ভয়াবহ পরিস্থিতি সিকিমে। বিপদসীমার প্রায় কাছ দিয়ে বইছে তিস্তার জল। হাজার হাজার পর্যটক আটকে পড়েছেন বিভিন্ন এলাকায়। আতঙ্ক গ্রাস করেছে তিস্তাপাড়ের বাসিন্দাদের। কিন্তু কেন?
মৌসম ভবনের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, নির্দিষ্ট সময়ের ৬ দিন আগে উত্তরবঙ্গে প্রবেশ করেছে বর্ষা। ফি বছর , ৭ জুনের আশপাশে মৌসুমী বায়ু উত্তরে প্রবেশ করলেও এবছর ঢুকেছে ৩০ মে। ফলে চলতি মাসের শুরু থেকেই উত্তরের জেলাগুলিতে শুরু হয়েছে ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টি। এমনকি লোকসভা ভোট চলাকালীনও প্রবল বর্ষণ হয়েছিল। কিন্তু মাত্র কয়েকদিনের বৃষ্টিতে তিস্তার এই রূপ কেন? কী কারণে জলমগ্ন সিকিম সহ উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন এলাকা? সেই বিষয়ে জানার আগে জেনে নেওয়া যাক চলতি মরশুমে উত্তরবঙ্গে বৃষ্টির পরিমাণ-
সিকিম আবহাওয়া দফতরের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী বুধবার শুধুমাত্র ৬১ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। গেজ়িংয়ে বৃষ্টি হয়েছে ৬৫ মিলিমিটার। দক্ষিণ সিকিমের রাভাংলাতে বৃষ্টি হয়েছে ১১৯.৫ মিলিমিটার। আর উত্তর সিকিমে শুধু মঙ্গনেই ২২০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে।
উত্তর সিকিমে প্রবল বৃষ্টি হলেও উত্তরবঙ্গে মাঝারি বৃষ্টিই হয়েছে। তারপরেও কেন এই ভয়াবহ রূপ তিস্তার। কেন বিস্তীর্ণ এলাকা ভেসে যাচ্ছে?
এবিষয়ে একাধিক কারণ জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। গত বছরের অক্টোবর মাসে প্রবল বৃষ্টির জেরে হড়পা বানের প্রসঙ্গ তুলে এনেছেন তাঁরা। সেই সময় হড়পা বানে চুংথাম বাঁধ ভেঙে বিপর্যয় হয়। ওই বাঁধ ভাঙার ফলে, জলের সঙ্গে পাথর, বালি পলি-সহ অনেক কিছুই নীচের দিকে নেমে এসেছে। যা তিস্তা নদীর বিভিন্ন নদী খাতে জমা হয়েছে। ফলে গভীরতা কমেছে এবং অতি দ্রুত জলস্তর বাড়তে শুরু করেছে। অন্যদিকে তাঁর যুক্তি, সেবক থেকে রংপো পর্যন্ত রেল সুরঙ্গ তৈরি করার সময় বালি-পাথরও নদীতে পড়েছে। সেকারণেও গভীরতা কমার সম্ভাবনা রয়েছে। আর সেই কারণে অল্প বৃষ্টির জলও ধারণ করতে পারছে না তিস্তা। যার ফল ভুগতে হচ্ছে তিস্তাপাড়ের বাসিন্দাদের।
একই যুক্তি পরিবেশবিদদেরা। তাঁদের দাবি, এমন কিছু বৃষ্টি হয়নি যে তিস্তা এখনই ভয়াবহ রূপ ধারণ করবে। যদিও এবিষয়ে তাঁরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তাঁর বক্তব্য যদি এখনই এই পরিস্থিতি তৈরি হয় তাহলে ভরা বর্ষায় আরও ভয়াবহ রূপ ধারণ করার সম্ভাবনা রয়েছে।
জলস্তর কমাতে ইতিমধ্যে একাধিক পদক্ষেপ নিচ্ছে স্থানীয় প্রশাসন। তিস্তা ব্যারাজ থেকে জল ছাড়া শুরু হয়েছে। আপাতত ১১০০ কিউসেক জল ছাড়া হয়েছে। সেই কারণে বন্যা পরিস্থিতি কিছুটা সামাল দেওয়া সম্ভব হবে বলে মনে করা হচ্ছে।