অনশনরত জুনিয়র ডাক্তার অনিকেত মাহাতোর পর উত্তরবঙ্গে অনশনকারী আরেক জুনিয়র ডাক্তার অলোক বর্মাও অসুস্থ। সাত দিন ধরে অনশনের জেরে অসুস্থ হয়ে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজের সিসিইউয়ে ভর্তি আলোক। আলোকের সঙ্গে অনশনে বসেছেন উত্তরবঙ্গের আরেক জুনিয়র ডাক্তার শৌভিক বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি এখনও সুস্থ বলে খবর। ধর্মতলার আটজন অনশনকারীর শারীরিক অবস্থাও ক্রমশ দুর্বল হচ্ছে বলেই জানাচ্ছেন অনশন মঞ্চে থাকা সিনিয়র চিকিৎসকেরা।
অনশনের ১৬০ ঘণ্টারও বেশি সময় পেরিয়ে গিয়েছে। শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় বৃহস্পতিবার গভীর রাতে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল আরজি করের জুনিয়র ডাক্তার অনিকেত মাহাতোকে। এই মুহুর্তে চিকিৎসকদের পর্যবেক্ষণে আছেন অনিকেত। শনিবার দুপুরে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হল আলোক বর্মাকে।
ধর্মতলার অনশনমঞ্চে এখনও অনড় বাকি আট আন্দোলনকারী। শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটলেও মনোবল এখনও অটুট। গত শনিবার রাত থেকে আমরণ অনশনে বসেছিলেন তনয়া পাঁজা, স্নিগ্ধা হাজরা, সায়ন্তনী ঘোষ হাজরা, অনুষ্টুপ মুখোপাধ্যায়, অর্ণব মুখোপাধ্যায় এবং পুলস্ত্য আচার্য। রবিবার অনশনে যোগ দেন অনিকেত। শুক্রবার অনশনে যোগ দিয়েছেন আরও দুই জুনিয়র ডাক্তার পরিচয় পাণ্ডা বং আলোলিকা ঘড়ুই। উত্তরবঙ্গে অনশনে বসা আলোক হাসপাতালে ভর্তি। অনশন করছেন শৌভিক।
দিনে দু’বার করে স্বাস্থ্যপরীক্ষা করা হচ্ছে অনশনরত ডাক্তারদের। পরীক্ষার রিপোর্ট বলছে, ধর্মতলায় অনশনে বসা প্রথম ছয় জুনিয়র ডাক্তারের সকলেরই শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটছে। মাথা ঘুরছে, কমছে রক্তের শর্করার মাত্রা। রক্তচাপ, পাল্স রেট ওঠানামা করছে। দীর্ঘ আট দিনের অনশনের জেরে কিডনির সমস্যাও দেখা দিয়েছে। ইউরিনে কিটোন বডি পাওয়া গিয়েছে। তার মাত্রাও ক্রমশ বাড়ছে। সব মিলিয়ে সমস্ত অনশনকারী জুনিয়র ডাক্তারদের স্বাস্থ্য নিয়েই ক্রমশ উদ্বেগ বাড়ছে রাজ্যবাসীর।
যে দশ দফা দাবিতে জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলন চলছে, জেনে নিন এক নজরে,
প্রথম দাবি- RG কর হাসপাতালে খুন ও ধর্ষণের ঘটনায় প্রকৃত অভিযুক্তদের খুঁজে বের করে দ্রুত শাস্তি দিতে হবে।
দ্বিতীয় দাবি- স্বাস্থ্যক্ষেত্রে প্রশাসনিক অক্ষমতা এবং দুর্নীতির দায় নিতে হবে স্বাস্থ্য দফতরকে। স্বাস্থ্যসচিব নারায়ণ স্বরূপ নিগমকে অতি দ্রুত তাঁর পদ থেকে সরিয়ে দিয়ে হবে।
তৃতীয় দাবি- রোগীদের জন্য কেন্দ্রীয়ভাবে রেফারেল সিস্টেম চালু করতে হবে।
চতুর্থ দাবি- সরকারি হাসপাতালে ফাঁকা বেডের তালিকা একটি মনিটারে দেখাতে হবে।
পঞ্চম দাবি- আন্দোলনকারীদের পঞ্চম দাবি অতি দ্রুত মেডিক্যাল কলেজগুলিতে টাস্ক ফোর্স গঠন করতে হবে। সেখানে জুনিয়র ডাক্তারদের প্রতিনিধি রাখতে হবে।
ষষ্ঠ দাবি- জুনিয়র ডাক্তারদের দাবি প্রতিটি সরকারি মেডিক্যাল কলেজে পুলিশি নিরাপত্তা বৃদ্ধি করতে হবে। সিভিক ভলান্টিয়ারের বদলে দায়িত্ব দিতে হবে পুলিশকে।
সপ্তম দাবি- অতি দ্রুত প্রতিটি হাসপাতালে নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মী নিয়োগ করতে হবে।
অষ্টম দাবি- থ্রেট কালচার পুরোপুরি ভাবে বন্ধ করতে হবে। যাঁরা এর সঙ্গে জড়িত তাঁদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করতে হবে।
নবম দাবি- প্রতিটি মেডিক্যাল কলেজে ছাত্র সংসদ নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে।
দশম দাবি- পশ্চিমবঙ্গ হেল্থ রিক্রুটমেন্ট বোর্ডে বেনিয়মের অভিযোগগুলির দ্রুত তদন্ত করতে হবে।