বিশ্বকাপ জয়। একটাই স্বপ্ন, জাতীয় দলের জার্সিতে ওই ট্রফি হাতে তোলা। লর্ডসে কপিল দেবের হাতে ট্রফি ছবি সবারই যেন অনুপ্রেরণা। ২০১১ বিশ্বকাপ জয়ের ম্যাজিক মোমেন্ট ধোনির শেষ ওভারে ওই ছয়। এসব মুহূর্তগুলোর জন্যই তো ক্রিকেট খেলা শুরু করেন তরুণরা। তবে এমন ক্রিকেটারও আছেন, যারা দীর্ঘদিন জাতীয় দলকে অনেক সাফল্য এনে দিয়েছেন। তৈরি করেছেন অনেক রেকর্ড। গড়েছেন সেরা সেরা মুহূর্ত। কিন্তু ওয়ানডে বিশ্বকাপে সুযোগ পাননি। পরিস্থিতি, পরিবেশ, সেই সময়কালে প্রয়োজনীয় দল নির্বাচন, তাদেরকে অনেকটা দূরে সরিয়ে দিয়েছে। ক্রিকেটে তাঁরাও কিংবদন্তী। কিন্তু দুর্ভাগ্য এটাই, যে তাঁরা বিশ্বজয়ী টিমের সদস্য থাকতে পারেননি।
ইশান্ত শর্মা
২০০৭ সালে জাতীয় দলে অভিষেক হয় দিল্লির ছেলে ইশান্ত শর্মার। বলে গতি আর সুইং ছিল। তাঁর পেস নিয়ে সেই সময় গর্ব ছিল ক্রিকেটপ্রেমীদের। জাহির খানের সঙ্গে ইশান্ত শর্মা থাকা মানেই বিপক্ষের জন্য মুশকিল। অস্ট্রেলিয়া সফরে ইশান্তের সাফল্য যে কোনও পেসারের কাছেই ঈর্ষার কারণ। ২০১১ বিশ্বকাপে কিন্তু প্রথম একাদশে সুযোগ পাননি ইশান্ত শর্মা। চোটের জন্য বাদ পড়েন তিনি। দেশের হয়ে ১০০-এর বেশি টেস্ট ম্যাচ খেলেন তিনি।
ওয়ানডে ক্রিকেটেও তাঁর ১১৫টি উইকেট আছে। তবু সুযোগ হয়নি।
ভিভিএস লক্ষ্মণ
টেস্ট ক্রিকেটে ভাল খেলেন, কিন্তু ওয়ানডে ক্রিকেটে মানানসই নন। অনেক ক্রিকেটারকে নিয়েই এমন ধারণা ছিল। এই তালিকায় ছিলেন রাহুল দ্রাবিড় ও ভিভিএস লক্ষ্মণ। ২০০৩, ২০০৭- দুটি বিশ্বকাপে ছিলেন দ্রাবিড়। কিন্তু কোনও বিশ্বকাপেই সুযোগ পাননি ভিভিএস লক্ষ্মণ। ১৩০টি টেস্টে লক্ষ্মণের ৮০০০-এর বেশি রান আছে। গড় ৮৬। কিন্তু মাত্র ৮৬টি ওয়ানডে ম্যাচ খেলেছেন তিনি। ওয়ানডে ক্রিকেটের সেই টেম্পারমেন্টই খুঁজে পাননি লক্ষ্মণ। ফলে তাঁর বিশ্বকাপ খেলার স্বপ্ন অধরাই থেকে গিয়েছে।
ইরফান পাঠান
বিশ্বকাপ খেলেননি কিন্তু তিনি কিংবদন্তী। ভারতীয় দলে এমন একটি চমকের নাম ইরফান পাঠান। নতুন বলে পাঠানের সুইং ছিল অপ্রতিরোধ্য। ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকার মতো তাবড় তাবড় টিমেরও ত্রাস ছিলেন। টেস্ট ম্যাচে প্রথম ওভার বল করতে এসে হ্যাটট্রিকও করেছিলেন পাঠান। কিন্তু এমন ক্রিকেটার কিন্তু বিশ্বজয়ী টিমের সদস্য নন। ২০০৭ বিশ্বকাপে সুযোগ পেলেও প্রথম একাদশে ছিলেন না। মাত্র ৩টি ম্যাচেই সেই বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে যায় ভারত। ২০১১ বিশ্বকাপে দলে তখন অনেক নতুন মুখ। ২০১২ সালে অবসর নিয়ে ফেলেন পাঠান। ওয়ানডে ক্রিকেটে তাঁর কেরিয়ারে রয়েছে ১৭৩টি উইকেট।
অম্বতি রায়াডু
ফর্মে থাকা সত্ত্বেও কেন বিশ্বকাপ টিমে সুযোগ পাননি। ২০১৯ বিশ্বকাপে অন্যতম চর্চার কারণ হয়ে উঠেছিলেন অম্বতি রায়াডু।সেই সময় বোর্ডের নির্বাচকরা ব্যস্ত ছিলেন বিজয শঙ্করকে নিয়ে। ওয়ানডে ক্রিকেটে ৪৭ রানের বেশি ব্যাটিং গড় ছিল রায়াডুর। ঘরোয়া ক্রিকেটে ধারাবাহিক ভাবে বড় রান করে গিয়েছেন রায়াডু। গত বছর আইপিএলের পর সব ধরনের ক্রিকেট থেকে অবসর নিয়ে ফেলেন রায়াডু। ঘরোয়া ক্রিকেটে প্রমাণ করেও বিশ্বকাপে খেলা হয়নি তাঁর।
অ্যালিস্টার কুক
ইংল্যান্ড ক্রিকেটের অন্যতম নাম অ্যালিস্টার কুক। টেস্ট ক্রিকেটে একাধিক কীর্তির মালিক তিনি। সেই কুক কিন্তু ইংল্যান্ডের হয়ে কখনও ওয়ানডে বা টি২০ বিশ্বকাপ খেলেননি। ২০০৬ সালে অভিষেক হয় কুকের। ২০১৮ সাল পর্যন্ত দেশের হয়ে খেলেন। ১৬১টি টেস্ট খেলেছেন কুক। ৯২টি ওয়ানডে ক্রিকেট ম্যাচ খেলেছেন কুক। টেস্ট ক্রিকেটে ৩৩টি সেঞ্চুরি ও ৫৭টি হাফসেঞ্চুরি আছে তাঁর। ২০০৭ টি-২০ বিশ্বকাপ ও ২০১১ ওয়ানডে বিশ্বকাপেও সুযোগ পাননি কুক।
জাস্টিন ল্যাঙ্গার
ওয়ানডে বিশ্বকাপে ৬বার বিশ্বকাপ জয়ী টিম অস্ট্রেলিয়া। এত কিংবদন্তী, প্রত্যেকেই প্রায় বিশ্বকাপ জিতেছেন। কিন্তু অস্ট্রেলিয়া টিমের নিয়মিত সদস্য হয়েও বিশ্বকাপ জয়ী টিমে নেই ল্যাঙ্গার। ১৯৯৩ থেকে ২০০৭। ১৪ বছর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে খেলেছেন। ম্যাথু হেডেনের সঙ্গে তাঁর জুটি মানেই বিপক্ষ টিমের আতঙ্কের কারণ। ১০৫টি টেস্টে ল্যাঙ্গার ২৩টি সেঞ্চুরি ও ৩০টি হাফসেঞ্চুরি করেছেন। অবসরের পর ২০১৮-২০২২ সাল পর্যন্ত অস্ট্রেলিয়া টিমের হেড কোচ ছিলেন তিনি। বর্তমানে আইপিএল টিম লখনউ সুপার জায়ান্টসের হেড কোচ তিনি।
ম্যাথিউ হগার্ড
২০০০-২০০৮। ইংল্যান্ড ক্রিকেটে মার্টিন হগার্ডের স্বর্ণালী অধ্যায়। এই কয়েকবছরে নিজের জাত চিনিয়েছেন তিনি। কিন্তু ইংল্যান্ড হয়ে ক্রিকেট খেলে সেই সম্মানও পাননি হগার্ড। ২০০৩ বিশ্বকাপ টিমে সুযোগ পেলেও একটি ম্যাচও খেলেননি তিনি। ২০০৫ সালে অ্যাসেজ সিরিজে হগার্ডের পারফরম্যান্স ক্রিকেট ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে থাকবে।