তখন ওয়ানডে বিশ্বকাপে সদ্য স্বপ্নভঙ্গ হয়েছে ভারতের। আমেদাবাদের নরেন্দ্র মোদী স্টেডিয়ামে সেই ১৯ নভেম্বরের রাত এখনও যন্ত্রণার মতো বিঁধে দেশবাসীর হৃদয়ে। অস্ট্রেলিয়ার মিচেল স্টার্ক ও প্যাট কামিন্সদের সামনে ভেঙে পড়ে ভারতের ব্যাটিং লাইন-আপ। তার ঠিক পরেই ডিসেম্বরে দুবাইয়ে বসেছিল আইপিএলের মিনি নিলাম। নিলামে কলকাতা কাদের কিনবে, তা নিয়েও কম জল্পনা হয়নি। মনে করা হয়েছিল, কোনও ভারতীয় তারকা ক্রিকেটারকে কিনে নেবে কলকাতা। কিন্তু সবাইকে অবাক করে অজি পেসার মিচেল স্টার্ককে প্রায় ২৫ কোটি টাকা দিয়ে কিনে নেয় কেকেআর। যা আইপিএল নিলামে সর্বকালীন রেকর্ড। মঙ্গলবার সেই আমেদাবাদের নরেন্দ্র মোদী স্টেডিয়ামে আইপিএল ফাইনালে জায়গা করে নিল কলকাতা নাইট রাইডার্স। ৪ ওভারে ৩৪ রান দিয়ে ৩ উইকেট তুলে নিলেন। আর তাতেই কেঁপে গেল সানরাইজার্স হায়দরাবাদের ব্যাটিং লাইন আপ। এই মাঠেই যেন এক বৃত্ত সম্পূর্ণ হল।
আইপিএলের নিলামের পর থেকেই সোশ্যাল মিডিয়ায় হাজার হাজার মিম। এত কোটি টাকা খরচ করে কেন তাঁকে কেনা হয়েছে! কলকাতার টিম ম্যানেজমেন্ট কী চাইছে? অনেক প্রশ্নই তুলেছিলেন সমর্থক ও সমালোচকরা। এমন কী বলা হয়, এবার নিলামে প্রত্যেক টিমের জন্য নির্দিষ্ট অঙ্কও নির্ধারিত করা হবে। তবে আসল সমালোচনা শুরু হয়, আইপিএল শুরু হওয়ার পর। ইডেনে তাঁর পারফরম্যান্স নিয়ে প্রশ্ন তোলেন সমর্থকরা। বলা হয়, স্টার্ক ওয়ানডে ক্রিকেটে সেরা হতে পারেন, কিন্তু আইপিএলে নন। ১০ বছর আগে আইপিএলে খেলেছেন। রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু টিমে কয়েকটি ম্যাচ খেলেই ফিরে যেতে হয় তাঁকে। এই ১০ বছরে আইপিএল অনেকটাই বদলেছে। মানাতে অসুবিধা হচ্ছিল। খারাপ পারফরম্যান্সের পর মেনে নিয়েছিলেন স্টার্ক নিজেও। কিন্তু কেকেআর স্টার্ককে নিয়ে প্রত্যয়ী ছিল। গৌতম গম্ভীর সাফ জানিয়ে দেন, স্টার্ক একদিন ফর্মে ফিরবেন। মরশুমে ফর্মে ফিরলেন ঘরের মাঠ ইডেনে মুম্বই ইন্ডিয়ান্স ম্যাচে। ওয়াংখেড়েতে জয়ের পর আরও একবার মুম্বইকে হারানোর চ্যালেঞ্জ ছিল। প্রথমে ব্যাট করে ১৬৯ রান তোলে কলকাতা। ৩.৫ ওভার বল করে ৪ উইকেট তুলে নিলেন মিচেল স্টার্ক। ওই কামব্যাকই বলে দিয়েছিল, এবার তিনি ফিরলেন। আর মঙ্গলে প্লে-অফের মতো বড় ম্যাচে সানরাইজার্স হায়দরাবাদের বিরুদ্ধে পারফরম্যান্স করলেন, আর আপামর সমর্থকদের মন জিতে নিলেন অজি পেসার।
এবার দলের নতুন মেন্টর হিসেবে দায়িত্ব নিয়েই গৌতম গম্ভীর সাফ জানিয়ে দেন, কেকেআর এমন এক ফ্র্যাঞ্চাইজি, যাদের ধারাবাহিকতা দারুণ। মাঠে সেই শরীরী ভাষা ধরে রাখতে হবে। প্রত্যেক ক্রিকেটার এখানে সমান। জাতীয় দল, আন্তর্জাতিক ক্রিকেট, ঘরোয়া ক্রিকেট, হিসেবে এখানে কোনও ভেদাভেদ নেই। ভেদাভেদ নেই সিনিয়র ও জুনিয়রেরও। শুধু লক্ষ্য একটাই। ২৬ মে, চেন্নাইয়ে যাওয়া। গম্ভীরের এই পেপ টকেই বোধ হয় কাজ হয়। মঙ্গলবার শুধু স্টার্ক নন। অধিনায়ক শ্রেয়স আইয়ারের ব্যাটে বিধ্বংসী ব্যাটিং। দুরন্ত খেললেন ভেঙ্কটেশ আইয়ারও। সব মিলিয়ে ২৬ তারিখের মঞ্চ তৈরি কলকাতার। এবার পরবর্তী ধাপের লড়াই শুরু। ফাইনালের মঞ্চে কলকাতাকে নিজের কাঁধে কি টানতে পারবেন স্টার্ক! সেই অপেক্ষায় ক্রিকেটপ্রেমীরা।