ফারাকটা থেকে গেল সাতাশ বছরের। এক বাঙালি এই লর্ডস থেকে তাঁর টেস্ট কেরিয়ার শুরু করেছিলেন। আর এক বাঙালি তাঁর আন্তর্জাতিক কেরিয়ার শেষ করলেন। সৌরভ গঙ্গোপাধ্য়ায় এবং ঝুলন গোস্বামী। একজন বেহালার বাঁহাতি। অন্যজন নদিয়ার চাকদহ থেকে উঠে আসা মধ্য়বিত্ত বাঙালির ছকভাঙা লড়াইয়ের অনুপ্রেরণা। আরও একটা জায়গায় মিল পাওয়া যায় সৌরভ আর ঝুলনের। একজন নিজের কিট ব্যাগ তুলে রাখার সিদ্ধান্ত জানিয়েছিলেন দুর্গা অষ্টমীর দিনে। আর একজন নিজের কিটব্যাগ তুলে রাখালেন দেবী-পক্ষ শুরু প্রাক মুহূর্তে। সবমিলিয়ে দু দশকের ক্রিকেট কেরিয়ারের শেষ স্টেশনে এসে থামলেন ঝুলন গোস্বামী। ভারতীয় ক্রিকেটে শেষ হল ঝুলন যাত্রা। বিশ্বের মহিলা ক্রিকেটের এক অসামান্য় অ্যাম্বাসডর, অবসর জীবনে অনেক শুভেচ্ছা। তাঁর থেকে প্রায় দশ বছরের ছোট ঝুলনকে এটাই বার্তা ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের প্রেসিডেন্ট সৌরভ গঙ্গোপাধ্য়ায়ের।
তিন বছর আগে এই লর্ডসের মাঠেই অল্পের জন্য বিশ্বকাপ হাতছাড়া হয়েছিল। সেই আক্ষেপ নিয়েই শেষ ম্যাচ খেলতে নেমেছিলেন ঝুলন। কিন্তু দিনের শেষে সেই আক্ষেপ আর নেই। কারণ স্কোরবুকে লেখা থাকবে, ঝুলন গোস্বামী ১০ ওভার তিনটি মেডেন ৩০ রান দুই উইকেট। জীবনের শেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচে এর থেকে ভাল আর কী থাকতে পারে। কারণ, ১০ বছরের মেয়েটার জীবন বদলে দিয়েছিলেন সচিন তেন্ডুলকর। সেই শুরু। তারপর ধাপে ধাপে অনেক কিছু। ২০০২ সালে ১৯ বছর বয়সে ভারতীয় দলে অভিষেক। প্রথম ঝুলন, তারপর ড্রেসিংরুমে তিনি আজ সবার কাছে ঝুলন দিদি।
ফিল্ডিংয়ের সময় শরীর যেন তাঁকে জানান দিচ্ছিল, সব কিছুর একটা শেষ আছে। এবার তাঁরও থামার পালা। তাই আর দেরি করেননি। লর্ডসের থেকে তাঁর সেরা অবসর মঞ্চ আর কী-ই বা হতে পারত। সময়ের সঙ্গে চলেছেন। সময়ের কথা শুনেছেন। শুক্রবার বিশ্বক্রীড়ার এক অবসর দিন হয়ে থেকে গেল। ভারতীয় সময় ভোররাতে ২৪ বছরের টেনিস জীবন শেষ করলেন রজার ফেডেরার। আর ভারতীয় সময় রাতে গত ২০ বছরের অকান্ত পরিশ্রমের পর লর্ডস স্টেশনে থামল চাকদহ-এক্সপ্রেস। ভারতীয় ক্রিকেটে শেষ ঝুলন-যাত্রা।