লেটস ফুটবল। অন্তত একদিনের জন্য হোক। ভারতীয় ফুটবলকে আজও শীর্ণ শরীরে টেনে নিয়ে যায় কলকাতা ডার্বি। চায়ের দোকান থেকে ড্রয়িংরুম, কলকাতা ডার্বি কি এখনও প্রাসঙ্গিক! ইতিহাস ও ঐতিহ্যকে একই আবেগ দিয়ে বেঁধে রাখা সহজ কাজ নয়। কিন্তু ডার্বি মানে মুঠো করা হাত আকাশে তোলা। ডার্বি মানে কান্নায় মুখ লুকিয়েও গর্বে লাল-হলুদ পতাকাকে জড়িয়ে ধরে ফেরা। প্রজন্মের পর প্রজন্ম কীভাবে এত জনপ্রিয় কলকাতা ডার্বি!
কলকাতা ডার্বির প্রত্যেক প্রতিবেদন বলে উন্মাদনার পারদ চড়ছে। সত্যিই কি সেই উন্মাদনার পারদ চড়ে! এল ক্লাসিকো বা ম্যাঞ্চেস্টার ডার্বির মতো কি সেই উত্তেজনা আছে! একটা সময় কিন্তু ছিল। সেই সময় কলকাতা ডার্বি ছিল অন্যরকম। প্রত্যেকটি ম্যাচ হত আন্তর্জাতিক মানের। সেই সময় কলকাতা ফুটবল কেন এত উচ্চমানের ছিল। কেমন ছিল প্রথম ডার্বি! কেন এই ডার্বি আত্মমর্যাদার লড়াই।
কীভাবে শুরু প্রথম ম্যাচ!
১৯২৫। ঠিক ১০০ বছর আগে প্রথম ডার্বির যুদ্ধ হয়েছিল। কিন্তু সেই প্লট তৈরি হয় আরও ৫ বছর আগে। তখন ব্রিটিশ উপনিবেশ। বিপ্লব ও প্রতিবাদের প্রাণকেন্দ্র ছিল কলকাতা। কোচবিহার কাপে মোহনবাগানের বিরুদ্ধে নেমেছিল জোড়াবাগান ক্লাব। ওই ম্যাচে দলের তারকা ফুটবলার শৈলেশ বসুকে নামায়নি মোহনবাগান। যা দেখে বেশ ক্ষুব্ধ হন জোড়াবাগান ক্লাবের কর্তা সুরেশ চন্দ্র চৌধুরী। তদন্ত করে পরে দেখা যায়, ফুটবল সংক্রান্ত কারণে সেদিন শৈলেশ বসুকে বসিয়ে দেওয়া হয়নি। পূর্ববঙ্গের বাসিন্দা হওয়ায় তাঁকে বসিয়ে দেন বাগান কর্তারা। সেই রাগ থেকেই তৈরি হয়ে গেল নতুন ক্লাব ইস্টবেঙ্গল। ১৯০৫ সালের পর বাংলার ফুটবলে যে বঙ্গভঙ্গ হল, তা আর কোনও দিনই জোড়া লাগল না। সেই থেকে শুরু হয়ে গেল ঘটি-বাঙালের লড়াই। ১৯২৫ সালের ২৮ মে। মোহনবাগান মাঠে প্রথমবার হয় কলকাতা ডার্বি। সেই ম্যাচে মোহনবাগানকে ১-০ গোলের ব্য়বধানে হারিয়েছিল ইস্টবেঙ্গল। গোল করেছিলেন নেপাল চক্রবর্তী। কলকাতা ফুটবলে পূর্ববঙ্গের আবেগের বিষ্ফোরণ ঘটে যায় সেদিন।
কলকাতা ডার্বির পরিসংখ্যান
আইএসএলে প্রথম মরশুম থেকে ছিল না ইস্টবেঙ্গল। এখনও পর্যন্ত আইএসএলে জয় অধরা ইস্টবেঙ্গলের। আটবার মুখোমুখি হয়েছে দুই দল। সাতবার জয়ী মোহনবাগান। একবার হারতে হয়েছে ইস্টবেঙ্গলকে। ২০২০ সালে প্রথমবার আইএসএলে কলকাতা ডার্বি হয়।
আইএসএলে ডার্বির ইতিহাস
২৭ নভেম্বর কলকাতা ডার্বির নতুন ইতিহাস লেখা হয় যুবভারতীতে। ০-২ গোলের ব্যবধানে হারতে হয় ইস্টবেঙ্গলকে। আইএসএল ডার্বিতে প্রথম গোল করেন মোহনবাগানের নারায়ণ দাস। বাগানের হয়ে দ্বিতীয় গোল করেন বলবন্ত সিং। ২০২১ সাল। আইএসএলে দুবার মুখোমুখি হয় ইস্টবেঙ্গল ও মোহনবাগান। দুবারই হারতে হয় ইস্টবেঙ্গলকে। পরপর চার বছর মোহনবাগানকে আইএসএলে আটকে রাখতে পারেনি ইস্টবেঙ্গল। গত মরশুমের প্রথম আইএসএলে মোহনবাগানের বিরুদ্ধে ড্র করে লাল-হলুদ ব্রিগেড। কিন্তু শেষ ডার্বিতে ফের হারতে হয় তাঁদের। এবার আইএসএলে প্রথম ডার্বিতেও জয় ছিনিয়ে নিয়েছে মোহনবাগান। গোল করেন জেমি ম্যাকক্লারেন ও দিমিত্রি পেত্রাতোস।
কলকাতা ডার্বি। ময়দানে যার চলতি নাম 'বড় ম্যাচ'। এই বড় ম্যাচে বেশ কিছু মুহূর্ত এখনও গেঁথে আছে মানুষের মনে।
১৯৭৫ আইএফএ শিল্ড
সাতের দশকে তখন ইস্টবেঙ্গল কলকাতা ফুটবলে রাজার রাজা। টানা ৬ বার কলকাতা লিগে চ্যাম্পিয়ন ছিল ইস্টবেঙ্গল। সেই মরশুমে আইএফএ শিল্ডের ফাইনালে ওঠে ইস্টবেঙ্গল ও মোহনবাগান। সেবার মোহনবাগান টিমকে ৫-০ গোলে হারিয়ে রেকর্ড ব্যবধানে হারায় মোহনবাগান। যা এখনও ইতিহাসের পাতায় সর্বসেরা ডার্বি জয়।
২০০৯ আই লিগ
১৯৭৫ সালের সেই কলঙ্ক কিছুটা হলেও কেটেছে। ২০০৯ সালে ইস্টবেঙ্গলকে ৫ গোল দেয় মোহনবাগান। কিন্তু ৫-০ হয়নি। হজম করতে হয়েছিল ৩টি গোলও।
১৯৯৭ ডায়মন্ড লিগ
১৯৯৭ সালের কলকাতা লিগের ডার্বিও ফুটবলপ্রেমীদের মনে ছবির মতো ভাসে। সেবার মোহনবাগানের কোচ ছিলেন অমল দত্ত। তাঁর ডায়মন্ড সিস্টেম নিয়ে ময়দানে তখন ব্যাপক চর্চা। ইস্টবেঙ্গলের কোচ ছিলেন পিকে বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর ভোকাল টনিকে পাল্টে গিয়েছিল সব চেনা হিসেব। হ্যাটট্রিক করেন বাইচুং ভুটিয়া।
২০০০, জাতীয় লিগ
সেবার জাতীয় লিগে ইস্টবেঙ্গলের হয়ে জোড়া গোল করেন ফাল্গুনী দত্ত। তৃতীয় গোল করেন বিদেশি ফুটবলার জ্যাকসন। বাগানের হয় একমাত্র গোল করেন জোসে রামিরেজ ব্যারেটো।
২০০৭, কলকাতা লিগ
কোচ হিসেবে সেবার অভিষেক করেছিলেন মোহনবাগানের ঘরের ছেলে সুব্রত ভট্টাচার্য। সেবার ৪-১ ব্যবধানে ইস্টবেঙ্গলকে হারায় মোহনবাগান। দীপেন্দু বিশ্বাসের শেষ মুহূর্তের গোলে জয় পায় মোহনবাগান।