ভোট পন্ডিতরা দাবি করেন, ২০১১ সালে বাংলার (West Bengal) মসনদে ক্ষমতা দখলের পর তৃণমূলকে (Tmc) সবচেয়ে কঠিন নির্বাচনের মুখোমুখি হতে হয়েছিল ২০২১ সালে। এই দশ বছরে ভোট ময়দানে সারদা-নারদার মতো দুর্নীতির (Corruption) অভিযোগকে অতিক্রম করলেও, ২০২১ সালে বাংলার বিধানসভা নির্বাচন (Asembly Vote) ছিল কার্যত তৃণমূলের কাছে মর্যাদার লড়াই। কারণ, ২০১৯ সালে লোকসভা ভোটে (Lokshabha Election) রাজ্যে যে ভাবে বিজেপির (Bjp) উত্থান হয়েছিল, তাতে অনেকেই মনে করেছিলেন, সেই ফলেই জোরেই হয়তো রাজ্যে ক্ষমতায় আসছে গেরুয়া শিবির। আর সেই পরিস্থিতিতে গেরুয়া শিবিরের হাত শক্ত করেছিলেন একাধিক তৃণমূল নেতা। যাঁরা অভিযোগ করেছিলেন, তৃণমূলে কাজ করতে পারছেন না। তৃণমূলে তাঁদের কোনও সম্মান নেই। একে একে দল ছেড়ে ছিলেন বেশ কয়েকজন হেভিওয়েট।
কলকাতায় (Kolkata) প্রথম জনসভা করে বাংলা জয়ের গর্জন তুলেছিলেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী (Narendra Modi)। এরপর বাকি সময়টা কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বাংলা চষে এবার দুশো পার করার স্লোগান। বাংলার বিধানসভা ভোটের মাঠে বিজেপির কর্মকাণ্ড দেখে রাজ্য-রাজনীতির একাংশ মনে করতে শুরু করেছিলেন, ভোট বাক্সে ক্ষমতা ধরে রাখা সত্যিই কঠিন হতে পারে তৃণমূলের কাছে। কারণ, তাঁদেরকে বারবার ভাবাচ্ছিল ২০১৯ সালে বিজেপির উত্থান। আর সেইসঙ্গে উত্তরবঙ্গের একাধিক জেলায় তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের অভিযোগের ছবিটা।
কিন্ত তিনি চ্যালেঞ্জ নিতে ভালবাসেন। কারণ তাঁর রাজনৈতিক জীবন আগাগোড়া চ্যালেঞ্জে মধ্যে দিয়ে সাফল্যকে স্পর্শ করেছে। তাই বাংলার বুকে এক ইঞ্চি জমি ছেড়ে না দিয়ে বিজেপির বিরুদ্ধে কার্যত একাই রুখে দাঁড়িয়েছিলেন। ২৯৪ জন প্রার্থীর জন্য প্রচারে নির্বাচনের আগের কয়েকমাস চষে ফেলেছিলেন উত্তর থেকে দক্ষিণ। মধ্য থেকে গোটা জঙ্গলমহল। প্রাণকেন্দ্র ভবানীপুর ছেড়ে নিজেকে তাঁর নিজের নন্দীগ্রামের প্রার্থী ঘোষণা করে চমকে দিয়েছিলেন রাজনৈতিক মহলকে। প্রতিটি জনসভায় বাংলার মানুষকে বুঝিয়েছিলেন উন্নয়নই একমাত্র রাস্তা। ধর্মীয় মেরুকরণ মানুষের জীবনে শান্তি আনতে পারে না। তাই ভাঙা পা নিয়েও বাংলার মানুষকে তাঁর উপরেই আস্থা রাখতে বলেছিলেন। তিনি বাংলার মেয়ে তথা তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। আজ থেকে ঠিক একবছর আগে এমনই দোসরা মে খুলেছিল বাংলার রাজনীতির আকাশে ইভিএমের বাক্স। এরপর বাকিটা ইতিহাস।
গত এক বছরে গঙ্গা দিয়ে গ্যালন গ্যালন জল বয়ে গিয়েছে। রাজনৈতিক মহলের দাবি, তাতে একফোঁটাও টোল পড়েনি মমতা ম্যাজিকে। বাংলা থেকে বিজেপিকে হারিয়ে তৃণমূল নেত্রী এখন জাতীয় রাজনীতিতে মোদী বিরোধী সবচেয়ে বড় মুখ। তাতে অবশ্য তাঁর উন্নয়নের কাজে কোনও ফাঁক পড়েনি। যার প্রমাণ রাজ্য সদ্য শেষ হওয়া পুরনিগম থেকে দুটি উপনির্বাচন। রাজনৈতিক মহলের দাবি, পুরনিগমে তৃণমূলের সবচেয়ে বড় সাফল্য এগারো বছরে এই প্রথম শিলিগুড়ি জয়। আর তা সম্ভব হয়েছে মমতার উন্নয়ন দাওয়াইয়ে। সাধারণ মানুষের কাছে ফ্যাক্টর হয়েছে দুয়ারের সরকারের মতো সরকারি প্রকল্প। আর এই এগারো বছরে আরও একটা ইতিহাস তৈরি করেছে তণমূল কংগ্রেস। আর তা হল অধরা আসানসোলে রেকর্ড ভোটে জয়। লোকসভার উপনির্বাচনের প্রচারে যাননি তৃণমূল নেত্রী। কিন্তু শক্রঘ্ন সিনহাকে তৃণমূলের প্রার্থী করে অধরা আসানসোল জয়ের নেপথ্যে সেই মমতা।
বছর ঘুরে আজ আরও একটা দোসরা মে। রাজনৈতিক মহলের মতে, এই একবছরে বাংলা জুড়ে শুধু তৃণমূল। সৌজন্যে একজনই। তিনি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।