মায়ের পুজো, তবু তাঁরই আরাধনায় বহু যুগ ব্রাত্য ছিলেন মেয়েরাই। কালে কালে সে বেড়া ভেঙেছে। গত বছরের মতো এ বছরেও দক্ষিণ কলকাতার ৬৬ পল্লীর পুজোয় এবার মা দুর্গার আরাধনা করবেন চার মহিলা পুরোহিত। রবিবার হয়ে গেল খুঁটি পুজো। এবারের পুজোর থিমই দুর্গতিনাশিনী।
সংস্কৃতের অধ্যাপিকা নন্দিনী ভৌমিক ও তাঁর দল 'শুভম অস্তু'-র কাঁধে গত বছরেওই প্রথম মাতৃ আরাধনার গুরু দায়িত্ব পড়েছিল৷ রীতিমতো সাড়া ফেলে দিয়েছিল তাঁদের কর্মকাণ্ড। এবারেও ৬৬ পল্লির পুজো তাঁদেরই হাতে। নন্দিনী ছাড়াও দলে রয়েছেন আরো তিন মেয়ে- সেমন্তী, রুমা, পৌলমী।
শহরের একাধিক বিবাহে পৌরোহিত্য করেন তাঁরা। কিন্তু মা দুর্গার পুজো প্রথম করেন ২০২১-এই।
বিষয়টা কেবল পুজো করা নয়, মাতৃ আরাধনার আড়ালে সামাজিক বেড়া ভাঙার লড়াই। একবিংশ শতকে পুরুষের সঙ্গে সমান তালে যে কোনও ক্ষেত্রেই সফল হয়েছেন মহিলারা। তবে পৌরোহিত্যে কেন ব্রাত্য তাঁরা? এই ভাবনা থেকেই বেড়া ভাঙার লড়াই।
নন্দিনী ভৌমিক ছিলেন কলকাতার লেডি ব্রেবোর্ন কলেজের সংস্কৃত ভাষা ও সাহিত্যের ছাত্রী। সেখানে তাঁর অধ্যাপিকা ছিলেন গৌরী ধর্মপাল। তিনি বেদে উল্লিখিত বিবাহের নিয়মাবলি একসূত্রে গেঁথে এবং তার সঙ্গে এ যুগের উপযোগী নানা বিষয় যোগ করে একটি বিবাহপদ্ধতি তৈরি করেছিলেন, যার নাম ‘পুরোনো নতুন বৈদিক বিবাহ’, তিনিই এই যজ্ঞের পৌরোহিত্য করতেন প্রথমে।
Lokkhi Chhele Trailer out :'মানুষের বাঁচা মরা তাদের এখনও ভাবায়', প্রকাশ্যে 'লক্ষ্মী ছেলে'-র ট্রেলার
ছাত্রাবস্থা শেষ করে নন্দিনীও অধ্যাপনা শুরু করেন। তাঁর দুই কন্যা রয়েছে। নন্দিনী জানান, গৌরী ধর্মপালই তাঁদের প্রস্তাব দেন বিবাহের পুরোহিত হওয়ার। তাঁরা দীক্ষিত হন। গত প্রায় ন’-দশ বছর ধরে তাঁরা বিয়ে দিচ্ছেন।
নন্দিনীদের বিবাহ পদ্ধতি কিন্তু একটু অন্যরকম। শুভদৃষ্টি, মালাবদল, সিঁদুরদান হলেও কন্যাদান বা কনকাঞ্জলির মতো আচারগুলিকে তাঁরা বাদ দিয়েছেন। এবার তাঁদের দুর্গাপুজো দেখার প্রস্তুতি শহরে।