ইতিহাসের সিডনিতে এক দশক পর বর্ডার-গাভাসকর ট্রফি হাতছাড়া ভারতের। রোহিত শর্মা, গৌতম গম্ভীরদের প্রাপ্তি বলতে গঞ্জনা আর ভর্ৎসনা। এই সিরিজের মাঝেই বিরাট কোহলিকে নিয়ে অজি মিডিয়ার চাটনি খবরের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিলেন ভারতের প্রাক্তনরা।
কিন্তু সিডনি পরবর্তী সময়ে সেই বিরাটের দিকেই এখন বন্দুক তাক করছেন তাঁরা। ম্যাচ শেষের পর ইরফান পাঠান তো বলেই দিলেন, বিরাট কোহলি মোটেই টিম ম্যান নন। একটা বড় সিরিজ খেলতে হলে ব্যক্তিগত স্তরে কী করছেন, তা ভুলে যেতে হয়। গোটা সিরিজে তাঁকে একই জায়গা বল করে বারবার আউট করেছেন অজি বোলাররা। কেন সেই ভুল থেকে শিক্ষা হল না। কেন হাতের কাছে একজন সুনীল গাভাসকরের মতো কিংবদন্তি থাকার পরেও যোগাযোগের চেষ্টা করলেন না ? নিজের সময় সচিন তেন্ডুলকর কিন্তু এমন ছিলেন না। তাঁকে ভারতীয় ক্রিকেটে সচিনের ছায়া বলা হয়। কিন্তু বিরাট এখনও সচিনের ছায়া হতে উঠতে পারেননি।
ঘরের মাঠে নিউজিল্যান্ডের কাছে গো-হারা হেরে এবার বর্ডার-গাভাসকর ট্রফি খেলতে গিয়েছিল ভারত। ব্যক্তিগত কারণে পার্থে প্রথম টেস্টে ছিলেন না অধিনায়ক রোহিত শর্মা। সেই ম্যাচে অস্ট্রেলিয়াকে ২৯৫ রানে হারিয়ে রেকর্ড তৈরি করেছিল বুমরার ভারত।
সিরিজ শেষের পর প্রাক্তনদের মত, গোটা সিরিজই প্যাভিলিয়ন থেকে বসেই দেখতে পারতেন রোহিত। তাহলে এই দলে আরও একটা বোঝা তৈরি হত না। অ্যাডিলেড থেকে সিডনি। মাঝে একটা ব্রিসবেনে ভারতের মুখ রক্ষা করেছে বৃষ্টি।
ভুলে ভরা ভারত। বলেছেন প্রাক্তনরা। হারের ময়না তদন্তে উঠে আসছে পতনের একাধিক কারণ। পার্থের একটা দ্বিতীয় ইনিংস ছাড়া পুরো সিরিজে ধারাবাহিক ব্যর্থ সিনিয়র ক্রিকেটাররা। প্রতি টেস্টে দলকে ডুবিয়ে গিয়েছে খাতায়-কলমে কাগুজে বাঘ দলের টপ-অর্ডার।
পাঁচ টেস্টে একই জায়গায় বল করে কোহলিকে নাস্তানাবুদ করেছেন অজি ক্রিকেটাররা। তারপরেও তাঁর কোনও শিক্ষা হয়নি। প্রাক্তনদের প্রশ্ন, এত ঔদ্ধত্য কীসের ? তাহলে, কি ভারতের টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাস অজানা বিরাটের ? আর কতদিন নিজের অফ ফর্ম বয়ে বেড়াবেন অধিনায়ক রোহিত। সিডনিতে তিনি সাফাই দিয়েছেন, দলে এত অফ-ফর্ম ক্রিকেটার, তাই নিজেকে সরিয়ে নিয়েছেন। তার আগে মেলবোর্নেই ভারতীয় ক্রিকেটের শেষ নিঃশ্বাস উঠে গিয়েছিল।
বিরাট কোহলি যদি এখনও সচিন তেন্ডুলকর না হয়ে উঠতে পারেন, তাহলে ঋষভ পন্থও এখনও অ্যালভিন কালিচরণ হয়ে উঠতে পারেননি। চারটে ফ্যাঙ্কি শট খেললে গ্যালারি থেকে সস্তার হাততালি পাওয়া যায়, তাতে টেস্ট ক্রিকেটের মানসিকতা গড়ে উঠতে পারে না। এই সিরিজে ঋষভের থেকে বাড়তি দায়িত্ব আশা করা হয়েছিল। কিন্তু দায়িত্ব শব্দটা মনে হয় না তাঁর অভিধানে এখনও তৈরি হয়নি।
এক দলে চারজন উইকেট-কিপার। তারপরেও এই সিরিজে পরোখ করা হল না ধ্রুব জুরেল, শাহবাজ খানকে। পার্থে জুরেল খেলেছিলেন। শাহবাজ এই সফরে শুধুই ট্যুরিস্ট। মাঝপথে অশ্বিনের অবসর আরও ঘেঁটে দিয়ে ভারতীয় স্পিন দফতরকে। তাঁর নামের পাসে রয়েছে ৩২ উইকেট। এরপর সিরিজ যত এগিয়েছে ততই একাকী হয়েছেন যশপ্রীত বুমরা। তিন মাসের মধ্যেও শামিকে ফিট করতে না পারা বোর্ড কর্তাদেরই ব্যর্থতা।
সবমিলিয়ে, এক দশক পর বর্ডার-গাভাসকর ট্রফি হারিয়ে অস্ট্রেলিয়ার মাটি থেকে টিম ইন্ডিয়ার প্রাপ্তি একমাত্র নীতীশ কুমার রেড্ডি। ব্যাট-বল দুটোই করেছেন বছর ২১-এর এই হায়দরাবাদি। সবসময় চেষ্টা করেছেন বুমরাকে বল হাতে সার্পোট দিতে। আর মেলবোর্ন স্মরণীয় হয়ে থাকবে তাঁর লড়াকু শতরানের জন্য।
তাহলে প্রথম বার পাঁচ ম্যাচের বর্ডার-গাভাসকর ট্রফি থেকে কত নম্বর পেলেন কোচ গৌতম গম্ভীর, অধিনায়ক রোহিত শর্মারা ? ১০-এ চার, দাবি প্রাক্তনদের।