তৃণমূল কংগ্রেসের শহিদ দিবস। ধর্মতলা চত্বরে প্রতিবছরই রাজ্যের শাসক দলের তরফে আয়োজন করা হয় এই সমাবেশের। অন্য বছরের তুলনায় এবারের শহিদ দিবস বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। তার পিছনে কয়েকটি কারণও রয়েছে। প্রথমত লোকসভা নির্বাচনে ভালো ফল করেছে রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস। দ্বিতীয়ত সম্প্রতি চারটি বিধানসভা উপনির্বাচনের ফলফলেও সবুজ ঝড় স্পষ্ট। তারপরই তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছিলেন, লোকসভা ও বিধানসভা উপনির্বাচনে জয়ের উদযাপন করবেন শহিদ দিবসের মঞ্চে। সেকারণে রাজনৈতিক মহলের ধারণা এবারের ২১ শে জুলাই তাৎপর্যপূর্ণ এবং বিশেষ বার্তা দিতে পারেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
কিন্তু কী কারণে ২১ শে জুলাই পালন করা হয়?
১৯৯৩ সাল। তখনও জন্ম হয়নি তৃণমূল কংগ্রেসের। তৎকালীন সময়ে যুব কংগ্রেসের সভানেত্রী পদে ছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়। এবং রাজ্য শাসনের ভার বামফ্রন্টের উপর। মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন জ্যোতি বসু এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পদে ছিলেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য।
নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা আনার দাবি তোলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর দাবি ছিল, নো এপিক কার্ড, নো ভোট। অর্থাৎ সচিত্র ভোটার কার্ড ছাড়া ভোটদান করা যাবে না। আর এই দাবি নিয়েই ১৯৯৩ সালের ২১ জুলাই মহাকরণ অভিযানের ডাক দেওয়া হয়।
ওইদিন সকাল থেকে ১০ টা থেকে জমায়েত শুরু হয়। রাস্তায় নামেন খোদ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মমতার সঙ্গে ছিলেন সৌগত রায়, শোভনদেব চট্টোপাধ্য়ায়, জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক, মদন মিত্র সহ প্রমূখ নেতারা। ওই কর্মসূচিতে শামিল হয়েছিলেন প্রায় কয়েক হাজার কংগ্রেস সমর্থক।
এদিকে মিছিল আটকাতে প্রচুর পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছিল। কলকাতা শহরের বিভিন্ন এলাকায় ব্যারিকেড করা হয়েছিল। যদিও পুলিশি বাধা পেয়ে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে পরিস্থিতি। অভিযোগ ওঠে, পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট ও পাথর মারতে শুরু করেন আন্দোলনকারীরা। পালটা পুলিশের তরফে কাঁদানে গ্যাসের শেল ফাটানো হয়।
প্রবল ধস্তাধস্তি এবং কাঁদানে গ্যাসের ফলে অসুস্থ হয়ে পড়েন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তারপর পুরো পরিস্থিতি কার্যত রণক্ষেত্রর চেহারা নেয়। অভিযোগ, সেইসময় উত্তেজিত যুব কংগ্রেস কর্মীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে তেড়ে যায় এবং পুলিশকে বাধা দিতে থাকে। সেইসময় পুলিশের তরফে গুলি চালানো হয় বলেও অভিযোগ। ঘটনায় ১৩ জন যুব কংগ্রেস কর্মীর মৃত্যু হয়। মৃতদের স্মরণেই পালন করা হয় শহিদ দিবস।
মৃতদের নাম-
শ্রীকান্ত শর্মা, দিলীপ দাস, মুরারী চক্রবর্তী, রতন মণ্ডল, কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়, বিশ্বনাথ রায়, অসীম দাস, কেশব বৈরাগী, রঞ্জিত দাস, প্রদীপ রায়, বন্দনা দাস, ইনু মিঞা এবং আবদুল খালেক।
এরপর কংগ্রেস ছেড়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বর্তমানে তৃণমূল কংগ্রেসের সুপ্রিমো তিনি। যদিও বছরের পর বছর ২১ জুলাই পালন করে আসছে তৃণমূল কংগ্রেস। এবছরও মঞ্চে থাকবেন তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী। ইতিহাস তুলে ধরার পাশাপাশি বার্তা দেবেন দলের কর্মী ও নেতাদের।