১২ অগাস্ট, ১৯৪৭, ব্রিটিশ গভর্নর লর্ড মাউন্টব্যাটেন ঘোষণা করেন, স্বাধীন দেশ হবে ভারত ও পাকিস্তান (India and Pakistan)। ১৫ অগাস্ট, ১৯৪৭ (15 August, 1947), মধ্যরাতে আসে সেই বৈপ্লবিক মুহূর্ত। অবসান হয় ব্রিটিশ যুগের । আসে বহু কাঙ্খিত স্বাধীনতা (Independence Day)। এই সিদ্ধান্তের আগেই তৈরি হয় স্বাধীন দেশের মানচিত্র। দুই দেশের সীমান্তরেখা তৈরি করেন সাইরিল ব়্যাডক্লিফ (cyril radcliffe line)। অভিযোগ, ব়্যাডক্লিফের সেই বিখ্যাত সীমান্তবর্তী লাইনে বেশ কিছু ত্রুটি ছিল। যার ফলে বাংলার এখনও অনেক জেলায় ১৫ অগাস্টে পালিত হয় না স্বাধীনতা দিবস। অবাক হচ্ছেন? আসলে এর পিছনে লুকিয়ে আছে দেশভাগের ইতিহাসের এক গল্প। এসব জেলায় স্বাধীনতা এসেছিল ১৮ অগাস্ট (18 August Independence Day)।
১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্ট স্বাধীন হয় ভারত। ঠিক তার একদিন আগেই জন্ম নেয় পাকিস্তান। সেই সময় নদিয়া-মুর্শিদাবাদ-মালদহ জেলায় বিভিন্ন স্থানে নানা বিভ্রান্তি ছড়িয়েছিল। সেই এলাকাগুলি ভারতের অন্তর্গত না পূর্ব পাকিস্তানের (অধুনা বাংলাদেশ) অন্তর্গত, তা বুঝে উঠতে পারছিলেন না সেখানকার বাসিন্দারা। নদিয়ার বেশ কিছু গ্রামে এখনও পূর্বসূরিদের মুখে মুখে ঘোরে সেই গল্প।
এই সমস্যার মূলে ছিল ব্রিটিশ বিভাজন নীতির (Partition of British Indian Empire) দুর্বলতা। সেই বিভাজনের নিয়ম অনুযায়ী নদিয়ার (Nadia) শুধুমাত্র নবদ্বীপ বাদ দিয়ে শিবনিবাস সহ কৃষ্ণনগর-শান্তিপুর, মুর্শিদাবাদ-মালদহের বিভিন্ন এলাকা তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের মধ্যে পড়ে যায়। ফলে কৃষ্ণনগরের অনেকেই ভারতের স্বাধীনতার আনন্দে শরিক হতে কৃষ্ণনগর (Krishna Nagar) থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরে ভাগীরথী নদী পেরিয়ে নবদ্বীপে যান। সেখানে ভারতের জাতীয় পতাকা (Indian Flag) তোলেন। কারণ নবদ্বীপ শহর জেলার সব থেকে পশ্চিমে এবং পূর্ব পাকিস্তান সীমান্ত থেকে সব থেকে দূরে। সেই এলাকা অন্তত ভারতে থাকবে বলেই সকলে অনুমান করেছিলেন।
আরও পড়ুন: স্বাধীনতার ৭৫ বছর, বিশ্বের ক্রীড়াক্ষেত্রে ভারতের কয়েকটি ঐতিহাসিক জয়
তবে তৎকালীন কংগ্রেস নেতারা তো বটেই, এমনকী কৃষ্ণনগরের মহারানি জ্যোতির্ময়ী দেবীও নদিয়াকে ভারতে রাখার স্বপক্ষে দাবি তুলেছিলেন। এমনকি তাঁরা দিল্লির দরবারে এ বিষয়ে দাবি জানান। পাশাপাশি, কৃষ্ণনগরের কিছু গণ্যমান্য ব্যক্তিও এই বিষয়ে তৎপর হন। নদিয়ার বেশিরভাগ মানুষের এই অসন্তোষ চিন্তায় ফেলে ব্রিটিশ সরকারকে।সেই সময় তাঁদের হয়ে লড়াই করেছিলেন শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়। যার আন্দোলনে ওই গ্রামবাসীদের আবেদন পৌঁছে যায় লর্ড মাউন্টব্যাটনের কানে। তিনি ব়্যাডক্লিফকে তাঁর ম্যাপের ত্রুটি সংশোধন করার নির্দেশ দেন। ১৭ অগাস্ট রাতে নতুন করে তৈরি হয় ম্যাপ (Indian Map Correction)। ১৮ অগাস্ট ভোরের আলো ফুটতেই কৃষ্ণনগর-শান্তিপুর-বালুরঘাট-মুর্শিদাবাদের বিভিন্ন এলাকায় জাতীয় পতাকা তুলে স্বাধীনতার আনন্দে মেতে ওঠেন এলাকাবাসী।
১৯৯১ সালে প্রধানমন্ত্রী পি ভি নরসীমা রাও (Former PM PV Narasimha Rao) নদিয়ার শিবনিবাস গ্রামকে (Shivnibas Village) ১৮ অগাস্ট স্বাধীনতা দিবস পালনের আনুষ্ঠানিক ভাবে অনুমতি দেন। সেই ঐতিহ্যকে সামনে রেখে আজও দেশ স্বাধীন হওয়ার তিনদিন পর নদিয়া-মুর্শিদাবাদ-মালদহের বেশকিছু এলাকায় ১৫ এবং ১৮ অগাস্ট, এই দু'দিন পালন করা হয় স্বাধীনতা দিবস। তারপর থেকে এই ধারা বেশ কিছু জেলায় এখনও সাড়ম্বরে পালিত হয়। যার মধ্যে আছে কৃষ্ণনগর, শান্তিপুর, কল্যাণী, রাণাঘাট,শিকারপুর, করিমপুরের মতো শহর। আছে মালদার রতুয়া গ্রাম, দক্ষিণ দিনাজপুরের বালুরঘাট।