প্রথমবার যদি আপনি এই শহরে আসেন, তাহলে একটু চমকে উঠবেন। অস্ট্রেলিয়ার এই শহরে একইসঙ্গে আপনি পেয়ে যাবেন পাহাড় এবং সমুদ্র। অনেকটা দক্ষিণ ভারতের শহর বিশাখাপত্তনমের মত। তাই বছরের এই সময়টা অস্ট্রেলিয়ার এই শহরে ভিড় থাকে অন্যমাসের চেয়ে অনেক বেশি। আসলে ক্রিসমাসের ছুটি উপভোগ করতে অনেকেই ছুটে আসেন দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়ার এই শহরে।
অ্যাডিলেড। একটা সময় ছিল যখন অস্ট্রেলিয়াও ছিল ব্রিটিশ কলোনি। সেইসময় ইংরেজরা নিজেদের হাতে গড়ছিলেন এই শহরকে। তাই অ্যাডিলেডের অনেক পাড়া দেখলে মনে হবে আপনি কলকাতা ডালাহৌসি চত্বরে ঘোরাফেরা করছেন।
ধীরে চলে বলে ট্রামকে কার্যত দুয়োরানি করে দিয়েছে কলকাতা। কিন্তু অ্যাডিলেড তার ঐতিহ্যকে ভোলেনি। বরং আরও আধুনিক সাজে তারা ট্রামকে সাজিয়েছে। তাই, এই শহরে এসে পর্যটকদের প্রাপ্তি হয় ট্রাম ভ্রমণ। আজ থেকে ১৪০ বছর আগে, দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়ার এই শহরে শুরু হয়েছিল ব্যাট-বলের লড়াই। সেই থেকেই বিশ্ব ক্রিকেটে কুলীন এই শহর।
এমনই এক ডিসেম্বর মাসে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে এই শহরে প্রথম টেস্ট ম্যাচ খেলছিল অস্ট্রেলিয়া। পরবর্তী সময়ে দ্য ওভাল হয়ে উঠেছে বিশ্ব ক্রিকেটের অন্যতম পীঠস্থান। আর এই মাঠের সর্বসময়ের ভগবানের নাম স্যার ডোনাল্ড জর্জ ব্র্যাডমান। তাই ওভাল এখনও স্মরণীয় ব্র্যাডম্যানের মূর্তির জন্য।
ভারতীয়দেরও অনেক সুখের স্মৃতি রয়েছে এই দ্য ওভালে। সুনীল গাভাসকর, সচিন তেন্ডুলকর, বিরাট কোহলিদের শতরান মোহিত করেছে ভারতীয় দর্শকদের। তবে এই মাঠে ভারতের সবচেয়ে বড় জয় ২০০৩ সালে। সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে এই মাঠে ভারত অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়েছিল ২২ বছর পর। সৌজন্যে রাহুল দ্রাবিড়ের প্রথম ইনিংসে ২৩৩ এবং দ্বিতীয় ইনিংসে অপরাজিত ৭২ রান।
সময় বদলেছে। কালের নিয়মে পাল্টেছে অ্যাডিলেডও। অস্ট্রেলিয়ার এই মাঠ এখন বিখ্যাত গোলাপি টেস্টের জন্য। যার শুরু ২০১৫ সালে। এই মাঠেই প্রথম দিনরাতের টেস্ট খেলেছিল অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড। ওই ম্যাচ অস্ট্রেলিয়া জিতেছিল তিন উইকেটে।
এই অ্যাডিলেডেই ফের গোলাপি টেস্ট। যার প্রস্তুতি শুরু হয়ে গিয়েছে। চার বছর আগে এই অ্যাডিলেড ছিল ভারতের কাছে অভিশপ্ত। দ্বিতীয় ইনিংসে রান তাড়া করতে নেমে ৩৬ রানে অলআউট হয়ে গিয়েছিল ভারত। সেই স্মৃতি এবার ভুলতে চায় টিম ইন্ডিয়া। ভুলতে চান তৎকালীন অধিনায়ক বিরাট কোহলিও।
প্রথম টেস্টে পার্থ জয়ের পর এবার অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে অন্য ভারত। তবে সমস্যা হচ্ছে শুভমন গিলের চোট নিয়ে। পার্থে প্রস্তুতি ম্যাচে আঙুলে চোট পেয়েছিলেন গিল। সেই চোট এখনও ভোগাচ্ছে তাঁকে। গোলাপি টেস্টের আগে শুভমনের চোট সারবে কীনা, তা নিশ্চিত নয় ভারতীয় টিম ম্যানেজমেন্ট। তবে তার আগে এক নজরে দেখা যাক টেস্ট ক্রিকেটে শুভমন গিলকে।
২০২০ সাল থেকে টেস্ট ম্যাচ খেলছেন শুভমন গিল। এখন পর্যন্ত ২৯টি টেস্ট ম্যাচে ৫৪টি ইনিংস ব্যাট করেছেন ভারতের এই ব্যাটার। এরমধ্যে অপরাজিত পাঁচ বার। আন্তর্জাতিক টেস্ট ক্রিকেটে তাঁর রান ১৮০০। অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ১২৮ রান তাঁর সর্বোচ্চ। গড় ৩৬.৭৫। সঙ্গে রয়েছে পাঁচটি শতরান ও সাতটি হাফসেঞ্চুরি।
অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে বেশ সফল শুভমন। এমনটাই দাবি করছে পরিসংখ্যান। অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ব্যাট হাতে গিলের খতিয়ান ছটি ম্যাচে ৪৪৪ রান। গড় ৪৪.৪০। এমনকী অস্ট্রেলিয়ার মাটিতেও কথা বলেছে শুভমনের ব্যাট। অজি ভূমে তিনটে টেস্টে শুভমনের রান ২৫৯। গড় ৫১.৮০।
একদিকে গোলাপি টেস্টের জন্য তৈরি হচ্ছে অ্যাডিলেড। ৬ ডিসেম্বর থেকে এই মাঠে শুরু হবে বর্ডার-গাভাসকর ট্রফির দ্বিতীয় টেস্ট। অন্যদিকে, গিলকে দ্রুত সুস্থ করতে তৎপর এখন ভারতীয় শিবির। কারণ, পার্থ কব্জায় হলেও তিন নম্বরে বেশ নড়বড়ে দেখিয়েছে দেবদত্ত পাড্ডিকলকে।