আসানসোলে (Asansole) তৃণমূলের (Tmc) ইতিহাস- (History)। ২ লক্ষ ৯৩ হাজার ভোটে জিতে বিজেপিকে (Bjp) উড়িয়ে দিলেন তৃণমূল প্রার্থী শক্রঘ্ন সিনহা (Satrugan Sinha)। গত দেড় দশক রাজ্যে ক্ষমতায় তৃণমূল কংগ্রেস। কিন্তু কখনও দোলা সেন (Dola Sen), কখনও মুনমুন সেনকে (Moonmoon Sen) ভোট দাঁড় করিয়েও আসানসোল অধরাই ছিল রাজ্যের শাসক দলের কাছে। কিন্তু এবারের উপনির্বাচনে সেই অধরা আসানসোল জিতে নিল তৃণমূল কংগ্রেস। এবং জিতল আগামী লোকসভা ভোটের ঠিক দেড় বছর আগে। বাবুল সুপ্রিয় (Babul Supriyo) সংসদ পদ থেকে ইস্তাফা দেওয়ায় এই কেন্দ্রে উপনির্বাচন হয়। প্রার্থীর নাম ঘোষণার মধ্যেই চমক দিয়েছিলেন তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বিজেপি কিছু ভেবে ওঠার আগেই বাবুলের আসানসোলে তৃণমূল প্রার্থী করে আর এক প্রাক্তন কেন্দ্রীয়মন্ত্রী ও প্রাক্তন বিজেপি নেতা শক্রঘ্ন সিনহাকে। একদিকে গ্ল্যামার কোসেন্ট, অন্যদিকে দিল্লির রাজনীতির অভিজ্ঞতা, এই দুটোকে কাজে লাগাতেই শক্রঘ্নকে আসানসোলে প্রার্থী করেছিলেন তৃণমূল নেত্রী। রাজনৈতিক মহলের মতে, ২০১৪ এবং ২০১৯ সালে হার থেকে শিক্ষা নিয়ে এবার আসানসোলে কাঁটা দিয়ে কাঁটা তুলতে চেয়েছিলেন মমতা। আর তাতেই সাফল্য এসেছে। শেষবার এই কেন্দ্র থেকে ১ লক্ষ ৯৯ হাজার ভোটে জিতেছিলেন বাবুল। এবার সেই মার্জিনকে ছাপিয়ে ২ লক্ষ ৯৩ হাজার ভোটে জয়ী শক্রঘ্ন সিনহা।
স্বাধীনতার পর থেকেই এই শিল্প শহর বামেদের (Left) দূর্গ বলেই পরিচিত ছিল। ২০০৯ পর্যন্ত তা অটুট ছিল। কিন্তু ২০১৪ সালে তা প্রথম ভেঙে দেন তৎকালীন বিজেপি সাংসদ বাবুল সুপ্রিয়। এরপর ২০১৯ সালেও বাবুলের জয়ের ধারা অব্যাহত ছিল। কিন্তু বাবুল বিজেপি ছাড়তেই অস্বস্তি বাড়ে বিজেপিতে। তাই এবার আসানসোল দক্ষিণের বিধায়ক অগ্নিমিত্রা পলকে প্রার্থী করে এই কেন্দ্র ধরে রাখার চেষ্টা করেছিল গেরুয়া শিবির। কিন্তু নিজের প্রাক্তন দলকেই এবার খামোশ করে দিলেন শক্রঘ্ন। উল্টে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে দিলেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীকে (Suvendu Adikari)। কারণ, শুভেন্দু-জিতেন্দ্ররদের দায়িত্বে আসানসোল পুনরুদ্ধারে স্বপ্ন দেখেছিল বিজেপি। কিন্তু দেখা গেল শুভেন্দু-জিতেন্দ্র মিলে অগ্নিমিত্রার লোকসভা বৈতরণী পার করা তো দূর অস্ত, নিজেদের জেতা বিধানসভা কেন্দ্রও হারিয়ে বসলেন। এই ভোটে তৃণমূলকে সবচেয়ে বেশি লিড দিয়েছে পাণ্ডবেশ্বর।
আরও পড়ুন : দুই কেন্দ্রের জয়কে 'নববর্ষের উপহার' বলে টুইট মুখ্যমন্ত্রীর, ধন্যবাদ জানালেন ভোটারদের
সকাল থেকে আসানসোলের গণনা ছিল মার্কিন বাস্কেটবলের রেজাল্টের মতো। মোট সাতটি বিধানসভার মধ্যে এক সময় তিন বিজেপি, এবং তিনটি তৃণমূল কংগ্রেসের মধ্যে লড়াই চলছিল। কিন্তু বেলা বাড়তেই সব শেষ। প্রথমে পিছিয়ে থাকা রানিগঞ্জ, কুলটি দখলের পর, অগ্নিমিত্রা পলের আসানসোল দক্ষিণও এই উপ-নির্বাচনে কব্জা করে নিল তৃণমূল কংগ্রেস। রাজনৈতিক মহল বলে, উপ-নির্বাচন সবসময় সরকারের পক্ষে থাকে। কিন্তু এই রাজ্যে বিজেপি আবার তা ভুল প্রমাণ করল। এর আগে খড়গপুর বিধানসভায় উপনির্বাচনে হেরেছিল বিজেপি। সেবার বিধায়ক থেকে সাংসদ হয়েছিলেন দিলীপ ঘোষ। আর এবার আসানসোলেও এক ছবি।
রাজনৈতিক মহলের দাবি, গত দেড় দশকের শাসনে মাত্র কয়েক মাসের ব্যবধানে দুটি নজির তৈরি করলেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এক চার পুরনিগমের ভোটে শিলিগুড়ি দখল করা, আর দুই অধরা আসানসোলে ইতিহাস তৈরি করা। বিরোধীরা এই ভোটেও আগাগোড়া সন্ত্রাসের অভিযোগ তুলে এসেছে। কিন্তু তৃণমূলের দাবি, মানুষ প্রমাণ করল মমতার প্রতি এই বাংলা কৃতজ্ঞ। তাই আনিশ হত্যা থেকে বগটুই কোনও কিছুই প্রভাব ফেলতে পারল না এই ভোটে। ঘৃণা থেকে মুক্তির দিকে এক কদম এগোল দেশ। বালিগঞ্জ ও আসানসোল জয়ের পর টুইট অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের।