁর অভিযোগ, সরকার সবকিছু জানলেও কোনও ইতিবাচক পদক্ষেপ নিচ্ছে না ।