ভারতীয় ক্রিকেটে রাহুল যুগের পর কে? এই প্রশ্নের উত্তর খোঁজা শুরু হয়ে গেল টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের অনেক আগে থেকেই। কারণ ইতিমধ্যেই বোর্ড সচিব জয় শা জানিয়েছেন, টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের পরে ভারতীয় কোচের পদে নতুন ব্যক্তিকে নিয়োগ করা হবে। শা-এর এই বক্তব্যের আসল নির্যাস খুঁজতে পিছিয়ে যেতে হবে গত বছরের নভেম্বরে। কী সেই গল্প?
আহমেদাবাদে বিশ্বকাপ ফাইনাল। সব ম্যাচ জিতেও রোহিতের ঝুলিতে অধরা বিশ্বকাপ। নরেন্দ্র মোদী স্টেডিয়ামে সেই রাতেই ভারতীয় কোচের পদ থেকে নিজেকে সরিয়ে নেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেন রাহুল দ্রাবিড়। প্রথম কয়েকদিন এই খবর ধামাচাপা পড়লেও পরে তা বাইরে বেরিয়ে আসে। দক্ষিণ আফ্রিকা সফরের আগে জরুরি তলব করা হয় দ্রাবিড়কে। জয় শা-দের অনুরোধে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ পর্যন্ত কাজ চালিয়ে যাওয়ার ব্যপারে সম্মতি জানান রাহুল। তবে, তাঁর পারিশ্রমিক ওই বৈঠকে কত হয়েছিল তা এখনও অজানা ভারতীয় ক্রিকেটের কাছে।
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের পরে নতুন কোচ আসবেন ভারতীয় ক্রিকেটে। তার আগে একনজরে দেখে নেওয়া যাক, কোচ হিসেবে রাহুল দ্রাবিড়ের সাফল্যকে। ২০২১ সালে ভারতীয় সিনিয়র দলের কোচ হিসেবে দায়িত্ব নেন রাহুল দ্রাবিড়। তাঁর কোচিংয়ে ২৫টি টেস্ট খেলেছে ভারত। এরমধ্যে জিতেছে ১৪টি টেস্ট। হার সাতটিতে। ড্র হয়েছে ৪টি টেস্ট। তবে, উল্লেখযোগ্য হার, বিশ্বটেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনাল। ৫০ ওভার এবং ২০ ওভারের কোনও বিশ্বকাপই নেই সিনিয়র দলের কোচ দ্রাবিড়ের ঝুলিতে। ৫৩ টি একদিনের ম্যাচে ভারতের জয় ৪০টিতে। ৬৭টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচে টিম ইন্ডিয়া জিতেছে ৪৫টি ম্যাচে।
এই পরিস্থিতিতে নতুন কোচ চেয়ে বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড। রোহিত বিরাটদের কোচের যোগ্যতা হিসেবে দাবি করা হয়েছে,
১. কোচ হওয়ার জন্য কমপক্ষে ৩০টি টেস্ট অথবা ৫০টি একদিনের ম্যাচ খেলার অভিজ্ঞতা থাকতে হবে।
২. আবেদনকারীকে আইসিসির অন্তর্গত কোনও পূর্ণ সদস্য দেশের ক্রিকেটার হতে হবে।
৩. কোনও দেশের জাতীয় দলের কোচ হিসেবে দুই বছর। আইপিএল বা সম মানের বিদেশি কোনও লিগের ফ্র্যাঞ্চাইজির কোচ হিসাবে অন্তত তিন বছর কাজ করার অভিজ্ঞতা থাকতে হবে।
৪. বিসিসিআইয়ের থার্ড লেভেল অথবা সমতুল কোচিং ডিগ্রি থাকতে হবে, বয়স হতে হবে ৬০ বছরের কম।
বিসিসিআইয়ের দেওয়া বিজ্ঞাপন অনুযায়ী, প্রায় সাড়ে তিন বছর মেয়াদের জন্য নতুন কোচ নিযুক্ত করা হবে। আগামী ২৭ মে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত আবেদন করা যাবে। কোচের মেয়াদ হবে ২০২৪ থেকে ২০২৭ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত।
ইতিহাস বলছে, ভারতীয় ক্রিকেট দলের প্রথম কোচ ছিলেন কোকি তারাপোর। কর্নাটকের প্রাক্তন এই ক্রিকেটার একজন খেলোয়াড়ের থেকেও বেশি একজন কোচ ছিলেন। ১৯৭১ সাল থেকে তিনি ভারতীয় ক্রিকেট দলকে কোচিং করান। এরপর একে একে এই গুরুদায়িত্ব সামলেছেন হেমু অধিকারী, গুলাব্রয় রামচাঁদ, দত্ত গাইকোয়াড, সেলিম দুররানি এবং অশোক মানকড এই দায়িত্ব সামলেছেন। ১৯৮৩ সালে ভারত বিশ্বকাপ জিতেছিল কোচ ছাড়াই। কপিল দেবের বিশ্বজয়ী দলের ম্যানেজার ছিলেন পি আর মান সিং।
আরও পড়ুন - বছর গড়িয়েছে, চিন্নাস্বামীতেই বিরাট বিতর্কের অবসান, মহারাজের সঙ্গে সৌজন্য কোহলির
ভারতীয় ক্রিকেটের কোচ হিসেবে বিপ্লব ঘটিয়েছিলেন অজিত ওয়াদেকার। অধিনায়ক আজহারউদ্দিনকে সঙ্গে নিয়ে ঘরের মাঠে একাধিক সিরিজ এবং ট্রফি জিতেছিল এই জুটি। পরবর্তী সময়ে ভারতীয় দলের প্রথম বিদেশি কোচ হিসেবে টিম ইন্ডিয়া তৈরি করেছিলেন জন রাইট। অধিনায়ক সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের সঙ্গে তাঁর জুটিতে ২০০৩ সালে দ্বিতীয়বার বিশ্বকাপের ফাইনাল খেলেছিল ভারত। জিতেছিল চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি। অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে টেস্ট জয়ের পিছনেও ছিল রাইট-সৌরভ যুগলবন্দী। এছাড়াও পাকিস্তানের মাটিতে সিরিজ জয় এবং ইডেনে ঐতিহাসিক অস্ট্রেলিয়া বধ এই জুটিরই সাফল্য।
সেই ধারায় ভারতীয় দলে কাজ করেছেন গ্রেগ চ্যাপেল, ডানকান ফ্লেচাররা। তবে, সাফল্য আসেনি। দীর্ঘ সময় পর যে ভদ্রলোকের কৌশলের হাত ধরে ভারত দ্বিতীয়বার বিশ্বকাপ জিতেছিল, তিনি ছিলেন গ্যারি কাস্টেন। তবে, ২০০৭ সালে মহেন্দ্র সিং ধোনির প্রথম টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জয়ের নেপথ্য নায়ক ছিলেন এক ভারতীয়। তাঁর নাম লালচাঁদ রাজপুত।
ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড নতুন কোচ চেয়ে বিজ্ঞাপন দিয়েছে। আর এই বিজ্ঞাপন প্রকাশ হতেই ফের মাথাচাড়া দিচ্ছে কয়েকটি নাম। দৌড়ে ফের শোনা যাচ্ছে রবি শাস্ত্রীর কথা। যিনি ভারতীয় ক্রিকেটের এখনও পর্যন্ত দীর্ঘমেয়াদী কোচ ছিলেন। আর কারা থাকবেন এই তালিকায় তা স্পষ্ট হবে আর কয়েকদিনের মধ্যেই।