কলকাতা ডার্বি মানেই ইলিশ-চিংড়ির লড়াই। আবেগ ও ঐতিহ্যের ঘটি-বাঙালের লড়াই। সময় এগিয়েছে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বদলছে ডার্বির সেই চেনা মেজাজ। বদলেছে সমর্থকদের ভাবনাও। এবার আইএসএলে মরশুমের প্রথম ডার্বি। আর সেই ডার্বিতে ঘটেছে এক অভূতপূর্ব ঘটনা। যা হয়তো আগে ঘটেনি। ডার্বির দিন ভোরে কলকাতা আসেন ইস্টবেঙ্গলের নয়া কোচ অস্কার ব্রুজোঁ। ডার্বি ম্যাচের দিন সকালে কোনও কোচ দলে যোগ দিয়ে ডাগআউটে থাকবেন, এমন দুঃসাহস দেখাতে পারেননি। আবার সেই ম্যাচে হারের মুখও দেখেছে ইস্টবেঙ্গল। লাল-হলুদ সমর্থকরা হয়তো জানতেন, নতুন কোচের উপস্থিতিতেই দল কালোঘোড়ার মতো ছুটবে, এমন তো হয় না।
আইএসএলের বড় ম্যাচে টানা ব্যর্থতা। তবে ডার্বি দেখে হয়তো অস্কার ব্রুজোঁ বুঝে গিয়েছেন, এই দলকে নিয়ে আইএসএলের মতো টুর্নামেন্টে কোনও পেশাদার দলের বিরুদ্ধে টেক্কা দেওয়া সম্ভব নয়। ডার্বির পরের দিনই ফিটনেস কোচ জেভিয়ার স্যাঞ্চোজকে নিয়ে অনুশীলনে নেমে যান লাল-হলুদ কোচ। অনুশীলনের পর টিম ম্যানেজমেন্টের সঙ্গে বৈঠকও করেন তিনি। বেশ কিছু দেশি ও বিদেশি ফুটবলারকে দলে নিতেও চান তিনি। কিন্তু জানুয়ারির আগে ট্রান্সফার উইন্ডো নেই। তাই নতুন প্লেয়ার নেওয়া সম্ভব নয়। কিন্তু তাতে দমে যাওয়ার পাত্র নন নতুন কোচ অস্কার। ইস্টবেঙ্গলের এই নতুন কোচ এর আগে কোথায় ছিলেন! তাঁর সাফল্যের হার কেমন! ইস্টবেঙ্গল এবারও আইএসএলে টানা ৫টি হেরে মরশুম শুরু করেছে। গত মরশুমেও সাফল্য নেই। প্রাক্তন কোচ কার্লেস কুয়াদ্রাতের উত্তরসূরি হিসেবে তিনি কি লাল-হলুদ সমর্থকদের মন জয় করতে পারবেন অস্কার ব্রুজোঁ!
২০২৪-২৫ মরশুমে নতুন কোচ অস্কার ব্রুজোঁ ইস্টবেঙ্গলের ভাগ্য় কতটা বদলাতে পারবেন! এশিয়ান ফুটবলে অস্কার ব্রুজোঁ অভিজ্ঞ কোচ। কেরিয়ারের অনেকটা সময় বিভিন্ন ক্লাবে কাটিয়েছেন। ১৯৯৮-২০০৩ সাল পর্যন্ত স্পেনে পেশাদার ফুটবল খেলেন। স্পেনে আরিওসা, সেল্টা ভিগোর মতো ক্লাবের যুব দলগুলির সঙ্গেও কাজ করেন। ২০১২ সালে প্রথম ভারতে আসেন অস্কার। স্পোর্টিং ক্লাব দ্য গোয়া ও মুম্বই সিটি এফসির মতো ক্লাবে কাজ করেন। সেবা স্পোর্টিং ক্লাব দ্য গোয়াকে প্রফেশনাল লিগ ট্রফি এনে দেন। ফেডারেশন কাপে রানার্সও হয় দল।
বাংলাদেশ ও মালদ্বীপেও ফুটবল নিয়ে কাজ করেন। ২০২১ সালে বাংলাদেশ জাতীয় দলের অন্তর্বর্তীকালীন কোচ ছিলেন। বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের অন্যতম সফল কোচ অস্কার ব্রুজোঁ। বসুন্ধরা কিংসকে পাঁচবার লিগ জিতিয়েছেন তিনি। তিনবার স্বাধীনতা কাপ ও তিনটি ফেডারেশন কাপেও বসুন্ধরাকে চ্যাম্পিয়ন করান। তাঁর কোচিংয়ে আক্রমণাত্মক খেলা শুরু করে বসুন্ধরা কিংস। মালদ্বীপেও চারটি ট্রফি জিতেছেন অস্কার ব্রুজোঁ। ইস্টবেঙ্গলের মতো ক্লাবে যোগ দিয়ে অস্কার জানিয়েছেন, শুধু আইএসএল নয়, এএফসি চ্যালেঞ্জ লিগেও যাত্রা শুরু করব। সব খেলোয়াড়রা যাতে নিজেদের সর্বোচ্চ পর্যায়ে নিয়ে যেতে পারে, তারই চেষ্টা করবেন বলে জানিয়েছেন অস্কার ব্রুজোঁ।