টানা সাতটা ম্যাচে হার। তার পরেও সব সামলে ইতিহাস গড়েছে ইস্টবেঙ্গল। নেজমে এসসির বিরুদ্ধে ৩-২ গোলে জিতে এএফসি চ্যালেঞ্জ লিগের কোয়ার্টার ফাইনালে উঠেছে মশাল ব্রিগেড। এবার আন্তর্জাতিক ময়দানে ইস্টবেঙ্গলের লড়াই আরও কঠিন।
নেজমে এসসিকে ইস্টবেঙ্গল হারিয়ে দীর্ঘ ১১ বছর পর এশিয়ান টুর্নামেন্টের নকআউট পর্বে যোগ্যতা অর্জন করেছে। ইন্ডিয়ান সুপার লিগে একেবারেই নজর কাড়তে পারেনি ইস্টবেঙ্গল। কিন্তু ২০২৪-২৫ এএফসি চ্যালেঞ্জ লিগের গ্রুপ পর্যায়ে তারা শীর্ষস্থান দখল করেছে। প্রথম ম্যাচ ড্র করে ইস্টবেঙ্গল। এরপর একে একে বসুন্ধরা কিংস এবং নেজমা এসসি-র বিরুদ্ধে পরপর জয়। কিন্তু ইস্টবেঙ্গলের সামনে লড়াই আরও কঠিন হতে চলেছে।
কাদের বিরুদ্ধে কোয়ার্টার ফাইনাল খেলবে ইস্টবেঙ্গল?
কোয়ার্টার ফাইনালে ইস্টবেঙ্গল এফসি-কে একটি হোম ম্যাচ এবং একটি অ্যাওয়ে ম্যাচ খেলতে হবে। আগামী বছরের ৫ মার্চ হোম ম্যাচটি খেলা হবে সল্টলেকের যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে। আর ঠিক এক সপ্তাহ পর ১২ মার্চে অ্যাওয়ে ম্যাচের আয়োজন করা হবে আর্কাদাগ স্টেডিয়ামে।
ইস্টবেঙ্গল শতাব্দী প্রাচীন ফুটবল ক্লাব। এমনকি বর্তমানে এএফসি চ্যালেঞ্জ লিগে ইস্টবেঙ্গলই অন্যতম প্রাচীন ফুটবল ক্লাব। আর মশালবাহিনীর প্রতিপক্ষ হতে চলেছে তুর্কমেনিস্তানের ফুটবল ক্লাব আর্কাদাগ। ২০২৩ সালের এই ক্লাবের একাধিক সাফল্য রয়েছে। এই ক্লাবে শুধুমাত্র তুর্কমেনিস্তানের ফুটবলাররাই খেলেন। যদিও দলের দু'জন ফুটবলার বিদেশি। তবে তাঁদের দুজনারই দ্বৈত নাগরিকত্ব রয়েছে।
ক্লাব হিসেবে শতবর্ষ পার করেছে ইস্টবেঙ্গল। ক্লাব হিসেবে আন্তর্জাতিক মহলে নিজেদের দাপট দেখিয়েছে ইস্টবেঙ্গল। ২১ বছর আগে তৈরি হয়েছিল এক ইতিহাস। আশিয়ান কাপ জিতেছিল ইস্টবেঙ্গল। বিদেশের মাটিতে ভারতের ক্লাব হিসেবে ইস্টবেঙ্গলের ঐতিহাসিক এই ট্রফি জয় চিরস্মরণীয় মুহূর্ত হয়ে থাকবে।
গত ২০০৩ সালের ২৬ জুলাই জাকার্তার মাটিতে তৈরি হয়েছিল ইতিহাস। তাইল্যান্ডের বেক তেরো সাসানাকে ৩-১ গোলে হারিয়ে আশিয়ান কাপ চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল লাল-হলুদ। যে স্মৃতি এখনও চোখে ভাসছে সমর্থকদের। জাকার্তা থেকে ম্যাচ জিতে দল কলকাতা ফেরার পর লাল-হলুদ পতাকায় মুড়ে গিয়েছিল শহরের অলি গলি। আর টিম ইস্টবেঙ্গলের এই সাফল্যের কারিগর হিসেবে ধরা হয় কোচ সুভাষ ভৌমিক।
বিদেশের মাটিতে এই সাফল্যের স্মৃতি রোমন্থন করতে গিয়ে সেই সময়ের তারকা ফুটবলাররা আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন। তাঁদের কথায়, প্রতিপক্ষের সঙ্গে লড়াইয়ের আগে কিছুটা হলেও চাপে পড়ে গিয়েছিল ইস্টবেঙ্গল। তাঁদের উদ্বুদ্ধ করতে নাকি টানা তিন ঘন্টার বক্তৃতা দিয়েছিলেন কোচ সুভাষ ভৌমিক। আর সেই কারণেই নিজেদের সেরাটা দিতে পেরেছিলেন ফুটবলাররা।
ওই আন্তর্জাতিক ম্যাচে ইস্টবেঙ্গল দলে ছিল, দলের অধিনায়ক সুলে মুসা। এছাড়াও দলে ছিলেন ভাইচুং ভুটিয়া, ডগলাস ডি'সিলভা, মাইক ওকোরো, দেবজিৎ ঘোষ, সন্দীপ নন্দী, মহেশ গাওলি, অ্যালভিটো ডি'কুনহা, দীপক মণ্ডল, ষষ্ঠী দুলে, মুথাইয়া সুরেশ, চন্দন দাস, সুভাষ চক্রবর্তী, মালসোয়ামা টুলুঙ্গা, বিজেন সিং, সুরকুমার সিং, সংগ্রাম মুখোপাধ্যায় এবং কালিয়া কুলথুঙ্গন।
কোচ সুভাষ ভৌমিকের নেতৃত্বে সুলে মুসার অধিনায়কত্বে মাঠে নেমেছিল ইস্টবেঙ্গল। ভাইচুং-ওকোরো-ষষ্ঠী দুলে-আলভিটোদের দাপটে ফাইনালে ওই বছর থাই লিগ চ্যাম্পিয়ন বেকতেরো সাসানাকে হারিয়ে বিদেশের মাঠে ইতিহাস তৈরি করেছিল লাল-হলুদ। এবার ইস্টবেঙ্গলের সামনে ফের আরও এক আন্তর্জাতিক খেতাব জয়ের হাতছানি। সমর্থকদের মতে, এই আন্তর্জাতিক সাফল্যের খতিয়ান সামনে রেখে ফের ISL-এ জ্বলে উঠতে পারে ইস্টবেঙ্গল।